• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৬ অক্টোবর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

জবান ও লজ্জাস্থান হেফাজত কারীদের জন্য সুসংবাদ

এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ

আল্লাহর অপরিমেয় নিয়ামতের অন্যতম একটি হলো জিহ্বা। জিহ্বার ব্যবহার ছাড়া কোনো মানুষই কথা বলতে পারেন না। আরবিতে জিহ্বাকে লিসান বলে। ফারসিতে জবান। জবান মানুষের মূল স্পিড বা শক্তি। যার মাধ্যমে মানুষ পৌঁছে যায় মুত্তাকির উচ্চ পর্যায়ে। জবানের সঠিক ব্যবহারে মানুষ যেমন পায় আল্লাহর নৈকট্য তেমনি এর অপব্যবহারে মানুষ পৌঁছে যায় নরকের গহিন অন্ধকারে।

হজরত সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে ওয়াদা করবে যে, সে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তু (জবান) ও দুই রানের মধ্যস্থিত বস্তুর (লজ্জাস্থান) নিরাপত্তা করবে, আমি তার জন্য বেহেশতের জামিন হবো। 

কত বড়ো কথা, জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের যে সঠিক ব্যবহারের দায়িত্ব নেবে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার জান্নাতের দায়িত্ব নেবেন। এর কারণ কী ? কারণ হলো জিহ্বা যদিও একটি মাংসপিন্ডের নাম তবুও এটা হৃদয়ের দরজা। এটা হৃদয়ের সংবাদ সরবরাহ করে। এর ক্ষমতা প্রবল। এটা মানুষকে সম্মানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে আবার ধ্বংসের অতলেও ডুবাতে পারে। ভালোর আদেশ, মন্দের নিষেধ, কুরআন হাদিস ফিকাহ অধ্যায়ন, দ্বীনের দাওয়াত এগুলো জিহ্বার ভালো কাজ। ঝগাড়া–বিবাদ, তিরস্কার, নিন্দা, তোষামোদ, মুনাফিকি, পরনিন্দা এসব পাপ জিহ্বার কাজ।

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ৪টি গুণ শুধু মুমিনের মধ্যে পাওয়া যায়। আর তা হলো- চুপ থাকা, বিনয়ী হওয়া, আল্লাহর জিকির করা, অনিষ্ট কাজের স্বল্পতা।’

উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, অন্যায় ও ফাহেশা কথা-বার্তা থেকে নিজের জবানের হেফাজত করতে পারা মহান আল্লাহ তাআলার একান্ত অনুগ্রহ। যারা জবানের/জিহ্বার যথাযথ হেফাজত করতে পারবে প্রথমত তারা মুমিন হিসেবে পরিগণিত হবে। দ্বিতীয়ত দুনিয়ার যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকবে। আর পরকালে থাকবে সীমাহীন সফলতা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয়ের কথা বলেছেন। জানিয়েছেন অধিকাংশ নারী জাহান্নামি। তাই নারীদেরকে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক সুন্দর ও নিরাপদ করার অনেক নসিহত পেশ করেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী হলো (সে-ই, যে) যখন তুমি তার দিকে তাকাও তখন সে তোমাকে আনন্দিত করে। যখন তাকে আদেশ কর তখন সে আনুগত্য করে আর যখন তুমি স্থানান্তরে যাও তখন সে তার ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করে এবং সম্পদ হেফাযত করে।’

হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমজান মাসের রোযা রাখে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং স্বামীর অনুগত থাকে; তাকে বলা হবে- তুমি যে দরজা দিয়ে চাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’

গিবত সম্পর্কে কুরআনে ভয়াবহ সতর্কবাণী এসেছে, হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বাঁচো। নিশ্চয় কতেক ধারণা গোনাহ, এবং কারো গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারো অনুপস্থিতিতে নিন্দা (গিবত) না করে। তোমাদের কেউ তাদের মৃত ভাইয়ের গোশত খওয়া পছন্দ করবে ? নিশ্চয় না, তোমরা ঘৃণা করবে। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী পরম দয়াদু। অর্থাৎ ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি; যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জিহ্বা বা জবান এবং লজ্জাস্থানের যথাযথ হেফাজত করার তাওফিক দান করুন।