• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৬ অক্টোবর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

কুষ্টিয়ায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা

এম.লিটন-উজ-জামান

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মহিষকুন্ডিতে মাদক সেবন করে মাতলামি করা ও আওয়ামীলীগ দল এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে কটুক্তি করায় এক মাদক সেবীকে গনপিটুনি দিয়েছে স্থানীয়রা। এই ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে মাদকসেবী ঐ ব্যক্তির পরিবার মিথ্যা এজাহার দিয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঐ মাদকসেবীর মায়ের দায়ের করা মামলায় এলাকার ৪জনের নামল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে আসামী করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত ১ নং আসামী ঘটনাস্থলে না থাকলেও তাকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। শুধু তাই নয় এজাহারে আহবান আলী ও নবী বিশ্বাস নামে দুইজনকে সাক্ষী করা হলেও তারা এই ঘটনার কিছুই জানেন না বলে এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন। মামলার ১ নং সাক্ষী মহিষকুন্ডি বাজারের মোটর মেকানিক আহবান আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমি এই ঘটনার কিছুই জানি না, আমি ঘটনাস্থলেও ছিলাম না। তারপরও কেন আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে আমি জানি না। এই মারধোরের ঘটনার কিছুই আমি জানি না। মামলায় যাকে ১ নং আসামী করা হয়েছে  সে এই মারধোরের ঘটনার সাথে জড়িত ছিলো কি না তাও আমি জানি না। এজাহারে ২ নং সাক্ষী করা নবী বিশ্বাসও একই দাবি করেছেন। তার দাবি, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, আমি নিজে চোখে দেখিও নাই এই মারধোর কে করেছে। তবে পরে বাদী পক্ষের কাছে থেকে এই মারধোরের ঘটনা তিনি শুনেছেন বলে দাবি করেছেন। 

গত ২৩ তারিখে মহিষকুন্ডি বাজারের পাশে আকালের হোটেলের ভিতর আব্দুল আলীমকে মারধোরের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এই হোটেল মালিক আকাল উদ্দিন জানান, মহিষকুন্ডি হাতিশালা মোড় এলাকার আবুল কালামের ছেলে আব্দুল আলীম ২৩ তারিখ আনুমানিক দুপুর ৩টার দিকে আমার হোটেলে খেতে আসেন। এসময় আব্দুল আলীম নেশাগ্রস্থ ছিলো এবং তার মুখ দিয়ে মদের গন্ধ বের হচ্ছিল। আব্দুল আলীম ঐ সময় আওয়ামলীগ দল ও নেতাদের বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করছিলো বলে দাবি তার। গালি গালাজ করা অবস্থায় কয়েকজন যুবক এসে তাকে গালি গালাজ করতে নিষেধ করলে আব্দুল আলীম তাদেরকেও গালিগালাজ করতে থাকে। এসময় কয়েকজন মিলে তাকে আমার হোটেলের ভিতরে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। একজন পাশে পড়ে থাকা একটি কাঠের টুকরো দিয়ে ঘাড়েও আঘাত করে। এসময় আমি উত্তেজিত হয়ে আব্দুল আলীমসহ সবাইকে আমার হোটেল থেকে বের হতে বলি। পরে স্থানীয় আরো অনেকে চলে আসলে সবাই যে যার মত চলে যায়। তবে হোটেল মালিক দাবি করেন, আমার চোখের সামনে সম্পূর্ন ঘটনা ঘটেছে এবং সেখানে রুবেল হালসানাকে আমি দেখিনি। পরে শুনলাম রুবেল হালসানাকে ১ নং আসামী করে আব্দুল আলীমের মা দৌলতপুর থানায় মামলা করেছে। যা সম্পূর্ন মিথ্যা বলেও দাবি তার। 

মহিষকুন্ডি হাতিশালা মোড় এলাকার কয়েকজন গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল আলীম দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন করে আসছে। মাদক সেবনের কারনে জেলেও গেছে কয়েকবার। মাদক সেবন করে দিনে দুপুরে অশ্লীল গালিগালাজ করে বেড়ায় রাস্তায় রাস্তায়। যে কারনে স্থানীয়দের মাঝে চাপাক্ষোভও বিরাজ করে আসছে। যার বহিঃপ্রকাশ ২৩ তারিখের ঐ ঘটনা। 

তবে আব্দুল আলীমের মা সুরাইয়া খাতুনের দৌলতপুর থানায় দায়ের করা মামলার ১ নং আসামী রুবেল হালসানা মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, ২৩ তারিখ দুপুরে যখন আব্দুল আলীমকে মহিষকুন্ডি বাজারের উপর মারধোর করা হয়েছে সেই সময় তিনি বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। তার বাড়ি মহিষকুন্ডি বাজার থেকে আনুমানিক ১ কিলোমিটার দূরে। আব্দুল আলীমকে মারধোরের ঘটনা তিনি লোকমুখে শুনেছেন বলে দাবি করেন। তবে রুবেল হালসানার দাবি, এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে আব্দুল আলীমসহ চাচাতো ভাই সেলিম বিশ্বাস আমাকে হয়রানী করতে এজাহারভুক্ত আসামী করেছে। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বললে তার সত্যতা মিলবে। রুবেল হালসানা আরো জানান, আব্দুল আলীম ও তার চাচাতো ভাই সেলিম বিশ্বাসের সাথে কয়েকদিন আগে একটা শালিস বৈঠক নিয়ে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এই ঘটনার পর সেলিম বিশ্বাস ও তার চাচাতো ভাই আব্দুল আলীম আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকী দিয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত মিথ্যা মামলা করে সেই প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। লোকমুখে শুনেছি মদ খেয়ে বাজারে মাতলামি করার সময় কে বা কাহারা তাকে মারপিট করেছে এর বেশি আমি এই ঘটনার কিছুই জানি না। 

মারধোরের পর আব্দুল আলীম দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের নথি ঘেটে দেখা গেছে রোগীর বর্ননামতে তাকে মারধোর করা হয়েছে এবং তার শরীরে ব্যাথা আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক এক্সেরের পরামর্শ দিয়েছেন এবং তার ডানকাঁধে ফ্যাকচার আছে বলে উল্লেখ করেছেন। তার শরীরের কোন হাড় ভেঙ্গেছে বা চিকিৎসা নিয়েছেন এমন কোন তথ্য হাসপাতালের নথিতে নেই। জরুরী বিভাগের ডাক্তার তাকে ১দিন হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে সম্পূর্ন সুস্থ্য হয়ে যাবেন বলে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আব্দুল আলীম ১দিন হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। তাকে সেবা দেওয়া এক নার্স এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আব্দুল আলীমের শরীরের কোন অঙ্গ ভাঙ্গেনি। তবে তার ডানে কাঁধে একটা ফ্যাকচার ছিলো ১দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর তিনি রিলিজ নিয়ে চলে গেছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়নি বলেও হাসপাতাল কতৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। 

হাসপাতাল থেকে স্বেচ্ছায় রিলিজ নিয়ে আব্দুল আলীম কোথায় গেছেন তা জানাতে পারেননি তার পরিবার। প্যারালাইজ হয়ে বাড়িতে বিছানাগত তার বাবা আবুল কালাম এই প্রতিবেদকের কাছে জানিয়েছেন, আলীম কোথায় আছেন তিনি জানেন না। তবে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছেন মদ খেয়ে মাতলামি করছিলেন এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে সে আত্মগোপন করেছে। কেউ কেউ বলছেন রাজশাহী মেডিকেলে গেছেন মারধোরের ঘটনায় বড় ডাক্তারের প্রত্যয়ন সংগ্রহ করতে। 

তবে আব্দুল আলীমকে মারধোরের ঘটনায় যে মামলা হয়েছে সেই এজাহারের কপিতে তার চাচাতো ভাই সেলিম বিশ্বাসের মোবাইল নাম্বার দেওয়া আছে। এই সেলিম বিশ্বাসের সাথে মামলার ১ নং আসামী রুবেল হালসানার কয়েকদিন আগে একটি শালিস নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় এবং ঐসময় রুবেল হালসানাকে দেখে নেওয়ার হুমকী দেওয়া হয়। 

মামলার বিষয়ে কথা হয় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলামের সাথে তিনি জানান, আব্দুল আলীম নামে ঐ ব্যক্তিকে মারধোরের ঘটনায় ৪ জনকে আসামী করে মামলা করেছে তার মা সুরাইয়া। একজন আসামী গ্রেফতার আছে এবং তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা সকল বিষয় আমলে নিয়ে মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেছি এবং যথাসময়ে প্রকৃত ঘটনা কি সেই বিষয়গুলো চার্জশীটে উল্লেখ করে বিজ্ঞ আদালতে জমা দিবো। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের একজন দায়িত্বশীল নেতার কুট চালে মহিষকুন্ডিসহ আশেপাশের এলাকার মানুষ অতিষ্ট। সাধারণ মানুষকে মামলা জটে ফেলে ফায়দা লুটতে ঐ নেতা এলাকার শান্তি শৃংঙ্খলার পরিবেশ নষ্ট করছে। মামলার বাদীপক্ষের কাছে থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রামবাসীর মধ্যে গন্ডগোল বাঁধানোর চেষ্টা করছেন। প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।