• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৬ নভেম্বর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

ইতিহাস গড়লেন বাইডেন

এনবিসি, এবিসি, নিউজউইক, ফক্স নিউজ, বিবিসি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইতিহাসের সর্বাধিক ভোট পেয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন। তার গাধা প্রতীকে ইতোমধ্যে ৭ কোটির বেশি ভোট পড়েছে। এখনো যেসব রাজ্যের ভোট গণনা সম্পন্ন হয়নি সেগুলোর ভোট যোগ হলে এ সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভোর (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যার পর) থেকে ফের ভোট গণনা শুরু হলেও মূলতঃ পোস্টাল ব্যালটের কারণে গণনায় ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়। ওদিকে প্রতিটি ভোট গণনার দাবিতে জো বাইডেনের পক্ষে এবং অনেক স্থানে ভোট গণনা বন্ধ রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ট্রাম্প সমর্থকরা। অনেক স্থানে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে সেখান থেকে অন্তত ৬১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৬৪টি ইলেক্টরাল ভোট (ইভি) পেয়ে অনেকটাই নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন জো বাইডেন। তার হোয়াইট হাউসে পা রাখতে যে ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোটের প্রয়োজন তার থেকে ৬টি দূরে রয়েছেন জো বাইডেন এবং ঠিক একই সংখ্যক ইলেক্টরাল ভোট রয়েছে নেভাদা অঙ্গরাজ্যে যার ভোট গণনা শুরু হওয়ার কথা স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায়। এ ৬টি ছাড়া বাকি সবগুলো ইলেক্টরাল ভোট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে গেলেও তার আর পুনঃনির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১৪টি ইলেক্টরাল ভোট পাবার পাশাপাশি পেনসিলভেনিয়া (ইভি ২০), জর্জিয়া (ইভি ১৬) এবং নর্থ ক্যারোলিনায় (ইভি ১৫) ভোট গণনায় এগিয়ে রয়েছেন। তবে সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না যে, এর সবগুলোই ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতি মার্কার পক্ষেই যাবে কি না। কারণ, পোস্টাল ভোটের অধিকাংশই বাইডেনের পক্ষে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই কারচুপির অভিযোগসহ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এসব ভোট গণনা থেকে বাদ দেয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ঠিক এমনটাই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন। তাদের বিশ্লেষণ ছিল, আদালতের দুয়ারে দাঁড়াতে হতে পারে বলেই আগেভাগে আদালতকে সাজিয়েছেন নিজেদের লোক নিয়োগ দিয়ে। তবে পপুলার ভোট প্রাপ্তির দিক থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার রেকর্ডের খুব কাছাকাছি আছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জো বাইডেনের ভোট যেখানে ৭ কোটি ২৩ লাখ ৮১৫ (৫০.৪%), সেখানে ট্রাম্পের ভোট ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৫৪ (৪৮%)।

সংবাদসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, এর আগে সর্বাধিক ভোট পাওয়ার নজির ছিল বারাক ওবামার। তিনি ২০০৮ সালে পেয়েছিলেন ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫১৬ ভোট। বুধবারই এই সংখ্যা পেরিয়ে গিয়েছেন ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। ২০২০ সালে ভোটারদের ভোটদানের হার শতাব্দীরও বেশি সময়ের নিরিখে ছিল সর্বাধিক।

৪ রাজ্যে আইনি চ্যালেঞ্জ ট্রাম্পের
সর্বশেষ ভাগ্য নির্ধারণকারী চারটি রাজ্যের ভোট বন্ধের জন্য আইনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ট্রাম্প টিম। এগুলো হলো জর্জিয়া, মিশিগান, পেনসিলভ্যানিয়া ও উইসকনসিন। এসব রাজ্যে ভোট গণনা বন্ধ করার জন্য মামলা করেছেন ট্রাম্প। তবে ততক্ষণে মিশিগান ও উইসকনসিন রাজ্যে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে জো বাইডেনকে। ফলে এ দুটি রাজ্যের ১০+১৬=২৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট চলে গেছে বাইডেনের ঘরে। অন্যদিকে জর্জিয়াতে মুখোমুখি টক্কর দিচ্ছেন দুই প্রার্থী। এখানে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে বাইডেনের পক্ষে ভোট পড়েছে শতকরা ৪৯ ভাগ। ট্রাম্পের পক্ষে ৪৯.৮ ভাগ। এখনও সেখানে ভোট গণনা চলছে। যদি এতে জয় পান বাইডেন তাহলেই কেল্লাফতে। কারণ, এই রাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে ১৬টি। জয়ের জন্য বাইডেনের প্রয়োজন আর মাত্র ৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। এ অবস্থায় তিনি জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন দাবি করেছেন।

তবে তাকে ছেড়ে দেয়ার পাত্র নন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। জর্জিয়াসহ উল্লেখিত চারটি রাজ্যের ভোট গণনা বন্ধ করার জন্য আইনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি এ বিষয়ে মামলা করেছেন জর্জিয়ায় ভোট গণনা বন্ধের আহŸান জানিয়ে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, একজন রিপাবলিকান পর্যবেক্ষক দেখতে পেয়েছেন যে, ব্যালটের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে বিলম্বে পাওয়া ৫৩টি পোস্টাল ভোট। তবে এসব ভোট চ্যাথাম কাউন্টিতে যথাসময়ে পৌঁছেছে। জর্জিয়াতে নির্বাচনের রাত ৭টার মধ্যে ব্যালট পৌঁছানোর কথা। কিন্তু মামলায় বলা হয়েছে ওই সময়ের পরে এসব ব্যালট যোগ করা হয়েছে। এর ফলে ভোট গণনায় জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছে ট্রাম্প শিবির। তবে এর স্বপক্ষে শক্ত কোনই প্রমাণ দিতে পারেন নি ট্রাম্প। মিশিগানেও ভোট বন্ধের দাবিতে মামলা করেছেন ট্রাম্প। সেখানে ভাল ব্যবধানে বাইডেন যখন জয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন এই ভোট গণনা বন্ধের আহŸান জানিয়ে তিনি মামলা করেন।

ওদিকে পেনসিলভ্যানিয়াতে নির্বাচনের তিন দিন পর পর্যন্ত ভোট গণনার অনুমতি আগে থেকেই দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। সে অনুযায়ী ওই রাজ্য ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত পাওয়া ভোট তিনদিন পর্যন্ত গণনা করা যাবে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ট্রাম্প। এখনও এ রাজ্যে হাজার হাজার ভোট গণনার বাকি। উইসকনসিনে ‘অস্বাভাবিকতা’ দেখার পর ভোট আবার গণনার দাবি জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টিম। কিন্তু মিশিগান ও উইসকনসিনে জয় ঘোষণা করা হয়েছে বাইডেনের।

ট্রাম্পের অভিযোগ ভিত্তিহীন : ওএসসিই
অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কোÐঅপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক টিম বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। উল্লেখ্য, ওএসসিই-এর একটি সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রও। তারা এ নির্বাচনকে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ এবং আইনি অনিশ্চয়তা, চ্যালেঞ্জ সত্তে¡ও সুন্দর ব্যবস্থায় সম্পন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। গ্রæপটি বৃহস্পতিবার তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তবে শেষের দিকে আইনি চ্যালেঞ্জ এবং প্রমাণ ছাড়া নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ দ্বিধাদ্ব›দ্ব ও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এতে ট্রাম্পের অনিয়মের অভিযোগের সমালোচনা করা হয়েছে।

নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতা
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন পরবর্তী বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে উঠেছে। কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। শুধুমাত্র নিউইয়র্ক থেকে ৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিউ ইয়র্কে ‘প্রতিটি ভোট গুণতে হবে’ দাবি নিয়ে একটি নির্বাচনি শোভাযাত্রা থেকে সহিংসতা শুরু হয়। পোর্টল্যান্ড, ওরেগনে প্রতিটি ভোট গণনার দাবিতে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠলে ন্যাশনাল গার্ড সক্রিয় হয়। পোর্টল্যান্ড থেকে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শহরটি থেকে আতশবাজি, হাতুড়ি এবং রাইফেল জব্দ করেছে পুলিশ।

এদিকে অ্যারিজোনায় গণনা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। রাজ্যটির সবচেয়ে বড় কাউন্টি মেরিকোপায় ট্রাম্প সমর্থকরা বিক্ষোভ করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্পের ব্যালট পুড়িয়ে দেয়ার সংবাদে তারা সেখানে জড়ো হয়। সেখানে ৩ শতাধিক ট্রাম্প সমর্থক রয়েছেন। তারা সাংবাদিক ও নির্বাচন পরিচালনা কর্মীদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছেন।