• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

রিজভীহীন নেতাকর্মীশূন্য নয়াপল্টন

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

গত ১৩ অক্টোবর দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের এক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে তাৎক্ষণিক তাকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। বুকে ব্যথা অনুভব হলে পরক্ষণেই নিকটস্থ কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে তার এনজিওগ্রাম করা হলে হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে যান রিজভী।

গত ১১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে তার হার্টের এমপিআই (Myocardial Perfusion Imaging-MPI) টেস্ট করা হয়। এমপিআই পরীক্ষায় কিছু সমস্যা ধরা পরে। তাই গত শনিবার আবারও তার এনজিওগ্রাম করে হার্টে সমস্যা ধরা পড়ায় তার হার্টে রিং পরানো হয়।

অসুস্থ রিজভীর অনুপস্থিতিতে এরইমধ্যে বিএনপির দফতরের চলতি দায়িত্ব দেয়া হয় দলটির ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সকে। তবে রিজভীর অনুপস্থিতি গেল কিছুদিন ধরে নয়াপল্টনে এক ধরনের শূন্যতা নিয়ে এসেছে। নেতাকর্মীরাও দলীয় কার্যালয়ে এসে দলের এই অকুতোভয় মুখপাত্রের অভাব অনুভব করছেন।

‘নেতাকর্মী শূন্য নয়াপল্টন’

রিজভী সুস্থ থাকাকালীন দেশের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে প্রায় প্রতিদিন গণমাধ্যমের সামনে সংবাদ সম্মেলন করতেন। তার সেই সংবাদ সম্মলনে দলের অনেক ভাইস-চেয়ারম্যান, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম-মহাসচিব এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি দেখা যেতো।

কিন্তু সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সকে দায়িত্ব দেয়ার পর থেকেই প্রায় এক প্রকার নেতাকর্মীশূন্য হয়ে পড়েছে সর্বদা সরগরম থাকা নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আগের মত নেতাকর্মীদের পদচারণা নেই সেখানে।

দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ৪ থেকে ৫টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রিন্স। তার সংবাদ সম্মেলনে হাতে গোনা দু-একজন সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদকের বাইরে কাউকে দেখা যায়নি। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল তথৈবচ!

এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে চলছে নানা কানাঘুষা। বলা হচ্ছে এর আগে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, বরকতউল্লাহ বুলু, সালাউদ্দিন আহমেদকে সাময়িকভাবে দফতরের দায়িত্ব পালন করতে বলা হলেও তখন তাদের সেই দায়িত্ব লিখিতভাবে দেয়া হয়নি, দেয়া হয়েছিল মৌখিকভাবে। কিন্তু প্রিন্সের ক্ষেত্রে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত হয়েছে।

‘কে এই এমরান সালেহ প্রিন্স’

রিজভীর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে চিঠি ইস্যু করে যাকে দলটির দফতরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনি অর্থাৎ সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আগেও বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। সেনাসমর্থিত সরকারের সময়ে রিজভী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি অনুগত থাকলেও প্রিন্স খালেদা জিয়াকে বিবৃতি দেয়ার জন্য দলীয় প্যাড দেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘রিজভী দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। দলীয় নেতাকর্মী ও হাইকমান্ড তার সঠিক মূল্যায়ন করবেন- এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

অন্যদিকে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ছিলেন সংস্কারপন্থি। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি ছিলেন সহ-দফতর সম্পাদক। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মুক্তির বিবৃতি দেবেন বলে আমরা তার কাছে গিয়েছিলাম দলীয় প্যাডের জন্য। তিনি প্যাড দেননি। তাদের মতো নেতাদের এখন দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে ত্যাগী নেতাদের মনোবল ভাঙছে।’

এমরান সালেহ প্রিন্সকে দফতরের চলতি দায়িত্ব দেয়ায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের এক কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিএনপির মত এত বড় একটি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের ভূমিকায় যদি একজন সংস্কারপন্থি নেতাকে দেখা যায় তখন আমাদের মন ভেঙে যায়, রাজনীতি ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে।

রিজভী ভাই যেহেতু অসুস্থ হয়েছে এক্ষেত্রে দলের কার্যক্রম তো চালাতে হবে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে যখন সরকারের হামলা মামলায় রিজভী ভাই গ্রেফতার হয়েছে তখনও তো দায়িত্ব পালন করেছেন আমাদের বিভিন্ন সিনিয়র নেতারা। তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে দায়িত্ব দেয়া যেত।

শামসুজ্জামান দুদু ভাই, ড.আসাদুজ্জামান রিপন ভাই অথবা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ভাই তাদের কাউকে হয়তো দফতরের চলতি দায়িত্ব দেয়া যেতো। কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে এখন যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনি কীভাবে এত বড় দায়িত্ব পালন করবেন সেটা আমার বোধগম্য নয়।’

‘করোনাকালীন রিজভীর সাহসী ভূমিকা’

এইতো মাত্র কয়েক মাস আগেই, করোনা ভাইরাস মহামারির ভয়াবহ দিনগুলোতেও দলের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়মিত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন রুহুল কবির রিজভী। করোনার শুরুতেই তিনি রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিএনপির পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেছেন এবং দেশের সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

এই পরিপ্রেক্ষিত ও পরিস্থিতি বিবেচনায় রিজভীর মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ ও পরীক্ষিত নেতাকে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পুনর্বহাল করা বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতির জন্য বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীসহ শুভাকাঙ্ক্ষী মহল।