• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাত পুলিশ সুপার কার্যালয়ের!

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

চেক জালিয়াতির মাধ্যমে মাগুরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের অন্তত ২ কোটি ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৩ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের জুলাই মাস থেকে চলতি মাস একটি চক্র এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে প্রক্রিয়াটির শুরু ৩ বছর আগে হওয়ায় সরকারি অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ আরও কয়েকগুণ হতে পারে বলে ধারণা করছেন জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের কর্মকর্তারা।

মাগুরা জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কনস্টেবল মশিউর রহমান ২০১৬ সন থেকে ক্যাশ সরকার হিসেবে নিযুক্ত আছেন। এই দায়িত্ব থেকে তিনি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরতদের বেতন, ভ্রমণ ভাতা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ সব প্রকার বিল ভাউচার হিসাব রক্ষণ অফিসে জমা, চেক গ্রহণ এবং সোনালী ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করতেন।

এই কাজের সূত্র ধরেই জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে তার অবাধ যাতায়াতের সুযোগ। সেই সুযোগে ৩০ নভেম্বর মশিউর রহমান হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর জাহাঙ্গীর হোসেন শিকদারের ড্রয়ারে থাকা চেকের বান্ডিল থেকে দুটি ব্ল্যাঙ্ক চেক চুরি করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে মশিউরের কাছ থেকে চেক দুটি উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ওই চেকে ইচ্ছামাফিক নাম এবং অর্থের পরিমাণ বসানো হয়েছিল। পরে চেকদুটির অনুকূলে ব্যবহৃত টোকেন নম্বর, অর্থের পরিমাণ এবং এডভাইস পেপার যাচাইকালে বড় মাপের জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।

সূত্রটি জানায়, ওই ঘটনার পর বিগত সময়ে পুলিশ অফিসের নির্ধারিত কোডে পরিশোধিত বিভিন্ন চেক যাচাই বাছাই করতে গিয়ে মাগুরা জেলা হিসাব রক্ষণ অফিস নড়াইল জেলায় বাড়ি কনস্টেবল মশিউর রহমানের চেক জালিয়াতির আরও অনেক তথ্যপ্রমাণ পান। সেখানে দেখা যায় কনস্টেবল মশিউর মাগুরা পুলিশ অফিসের কোডের অনুকূলে পরিশোধিত ১ কোটি ৭৬ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮৩ টাকা আজমল মুন্সি নামে এক ব্যক্তির একাউন্টে জমা করেছেন। পেশায় পশুরোগ চিকিৎসক এই আজমল মুন্সির বাড়ি কনস্টেবল মশিউরের বাড়ির এলাকায় নড়াইলের মহাজন পাড়ায়।

এছাড়া ফিরোজ হোসেন নামে অপর এক কনস্টেবলের একাউন্টে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ২০০ টাকা এবং জনৈক রুকাইয়া ইয়াসমিন বিচিত্রা নামে অপর একজনের একাউন্টে ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪০০ টাকা জমা করা হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রটি জানায়, ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে পশুরোগ চিকিৎসক আজমল মুন্সীর নামে মাগুরা সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। যে অ্যাকাউন্টের অথোরাইজেশনে পুলিশ সুপার অঙ্কিত একটি সিল এবং স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। সে সময় মাগুরায় পুলিশ সুপার হিসেবে ছিলেন মনিবুর রহমান। তবে এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে এই আজমল মুন্সি পুলিশ অফিসের কর্মচারী না হওয়া সত্ত্বেও তার নামে পুলিশ সুপারের অথোরাইজেশনে হিসাব নম্বরটি খুলতে মাগুরা সোনালী ব্যাংকের দায়িত্বরত তৎকালীন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আবদুর রশিদ রহস্যজনক কারণে যাচাই বাছাই করেননি।

অন্যদিকে এই জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত চেকসমূহ কার্যকর করে তুলতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ক্যাশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কনস্টেবল মশিউর রহমান জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষর ব্যবহার করে অনলাইন এডভাইস পেপার তৈরি করেছেন। পাশাপাশি হিসাবরক্ষণ অফিসের সার্ভার এবং মেইল একাউন্ট ব্যবহার করে সোনালী ব্যাংকের অনুকূলে তা প্রেরণ করেছেন বলে জানা গেছে। অথচ এসব কাজের সঙ্গে তারা কেউ জড়িত নন বলে দাবি করেছেন হিসাব রক্ষণ অফিসের কর্মকর্তা-অডিটররা।

মাগুরা জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সরকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ অফিসের কোডের অনুকূলে উত্তোলিত এবং আত্মসাৎকৃত অর্থ সেখানকার কর্মরতদের সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং ঠিকাদারদের জামানতের অর্থ। কিন্তু কনস্টেবল মশিউর আমার স্বাক্ষর জাল করে এসব অর্থ উত্তোলন করেছেন। কিন্তু পেমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে অ্যাডভাইস পেপারে গড়মিল পাওয়ার পরও ব্যাংক কেন চেকগুলো ডিজঅনার করেনি জানি না। তবে এই চক্রটির জালিয়াতি শুরু ২০১৭ সন থেকে। বিগত সময়ের চেক তল্লাশি করলে আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলেও তিনি জানান।

এদিকে মাগুরা সোনালী ব্যাংকের এজিএম রশিদুল ইসলাম বলেন, হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে যেসব চেক পাওয়া গেছে সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখা গেছে সেখানে আমাদের কোনো ত্রুটি নেই। প্রত্যেকের স্বাক্ষর এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই পেমেন্ট দেয়া হয়েছে। জালিয়াতির কোনো ঘটনা থাকলে তার সঙ্গে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী জড়িত নেই।

এ বিষয়ে মাগুরা পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, চেক জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পেরে ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও কনস্টেবল মশিউর, কনস্টেবল ফিরোজ হোসেনসহ ৪ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে।