• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

মামলা করে বিপাকে তানিয়া

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

নেত্রকোণার মদনে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন বাদী তানিয়া আক্তার শিপা। আসামিরা ও তাদের প্রভাবশালী আত্মীয়-স্বজনদের হুমকিতে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় শিশু সন্তান নিয়ে জীবনযাপন করছেন তিনি। তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের অবৈধপ্রভাবে দায়েরকৃত মামলার মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদনের দেয়ায় ন্যায়বিচার পাবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। গত মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নেত্রকোণার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের আশায় নারাজী দিয়েছেন বাদী।    

নেত্রকোনার মদন উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের শহীদ মিয়ার মেয়ে মোছা. তানিয়া আক্তার শিপা। মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের মৃত নূর উদ্দিন ভূইয়ার ছেলে মো. কামরুল ভূইয়ার সাথে ২০১৮ সালের ২১ জুলাই মাসে মুসলিম শরীয়তের বিধানমতে বিয়ে হয় তার। এক বছর বয়সী অহি ভূইয়া নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে তাদের। স্বামী কামরুল ভূইয়া ফলের ব্যবসা করার জন্য স্ত্রী শিপার বাবার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ধার নেন। স্বামী কামরুল ও তার পরিবারের লোকজন পুনরায় ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে কয়েক দফা মারপিট করে করে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর হত্যারচেষ্টা করলে ১০ ডিসেম্বর মদন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন শিপা। বিচার চেয়ে স্বামী কামরুল ভূইয়াসহ তার পরিবারের চারজনকে আসামি গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর নেত্রকোণার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি (নারী শিশু মামলা নং-৭৩২/২০২০) মামলা দায়ের করেন। তানিয়ার শাশুড়ি রহিছা আক্তার মারপিট ও ১ লাখ টাকা চুরির অভিযোগ এনে তানিয়াকে আসামি করে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আমলী আদালত, মদন-নেত্রকোনায় একটি মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত তানিয়ার দায়েরকৃত মামলাটির অনুসন্ধান প্রতিবেদনের জন্য ওসি মদন থানাকে আদেশ দেন। অনুসন্ধান তদন্ত প্রতিবেদনকারী কর্মকর্তা এসআই মোশারফ হোসেন মামলা তদন্তের কথা বলে বাদী তানিয়ার কাছ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা খরচ নেন। পরে আসামিদের অবৈধপ্রভাবে দায়েরকৃত মামলার মিথ্যা, বানোয়াট অনুসন্ধান তদন্ত প্রতিবেদন ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি আদালতে দাখিল করে। ন্যায়বিচারের আশায় নেত্রকোণার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দিয়েছেন বাদী তানিয়া আক্তার।     

আজ শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাদী মোছা. তানিয়া আক্তার শিপা বলেন, স্বামী কামরুল ভূইয়া ও তার পরিবারের লোকজন আমাকে দফায় দফায় অত্যাচার মারপিট করতেন যৌতুকের টাকার জন্য। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর তারা আমাকে মারপিট করলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আমার বাবাকে ডেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কোথায় কোনো বিচার না পেয়ে আমি আদালতে মামলা দায়ের করি। এর পর আমার শাশুড়ি আমার নামে একটি মারপিট ও চুরির মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে আদালতে গেলে খুন করবে বলেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন আসামিগণ ও তার প্রভাবশালী আত্মীয়-স্বজনরা। 

তিনি আরো বলেন, মদন থানার এসআই মোশারফ হোসেন দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত করার জন্য আমার নিকট হতে ৫ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন। ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর তারিখ দেখিয়ে বানোয়াট প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন। ঘটনা ঘটার ৪ দিন আগের তারিখ দিয়ে কীভাবে তিনি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তা বুঝে উঠতে পারছি না। আমি প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দেয়ায় আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। আমাকে তালাক না দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ তাসলিমা নামের আরেক মেয়েকে বিয়ে করেন কামরুল। বর্তমানে আমি আমার সন্তান ও পরিবার নিয়ে তাদের হুমকিতে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। 

তানিয়া আক্তার শিপার স্বামী আসামি কামরুল ভূইয়া মোবাইল ফোনে জানান, আমি কোর্টের মাধ্যেমে তাকে তালাক দিয়ে নতুন বিয়ে করেছি। তাকে ও তার পরিবারকে কোনরকম হুমকি দেইনি। 
 
তদন্তকারী কর্মকর্তা মদন থানার এসআই মোশারফ হোসেন বলেন, তানিয়া আক্তার শিপার দায়েরকৃত মামলার অনুসন্ধান প্রতিবেদন সাক্ষীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে তার স্বাক্ষরিত তারিখ ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর। ঘটনার ৪ দিন আগে কিভাবে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ভুল হয়ে গেছে। তার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নেবো। টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তানিয়া আমাকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি তা নেইনি।

মদন থানার ওসি মাসুদুজ্জামান জানান, তানিয়া আক্তার শিপার দায়েরকৃত মামলার অনুসন্ধান তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। যাকে দায়িত্ব দিয়েছি তিনি প্রতিবেদন দিয়েছেন। এতে আমার কিছু করার নেই।