• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২০ মার্চ, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

চুল-ভ্রু কেটে গ্রাম্য সালিশে নারী-পুরুষকে গ্রামছাড়া

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে এক নারী ও পুরুষকে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে স্বামীকে দিয়ে স্ত্রীর মাথার চুল, ভ্রু কাটিয়ে ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে রাঁতের আধারে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপার আবাইপুর গ্রামে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা গেছে, ঘটনাটি ওই রাতে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে জানালে পুলিশ তাদের ক্যাম্পে সোপর্দ করতে বললেও সমাজপতিরা অভিভাবকের কাছে দেওয়ার কথা বলে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয় তাদের। তবে সমাজপতিদের একজন জানান, অভিভাবক না আসায় তারা নিজের ইচ্ছায় গ্রাম ত্যাগ করেছেন।
 
আবাইপুর গ্রামের আজম খাঁ জানান, দীর্ঘদিন ডিঙ্গি নৌকায় কুমার নদে মাছ শিকার করতে করতে বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের মজিদ মোল্লার ছেলে সাগরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আবাইপুর গ্রামের আটুল শেখের ছেলে নাসিম শেখের। সেই সুবাদে সাগর নাসিমের বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, নাসিমের স্ত্রীর সঙ্গে সাগরের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবে সাগর ও নাসিমের স্ত্রী দুইবার বাড়ি ছাড়ে। তারপরও ফিরে আসলে স্ত্রীকে মেনে নেন নাসিম। 

প্রতিবেশী বিশারত বিশ্বাসের স্ত্রী কোহিনুর বেগম জানান, সাগর প্রায়ই নদী পার হয়ে নাসিমের বাড়িতে অবস্থান করে। গত বুধবার রাতেও এক ঘটনা ঘটলে রাত ১০টার দিকে তিনি সাগর ও নাসিমের স্ত্রীকে ঘরে আটকে গ্রামের সবাইকে খবর দেন। পরে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিশারত বিশ্বাসের বাড়িতে সালিশে বসেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় সাগর ও নাসিমের স্ত্রীর অনৈতিক কাজের জন্য তাদের মাথার চুল ও ভ্রু কাটবেন নাসিম নিজেই। যদি না কাটেন তাহলে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত নাসিমকে জানানো হলে পরে তিনি এসে স্ত্রী ও সাগরের মাথার চুল এবং ভ্রু কেটে দেন। এরপর তাদের গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ তাদের সোপর্দ করতে বললে পরে সিদ্ধান্ত হয় পুলিশে না দিয়ে তাদের অভিভাবকদের কাছে দেওয়া হবে। কিন্ত রাত ২টা পর্যন্ত কোন অভিভাবক না আসলে পরে দু'জনে রাতেই এলাকা ত্যাগ করেন। 
 
তবে তারা এখন কোথায় আছে কোন পরিবারই তা জানে না। শুক্রবার সকালে আবাইপুর ওয়াবদার পাশে বাড়িতে গিয়ে নাসিমকে না পাওয়া গেলেও তার মা সালেহা খাতুন জানান, গ্রাম্য সালিশে সিদ্ধান্ত হয় নাসিম স্ত্রীর মাথার চুল কেটে তাড়িয়ে না দিলে তার বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এ ভয়ে তার ছেলে তার স্ত্রীকে মাথার চুল, ভ্রু কেটে ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এখন সে কোথায় আছে তা তারা জানেন না। তার ঘরে ছোট একটি মেয়ে রয়েছে।

বগুড়া গ্রামে অভিযুক্ত সাগরের বাড়িতে গেলে তাকে না পাওয়া গেলেও তার ভাতিজা আপন জানান, তার চাচা বাড়িতে নেই। তিনি একটি ঘটনায় আত্মগোপনে আছেন।

আবাইপুর গ্রামের মাতব্বর রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতিবেশী কোহিনুর বেগম আপত্তিকর অবস্থায় বগুড়া গ্রামের চা দোকানদার সাগর ও নাসিমের স্ত্রীকে একই ঘরে আটকে রাখেন। পরে তাদের খবর দিলে সালিশে সিদ্ধান্ত হয় অনৈতিক কাজের অপরাধে নিজের স্ত্রীর চুল ও ভ্রু নাসিমকে কাটতে হবে এবং দু'জনকে গলায় জুতার মালা দিয়ে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। পরে ওই রাতেই তারা গ্রাম ছাড়েন।

হাটফাজিলপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই ফারুক হোসেন জানান, বুধবার রাতে আবাইপুর গ্রাম থেকে তাকে জানানো হয়েছিল অনৈতিক কাজের অভিযোগে দুইজনকে একই ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি তাদের ক্যাম্পে সোপর্দ করতে বললে গ্রামবাসী জানান উভয়কে অভিভাবকদের কাছে দেওয়া হবে। পরে বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তারা দেখেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ তাদের কাছে আসেনি। আসলে ব্যবস্থা নেবেন।