• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৭ এপ্রিল, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

ডায়রিয়াও করোনার উপসর্গ, জানুন সতর্ক থাকার পরামর্শ!

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

 বর্ষাকালের তো ঢের দেরি। এদিকে এই গরমের মধ্যে, দামি রেস্তোরাঁ থেকে রাস্তার পাশের দোকান তো দূরের কথা, বাড়িতেও তৈলাক্ত, মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলছেন অনেকে। তবুও হঠাৎ পেটের সমস্যা। ওষুধ খাওয়ার পরেও টানা সাত থেকে আট দিন এই সমস্যায় ভুগছেন! সঙ্গে হালকা জ্বর, গায়ে ব্যথা! ডায়রিয়া ধরতে পারলেও, এটা যে কোভিডের উপসর্গ হতে পারে, সেটা অনেকেরই ভাবনার বাইরে, জানাচ্ছেন ডাক্তাররা। 

সতর্ক থাকলেও করোনার উপসর্গ নিয়ে এখনও অবগত নন সাধারণ মানুষ। এর কারণ ভাইরাসের ডাবল, ট্রিপল মিউট্যান্ট ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসে। যার কারণে উপসর্গও নতুন নতুন। যা আরটি-পিসিআর টেস্টেও ধরা পড়ছে না অনেক সময়। আমেরিকান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে একটি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে গবেষকরা জানিয়েছেন ২০৮ জন করোনা রোগীর উপসর্গ নিয়ে গবেষণা করার পর জানা গিয়েছে ৪৮ জন ডায়রিয়ার সমস্যায় ভুগেছেন। এমনকি বেইজিংয়েও এমন গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, করোনা রোগীদের প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে ডায়রিয়া একটি। তাই উপসর্গ দেখা দিলেই করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তার সুমন পোদ্দার। aajkaal.in কে তিনি জানালেন, 'আসলে এটা ধরনের ভাইরাল ডায়রিয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের কিংবা কমবয়সিদের এই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। বড়দেরও হচ্ছে। তবে ছোটদের ক্ষেত্রে প্রবণতা বেশি। 

তার কারণ, করোনা ভাইরাস এসি টু রিসেপ্টর দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। এই রিসেপ্টরটি খাদ্যনালীতে থাকে। সেই সূত্র দিয়ে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে শিশুদের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে ডায়রিয়ার যে যে উপসর্গগুলো থাকে, যেমন পেটের সমস্যা, দিনে বহুবার মলত্যাগ। কিন্তু ক্লান্তিভাব নেই। আবার দুদিন পর ঠিকও হয়ে যেতে পারে। এমনটা হলে আলাদা করে করোনার কারণে হতে পারে এই ভাবনাটাও অনেকের আসে না। এর সঙ্গে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো উপসর্গ যদি দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেব। সাধারণভাবে যখন একাধিক উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, এবং বাচ্চা যথেষ্ট অ্যাক্টিভ, সেটাকে আমরা ভাইরাল ডায়রিয়া ধরে নিচ্ছি। কিন্তু এই অতিমারির সময় যদি এটা হয়, তাহলে একটু খেয়াল রাখতে হবে। যেমন এই সময় বাচ্চারা বাড়িতেই থাকে। সেক্ষেত্রে বাড়িতে তার আনুষাঙ্গিক কোনও বড়দের কোনও উপসর্গ আছে কি না, বাইরে থেকে যাঁরা আসছেন, বা কোনও কাজে যাঁরা বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন, তাঁদের যদি কোনও উপসর্গ থাকে, তাহলে এটা কোভিডের কারণে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই সতর্ক থাকুন। পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলার কথাই বলব।' 

ডাক্তার সৌম্যদীপ মুখার্জির বক্তব্য অনুযায়ী, 'ডায়রিয়া হওয়ার পর যেমন গায়ে ব্যথা, পেটে ব্যথা হয়, কোভিড পজিটিভ হলেও কিন্তু এই উপসর্গগুলো দেখা দেবে। সাধারণ ডায়রিয়ায় জ্বর, সর্দি, কাশি এগুলো হতে অনেক সময় দেখা যায় না। আর কোভিডের কারণে ডায়রিয়া হলে, সেক্ষেত্রে অন্তত একবেলার জন্য হলেও জ্বর আসবে। এটা বয়স্ক এবং শিশু দু ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে দেখা যাচ্ছে, ডায়রিয়ার সঙ্গে বমিও হচ্ছে অনেকবার। ফলে, এইধরনের উপসর্গ দেখা দিলেই কোভিড টেস্ট করানোটা প্রয়োজন। তিনদিন এই উপসর্গ থাকার পর টেস্টের রেজাল্ট পজিটিভ এলে ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই। বাড়িতেই ওষুধ খেয়ে কমে যেতে পারে। পরিস্থিতি গুরুতর হলে, হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে স্যালাইন চলছেই খানিকটা সুস্থ হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশই। তবে করোনার প্রথম তরঙ্গের থেকে দ্বিতীয় তরঙ্গে কোভিডের এই উপসর্গটি বেশি দেখা দিচ্ছে।' 

কিন্তু কোভিডের কারণে ডায়রিয়া হলে ক্লান্তিভাব থাকবে বলেই জানাচ্ছেন ডাক্তার বিপ্লব সাহা। তিনি জানালেন, 'ডায়রিয়া হওয়ায় পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। যেমন অতিরিক্ত বাইরের খাবার খাওয়া, ফ্রিজে জমে থাকা অনেক পুরনো খাবার খাওয়া, জল, ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো ছাড়া প্যান্ডেমিকের সময় হঠাৎ ডায়রিয়া হলে সেটার পিছনে করোনার হাত থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অনেক সময় দেখা গেছে ডায়রিয়া হওয়ার আগে করোনার অন্যান্য উপসর্গগুলো দেখা দিয়েছে। যেমন হালকা জ্বর, গায়ে ব্যথা, ঝিমুনি, ক্লান্তিভাব, কাজ করার এনার্জি না পাওয়া ইত্যাদি। এর পরেই ডায়রিয়া দেখা দিলে, সেটা ৬ থেকে ৭ দিন টানা থাকতে পারে। এই মুহূর্তে কোনও অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। এমন উপসর্গ থাকলে, প্রথমেই কোভিড টেস্ট করাতে হবে। প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইন নিতে হবে। আর যাঁরা বাড়িতেই থাকবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পরামর্শ দেব প্রচুর জল খান। ডায়রিয়া হলে ডি-হাইড্রেশনে সকলেই ভোগেন। কারণ এই সময় শরীর থেকে জল বের হয়ে যায়। সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায়। তাই হাইড্রেটেড থাকাটা জরুরি। 

এমনকি সমস্ত সতর্কতা মেনে, বিশ্রাম নেওয়াটাও প্রয়োজন। এই বিশেষ ক্ষেত্রে অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি প্রোবায়োটিকস খাওয়ার পরামর্শও আমরা দি।'