• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৮ এপ্রিল, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

সিলেটে ঘুমন্ত ৩ পরিবারের ওপর নির্মমতা, আতঙ্ক

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

দক্ষিণ সুরমায় সেহরির পর ঘুমন্ত ৩ পরিবারের ওপর নির্মমতা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। দা ও কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয় তাদের। এতে গুরুতর আহত হওয়া আম্বিয়া বেগমের মাথা ও শরীরে আঘাতের পর আঘাত করা হয়েছে। তার স্বামী মকবুল আলীর পা দা দিয়ে কুপিয়ে করা হয়েছে দু’টুকরো। মৌরশ আলীর হাতের কব্জি দায়ের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত। ইজার আলীর মাথায় পড়েছে দা’র কোপ। এ ভাবে তিন ভাইয়ের পরিবারের ৯ জনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। গত ১৫ই এপ্রিল ভোরে দক্ষিণ সুরমার নিজগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটলেও গতকাল বিকাল পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

আহতরা অভিযোগ করেছেন- হামলাকারীদের এক ভাই মৌলভীবাজার পুলিশে চাকরি করেন। এ কারণে এখনো আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে না। গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারের গ্রাম নিজগাঁও। এই গ্রামের বৃদ্ধ মকবুল আলীর পৈতৃক বাড়ির উঠোনের মধ্যখান দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করতে চায় পার্শ্ববর্তী বাড়ির প্রভাবশালী জামাল উদ্দিন সহ তার লোকজন। কিন্তু মকবুল, তার ভাই মৌরশ ও ইজার মিয়া তাদের সম্পত্তির উপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করতে দিচ্ছিলেন না। এ নিয়ে দু’বছর ধরে আদালতে মামলা চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে জোরপূর্বক ড্রেন নির্মাণ করতে চাইলে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ বাধে। এই বিরোধের বিষয়টি দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশকে অবগত করা হয়। দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই লিটন চন্দ্র দত্তের কাছে অভিযোগ তদন্তাধীন থাকাকালে ১৫ই এপ্রিল সেহরির পর তিন ভাইয়ের ঘুমন্ত পরিবারের ওপর হামলা চালায় জামাল উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। এ সময় তারা দা, কুড়াল সহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাদের গুরুতর আহত করে। এদিকে ঘটনার পর আশেপাশের লোকজন এসে গুরুতর অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। 
দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ ঘটনায় জামাল সহ সকল আসামির বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছে। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় এখন বাদীপক্ষ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন গুরুতর আহত বৃদ্ধ মকবুল আলী। 
তিনি জানান, ‘ঘটনার দিন ফজরের নামাজের পর তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। এমন সময় প্রতিবেশী জামাল, নুর উদ্দিন, আলীম উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন, আজির উদ্দিন, বেলাল আহমদ, মঈন উদ্দিন, হিমেল, দিলশাদ সহ ২০-২৫ জন দা, কুড়াল নিয়ে প্রথমে তার ভাই মৌরশের ঘরে হামলা চালায়। পরে তারা ইজারের ওপর হামলা চালায়। তাদের রক্ষা করতে আমি ও আমার স্ত্রী এগিয়ে গেলে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। তার স্ত্রী আম্বিয়া বেগমের শরীরে ৫২টি সেলাই রয়েছে। তার একটি পা ভেঙে গেছে। একই সঙ্গে ইজারের মাথা দা দিয়ে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে।’ 

মকবুল আলী বলেন, ঘটনার পর তার মেয়ে থানায় মামলা দিলেও পুলিশ মামলা আমলে নিচ্ছে না। এসআই লিটন আসামিদের গ্রেপ্তার করছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি। 
হামলায় গুরুতর আহত মৌরশ আলী জানিয়েছেন, আসামিদের এক ভাইয়ের নাম আশরাফ। সে মৌলভীবাজার পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি করেন। ঘটনার পর আশরাফের ইন্ধনের কারণে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না। উল্টো এখন হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। মামলা তুলে নিতে ও আপস করতে চাপ প্রয়োগ করছে বলে জানান তিনি। 

হামলায় গুরুতর আহত আম্বিয়া বেগম জানান, হামলাকারীরা তার মাথা ও পিঠে দা ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছে। তাদের হামলার পর কয়েক ঘণ্টা তার জ্ঞান ছিল না। রমজানের দিন কোনো মানুষ এভাবে কোনো মানুষের ওপর হামলা চালাতে পারে না। 

তিনি বলেন, দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই লিটন হামলার আগে থেকেই ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিল। তার কাছে অভিযোগপত্র ছিল। সে টাকা খেয়ে হামলাকারীদের ‘শেল্টার’ দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেন আম্বিয়া বেগম। এখন আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। তবে দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই লিটন জানিয়েছেন, তিনি উভয়পক্ষকেই শান্ত থাকার কথা বলেছিলেন। কেউ তার কথা মানেননি। এরপর হামলার ঘটনায় দ্রুত মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। এদিকে আসামিদের স্বজন মৌলভীবাজার পুলিশে কর্মরত কনস্টেবল আশরাফ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। 

তিনি জানান, ‘এ ঘটনায় তিনি দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি কিংবা মামলার আইওকে ফোন করে কোনো রিক্যুয়েস্ট করেননি। বরং তিনি আসামিদের আদালত থেকে জামিন নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশকে প্রভাবিত করছেন না বলে দাবি করেন।’ 

গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। কারণ সেহরির পর ঘুমন্ত অবস্থায় দা, কুড়াল নিয়ে হামলা চালিয়ে তিন পরিবারের ৯ জন সদস্যকে আহত করায় ঘটনায় গ্রামেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। উপস্থিত লোকজন ঘটনার সময় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে হামলাকারী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে গুরুতর অবস্থায় তাদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় গ্রামে এখনো চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

মামলার বাদী মমতা বেগম জানিয়েছেন, তাদের পরিবারে তিন অভিভাবক হচ্ছে তার পিতা ও দুই চাচা। হামলায় তারা গুরুতর আহত। বাড়িতে যারা আছেন তারা সবাই মহিলা মানুষ। আসামিরা এসে হুমকি দিলে পুলিশকে ফোন দিলেও সাড়া মিলে না বলে জানান তিনি।