• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৮ এপ্রিল, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

মুনিয়ার আত্মহত্যা, নাকি হত্যা, যা জানা গেলো!

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন মহলে। কুমিল্লাসহ সারাদেশে সাধারণ মানুষ সামাজিক মাধ্যমে দাবি মুনিয়াকে হত্যার পর লাশ ঝুলিযে রাখা হয়েছিল। এসব সংশয়ের উত্তর দেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তিনি বলেন, গুলশানের যে ফ্ল্যাটে মুনিয়ার লাশ পাওয়া গিয়েছিল,ওই বাসার তালাটি ছিল অটো। অর্থাৎ ভেতর ও বাইর যেদিক থেকে টান দেওয়া হোক না কেন, তা বন্ধ হয়ে যাবে। যেকোনো দিক থেকে দরজাটি খুলতে চাবির দরকার হবে।

মুনিয়ার বোন নুসরাত জানান, ‘আমরা মুনিয়ার লাশ স্পর্শ করিনি, লাশ স্পর্শ করেছে পুলিশ। আমরা তার বাম হাতে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। বেলা ১১টায় সর্বশেষ আমার সাথে মুনিয়ার কথা হয়। দুপুর ২টার দিকে আমি, আমার স্বামী ও এক এক আত্মীয় মিলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। ৫টার সময় ঢাকায় পৌঁছাই।’ 

এদিকে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মুনিয়ার কিছু কথোপকথনের স্ক্রিনশটের সূত্র ধরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে একটি সূত্র তার কাছে কিছু তথ্য জানতে চায়।

শারুন গণমাধ্যমে বরাত দিয়ে বলেন, সূত্রের জানতে চাওয়া বিষয়গুলো তিনি জানিয়েছেন। তবে কে তাকে ফোন করেছিলেন, সে ব্যাপারে হুইপপুত্র কিছু বলতে চাননি।

গতকাল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হতে থাকে, মৃত্যুর আগে শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মোসারাত জাহান মুনিয়ার কথা হয়েছিল। এ কারণেই শারুনের সঙ্গে কথা বলে ওই সূত্র।

তার কাছ থেকে গতকাল বিকেলে একটি সূত্র মোসারাতের সঙ্গে কথোপকথনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে জানতে চেয়েছে, তিনি মোসারাতকে চেনেন কি না। শারুন জানান, মোসারাতের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। গত বছর মোসারাত ফেসবুকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনিই তাকে জানান, বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে তার সাবেক স্ত্রীর সম্পর্ক হয়েছে।

তবে শারুনের দাবি, মোসারাতের মৃত্যুর পর ফেসবুকে তার সঙ্গে কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো মিথ্যা। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে এই কথোপকথনগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও দাবি জানিয়েছেন শারুন।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিষয়টি অনেক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়াও পারিপার্শ্বিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করছেন। বাসা থেকে ফুটপ্রিন্টসহ সব ধরনের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মুনিয়া আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে, বিষয়টি ক্লিয়ার হতে কিছু সময় লাগবে।

মুনিয়া যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকতো সেই অ্যাপার্টমেন্টের সব সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। এগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে। মুনিয়ার ফ্ল্যাট থেকে সর্বশেষ কে বের হয়েছে কিংবা ঘটনার দিন ওই বাসায় কারা গিয়েছিল বা বের হয়েছে তা যাচাই করা হচ্ছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করতে কিছু সময় প্রয়োজন। এছাড়া মুনিয়া ও সন্দেহভাজনদের কল রেকর্ডও পরীক্ষা করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন সায়েম সোবহান ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন তা জানার চেষ্টা চলছে।

এদিকে মুনিয়া হত্যার তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে এক প্রতিবাদ ও শোক সভা সাবেক কুমিল্লায় জেলা কমান্ডার জনাব সফিউল আহমেদ বাবুলসহ জেলার বিভিন্ন সংগঠন বিচারে দাবিতে ফেজবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এবং দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দাবি জানান।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন,‘আমরা সবগুলো বিষয় সামনে রেখেই তদন্ত করছি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে অনেক কিছুই ক্লিয়ার হবে। এছাড়া ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, ভিসেরা পরীক্ষাসহ সবকিছুই করা হচ্ছে। আত্মহত্যা করে থাকলে মেয়েটি কেন আত্মহত্যা করলো তার কারণও জানার চেষ্টা চলছে।’

উল্লেখ্য সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।