• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৯ এপ্রিল, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

রেকর্ড-মেসেজ তদন্ত ও বিচারে কতটা সাহায্য করবে?

বিবিসি বাংলা

ঢাকার গুলশান এলাকায় এক তরুণীর 'আত্মহত্যা'-কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন বেশ সরগরম।

এর সাথে বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের জড়িত থাকার অভিযোগ আসায় এনিয়ে আরো বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ আদান-প্রদানের স্ক্রিনশট, টেলিফোন কথোপকথনের কথিত রেকর্ড এবং ভিকটিমের ডায়েরির নানা কথা ফেসবুক এবং ইউটিউবসহ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

এসব কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে সামাজের একটি বড় অংশ নানা ধরণের অনুমান এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এসব তথ্য পুলিশি তদন্তের ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখে কি না? এছাড়া আদালতের কাছে এসব তথ্যের গুরুত্ব কতটা?

পুলিশর সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এসবের মধ্যে কিছু ক্লু (সূত্র) যদি পাওয়া যায় তাহলে সেটি পুলিশকে অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে।

"কোন ভিডিও বা ইন্টারনেট-ভিত্তিক কোন তথ্য যদি সামনে আসে সেগুলোকে তদন্তের জন্য যাচাই-বাছাই করাটা খারাপ কিছু না। পুলিশ যা কিছু পাক না কেন, সবকিছুই যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করে," বলেন মি. রহমান।

কিন্তু এসব তথ্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যদি তদন্তের গতি-প্রকৃতি নির্ধারিত হয়, সেক্ষেত্রে তদন্তে সমূহ ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন পক্ষ থেকে খুব বেশি চাপ যদি থাকে, সেক্ষেত্রে তদন্তে এক ধরণের বাধ্যবাধকতা তৈরি হতে পারে।

পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে সেটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়। পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট আদালতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। বাদী এবং বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা তদন্তের নানা দিক নিয়ে আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন বা চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

মোখলেসুর রহমান বলেন, যারা সাক্ষ্য দিতে পারবেন, শুধু তাদেরই সাক্ষী আদালতের সামনে গ্রহণযোগ্য হবে। যেটা সাক্ষ্য আইন সমর্থন করবে না সেটা আদালত নেবে না।

তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদপত্রের ভাষ্য বাংলাদেশের সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে খুব সীমিত ক্ষেত্রে এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে কখনো কখনো এগুলো আদালত গ্রহণ করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, কোন একটি ঘটনায় বেশিরভাগ মানুষ যদি এক পক্ষে কথা বলতে থাকে, সেক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে দোদুল্যমানতা তৈরি হওয়া অসম্ভব নয়।

তদন্ত হলেই ঘটনার সমাপ্তি নয়। এরপর বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়া আছে। আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করার পর আদালত সন্তুষ্ট না হলে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে।

বিচারের ক্ষেত্রে বাধা হয়
বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে হোয়াটসঅ্যাপে কিংবা ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথন স্ক্রিনশট এবং টেলিফোনের কথোপকথন আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে উল্লেখ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।

"যদি কোন ডায়েরি থাকে যেটা আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে এবং ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে," বলছেন মি. মোরশেদ।

তিনি বলেন, পুলিশ যদি কোন ব্যক্তির টেলিফোন রেকর্ড করে সেটি সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করতে চায় তাহলে আদালতের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে।

সরাসরি কারো টেলিফোন আলাপ রেকর্ড করে আদালতে উপস্থাপন করা আইনের মধ্যে পড়বে না।

"আদালতের কাছে কোন কথোপকথন উপস্থাপন করা হলে আদালত জিজ্ঞেস করবে এটা কোথা থেকে এসেছে। এর কোন বৈধতা আছে কি না সে প্রশ্ন উঠবে। যেটাই আদালতে উপস্থাপন করা হবে সেটার একটা বৈধতা থাকতে হবে।"

কেস ডায়েরির মধ্যে যে বিষয়গুলো আলামত হিসেবে আসবে সেগুলো প্রমাণ সাপেক্ষে আদালত গ্রহণ করবে।

আইনজীবী মি. মোরশেদ বলেন, "কোন মামলায় তদন্তকারী যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে তাহলে সঠিক তদন্ত করা যায় না। এসব ঘটনা আমাদের বিচার বিভাগের জন্য মারাত্মক একটা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

কোন মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ যদি কিছু জব্দ করে তখন সেটি গোপন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বিষয়টি যখন সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়া, পত্রিকা বা টেলিভিশনে চলে আসে তখন তদন্ত প্রভাবিত হয়।

" সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিষয়টা ফোকাস হয়, সেখানেই থাকতে হয় তদন্তকারী কর্মকর্তাকে। এর বাইরে তারা যেতে পারে না। মিডিয়া ট্রায়াল বিচারকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে," বলেন মি. মোরশেদ।