• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৮ মে, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

‘পুলিশকে ম্যানেজ করে’ রাতের আঁধারে দূরপাল্লার বাস

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

সাভারের বলিয়াপুর এলাকার নিচু জমি ভরাট করে গড়ে তোলা মধুমতি মডেল টাউনটি সর্বোচ্চ আদালত থেকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে এটি নাম পরিবর্তন করে নান্দনিক হাউজিং নামে পরিচালিত হচ্ছে। আর এই হাউজিংয়ের গেটেই বসানো হয়েছে অবৈধ বাস টার্মিনাল। টাকার বিনিময়ে ‘পুলিশকে ম্যানেজ’ করে রাতের আঁধারে অস্থায়ী এ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ভোরে এবং সন্ধ্যার পরে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বাস।

খবর নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী গাবতলিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অটোরিক্সা, পাঠাও, ও প্রাইভেটকারে করে ঘরমুখো যাত্রীরা এসে সাভারের বলিয়াপুর এলাকার নান্দনিক হাউজিংয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ হাউজিংয়ের মূল গেটেই রয়েছে আমাদের হোটেল নাম একটি রেস্তরা। জানা গেছে, এ হোটেলের মালিক পরিবহন ব্যবসায় জড়িত থাকায় তার পরামর্শে এখানে লকডাউনের মধ্যে অস্থায়ী বাস টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়েছে।

দেখা গেছে, যাত্রী পরিবহনকারী রোজিনা পরিবহনে বাসে ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিভিন্ন জেলায় জরুরি ভিত্তিতে ধান কাটার জন্য কৃষি শ্রমিক প্রেরণ’ লেখা আছে। আরো লেখা আছে, গন্তব্য পাটগ্রাম থেকে মহিপাল, ফেনী। ব্যবস্থাপনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট এবং সহযোগিতায়, উপজেলা প্রশাসন পাটগ্রাম লালমনিরহাট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চালক জানান, যেখান থেকে বাস ছাড়া হয়, সেখানে এসে পুলিশ সব বাস ও মাইক্রোবাস থেকে টাকা আদায় করে।

সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত একটি মাইক্রোবাসের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সাভারের হেমায়েতপুর, থানা বাসস্ট্যান্ড, সিঅ্যান্ডবি, নবীনগর, কালামপুর ও উথুলীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ গাড়ি আটকে টাকা দাবি করে। তাদের চাহিদা মাফিক টাকা দিলে গাড়ি ছেড়ে দেয়, আর টাকা কম দিলে কাগজপত্র দেখার নামে হয়রানি করে’।

তিনি বলেন, ‘ফেরি পার হলে গোয়ালন্দ, শিবপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে আবার গাড়ি থেকে টাকা আদায় করা হয়। এভাবে প্রতিটি গাড়ি একবার ঘুরে আসলেই কয়েক হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হয় পুলিশকে। অন্যদিকে পাটুরিয়া ঘাট পার হওয়ার পর কিছু লোক ক্যামেরা নিয়ে গাড়িতে উঠে ভিডিও করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে’।

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের মাইক্রেবাস যাত্রী খুখু মনি বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে ঈদে বাড়ি যাচ্ছি। আগে পাঁচ শ টাকা দিয়ে বাসে যেতাম, এখন দুই হাজার টাকা দিয়ে যাচ্ছি। দুপুর ১২টার দিকে শ্যামলী থেকে মধুমতি মডেল টাউনের সামনে এসে বসে আছি, গাড়ি ছাড়বে আরও একঘন্টা পর’।

তার সঙ্গে থাকা অপর যাত্রী সৌদি প্রবাসী সোলায়মান বলেন, আমিও সাতক্ষীরা যাব। তাই দুই হাজার টাকা দিয়ে সিট নিয়ে বসে আছি। আমার বোনের বিয়ে তাই লকডাউনের মধ্যেই বেশি টাকা দিয়ে বাড়িতে যেতে হচ্ছে’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বাসের চালক বলেন, গোল্ডেন লাইন পরিবহনের মালিকের জায়গা হওয়ায় এখানে গাড়ি পার্কিং করে যাত্রী ওঠানামা করাতে কোনো টাকা দিতে হয় না। তবে সন্ধ্যার পর পুলিশের লোকজন এসে প্রতি গাড়ি থেকে এক হাজার করে টাকা নিয়ে যায়।

একটি বাসের সুপারভাইজার জানান, পথে পথে পুলিশ গাড়ি থামায়, বেশি টাকা দিলে ছেড়ে দেয়, কম টাকা দিলে কাগজপত্র দেখতে চায়। 

লকডাউনে চলমান গাড়ি থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে সাভার হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক সাজ্জাদ করিম বলেন, দুদিন আগে মধুমতি মডেল টাউন থেকে রাতের আঁধারে লুকিয়ে কিছু গাড়ি চলাচল করেছে। সংবাদ পেয়ে আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিই। তিনি বলেন, তারা গাড়ি প্রতি টাকা আদায়ের মিথ্যা দাবি করেছে আমাদের বিরুদ্ধে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট।