• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৭ মে, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। অক্সিজেন ছাড়াই তিনি শ্বাস নিতে পারছেন। বেড়েছে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও। ডায়াবেটিসও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবে কিডনিতে কিছুটা সমস্যা রয়েছে।

এভাবে শারীরিক অবস্থা উন্নতি হতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হতে পারে বলে তার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে হাসপাতালের সিসিইউতে বিবর্ণ ঈদ করেছেন খালেদা জিয়া। ঈদের দিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া পরিবারের কয়েক সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন।

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসন এখন পর্যন্ত সিসিইউতেই আছেন। ঈদের দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ ম্যাডাম অতি ধীরে ধীরে হলেও ইম্প্রুভ করছেন। বেশ ইম্প্রুভ করেছেন ইতোমধ্যে। তবুও তার চিকিৎসকরা বলেছেন, ‘স্টিল হার কনডিশন ইজ ক্রিটিক্যাল’, এখনো ক্রিটিক্যাল রয়েছে। তবে অনেকগুলো বিষয়ে তার উন্নতি হয়েছে এবং তারা (চিকিৎসক) খুব আশাবাদী, অতি শিগগির তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।”

২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান খালেদা জিয়া। পুরোনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে দুটি এবং পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিনে দুটি ঈদ কাটে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ওই সময় ঈদের দিন আত্মীয়স্বজনরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তাদের বাসা থেকে রান্না করে আনা খাবার খেয়েছেন তিনি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পরিবারের আবেদনে নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত হলে গত বছরের ২৫ মার্চ মানবিক বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় একরকম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ ছিল একেবারেই সীমিত। গত বছর দুটি ঈদই কেটেছে গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায়। আত্মীয়স্বজন ছাড়া শুধু দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ঈদে সাক্ষাৎ দিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন।

তবে, এভারের অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার ঈদ কেটেছে বিবর্ণ। আত্মীয়স্বজন ও নেতাকর্মীসহ কেউ যাতে হাসপাতালে না-আসে, সেজন্য আগে থেকেই অনুরোধ জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

তারপরও ঈদের দিন দলীয় নেতাকর্মীরা হাসপাতাল এলাকায় গেলেও ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পাননি। তবে, ঈদের দিন দুপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিকালে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, প্রয়াত সাইদ এস্কান্দারের ছেলে অভিক এস্কান্দার হাসপাতালে চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেন। তবে তারা কেউ বেশিক্ষণ সেখানে থাকেননি। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেই তারা বাসায় ফিরে যান।

বিএনপির চেয়ারপারসনের বোন সেলিনা ইসলাম বলেন, আগে আমরা ঈদের দিন একসঙ্গে কাটাতাম। খাওয়া-দাওয়া করতাম। এবার দেখা হয়নি। তার জন্য দোয়া করেছি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হওয়ার আগ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার ঈদ ছিল রঙিন। দলীয় নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজননিয়েই ঈদের দিনে থাকতেন ব্যস্ত। আগে ঈদের দিন কূটনীতিক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় এবং শেরেবাংলা নগরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতেন তিনি। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির পর খালেদা জিয়ার ঈদ বিবর্ণ হয়ে যায়।

এ বছর ১১ এপ্রিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। এর মধ্যে ৩ মে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। তার চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা তাকে বিদেশ নেওয়ার সুপারিশ করেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার অনুমতি দেয়নি।