• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২১ মে, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

টিকা নিয়ে চুক্তি : ইংরেজির জায়গায় চীনা ভাষার অংশে সই!

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভারত থেকে টিকা সংগ্রহের চুক্তি করেছিল সরকার। কিন্তু ভারত চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ হিসেবে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকার। এ ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় দেরি হচ্ছে টিকা সংগ্রহে। এমনকি টিকা সংগ্রহের জন্য চীনা ভাষায় পাঠানো ডকুমেন্টে সই করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

গোটা বিষয়টিকে ‘লাউজি’ কাজ হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

এখন সেই অংশে কী আছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চীনা ভাষায় দক্ষ একজন অধ্যাপককে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (২০ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। চীনেরটা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।’

ড. মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজটি করছে। চুক্তি, টিকা কেনা ও আনার সব দায়িত্ব পালন করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। চীনের সঙ্গে টিকা কেনার চুক্তি ও প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় যে সময়ক্ষেপণ করছে, তাতে হতাশা প্রকাশ করেছেন বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। একই ধরনের ঘটনা ঘটছে রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কেনার ক্ষেত্রেও।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে এ মাসের শুরুর দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্বে টিকার সংকট আছে। এটি সাপ্লাইয়ার্স মার্কেট (সরবরাহকারীর বাজার)। সিদ্ধান্ত নিতে বেশি দেরি করা ঠিক হবে না।

জানা যায়, টাকা দেওয়ার পরও চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে টিকা সরবরাহ করতে না পারায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তিগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশেষ করে টিকা পৌঁছানোর নিশ্চয়তার বিষয়টি চুক্তিতে রাখতে চাচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দর-কষাকষি করার অধিকার বাংলাদেশের অবশ্যই আছে। কিন্তু এটি করতে গিয়ে টিকা অনিশ্চিত বা টিকা পাওয়ার উদ্যোগটিই ঝুলে থাকতে পারে। কারণ এখন বিশ্বে টিকার চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকায় দর-কষাকষিতে উৎপাদন ও সরবরাহকারীদের ভূমিকা আগের চেয়ে বেড়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেছন, চীনের সঙ্গে চুক্তি মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। চীন তিনটি ডকুমেন্ট পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে আমরা দু’টি পাঠিয়েছি পূরণ করে। দু’টির মধ্যে একটি, যেটি কাল (গত বুধবার) গেছে সেটির কিছু অংশ ছিল ইংরেজিতে, বাকি অংশ ছিল চীনা ভাষায়। আমরা পূরণ করে পাঠানোর সময় চীনা জায়গায় সই করে দিয়েছি। কাল আবার চীনা ভাষার একজন প্রফেসর নিয়োগ করে সেটি আবার…। ’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দিজ আর লাউজি (এগুলো খারাপ) কাজ হয়েছে। আমরা (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) এটি করিনি। আমরা শুধু কানেকশনটি করে দিই। এগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। কখন, কীভাবে আনবেন তারা ঠিক করেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সেখানে একটু দেরি হচ্ছে। ’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূত খুবই হতাশ। ডকুমেন্টগুলো না হলে প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা যাবে না। তিনি বেইজিংয়ে চূড়ান্ত করছেন। তিনি খুবই হতাশ। তিনি আমাকে ফোন করেছেন। টেক্সট দিয়েছেন। ফোন করার পর বলেছি, আমাকে টেক্সট দেন। তিনি টেক্সট পাঠালে আমি সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব সাহেবকে পাঠিয়েছি। এই অবস্থায় আছে।

রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের ডকুমেন্টগুলোর কিছু হয়েছে, কিছু হয়নি। একসময় একটা পরিমাণ (টিকার পরিমাণ) বলা হয়েছে। পরে আবার পরিবর্তন করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ানরা এগুলো পছন্দ করে না। আপনি বললেন, আমি এত আনবো। পরে বললেন যে আরো কমিয়ে আনবো। এগুলো নিয়ে আমরা এখন ব্যস্ততায় আছি। আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যেই সব কিছুই ঠিক হবে।

ড. মোমেন বলেন, গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই ডকুমেন্ট পাঠিয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ক্রয়চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রাশিয়া চায়, আপত্তি থাকলে স্পষ্টভাবে জানাতে।

ভারত থেকে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করকে তিনি ফোন করেছিলেন। ভারত কখনো বলেনি যে টিকা দেবে না, কিন্তু তারা দিতে পারছে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাজ্যের কাছেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্য অনেক দিন অপেক্ষার পর জানিয়েছে, বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে চেষ্টা করা যেতে পারে।