• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

খাদ্য সংকটে চীনে ১৭২ বাংলাদেশির দুর্বিষহ জীবন

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশে আটকে পড়া ১৭২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কারণে তারা প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ঘরে খাবার নেই, বাইরে দোকান বন্ধ। বিশুদ্ধ পানির সংকটও চরমে।  বাস-ট্রেন বন্ধ এবং বিমান চলাচল কমিয়ে দেয়ায় তারা নিজ উদ্যোগেও ফিরতে পারছেন না। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ডরমেটরি সিল করে রেখেছে। ফলে তারা বাইরে যেতে পারছেন না, বাহির থেকে কেউ খাদ্য-পানীয় নিয়েও ভেতরে যেতে পারছেন না। প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের শুরুতে খাবার দিলেও এখন তা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের অদূরে ইচাং-এ অবস্থান করছেন ওই সব বাংলাদেশিরা।

 

হুবেই’র উহান শহরে সর্বপ্রথম নভেল করোনা ভাইরাসটি ধরা পড়লেও এখন সেটি আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ডিসেম্বরে ভাইরাসটির দেখা মিললেও এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা বিশেষ করে এ নিয়ে চিকিৎসকের গণ-নোটিশ আমলে না নেয়ায় এটি এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় এক মাস দেরি করে জানুয়ারিতে চীন প্রশাসন উহানকে কর্ডন করে। ফলে শনাক্ত হওয়ার আগেই ভাইরাসবাহী মানুষজন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়ায় ভাইরাসটিও দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। তবে এটি এখনও ব্যাপকভিত্তিক নয়। চীনে এটি রীতিমত মহামারি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫’শ তে। মঙ্গলবার চীনে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন আরও ৩ হাজার ৮৮৭ জন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত চীনে প্রতিষেধকবিহীন এই ভাইরাসে ২৪ হাজার ৩২৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

ইচাং শহরে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দ্বীন মোহাম্মদ প্রিয় এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাদের দুর্বিসহ অবস্থার বর্ণনা দেন। লিখেন- হুবেই প্রদেশের ইচাং শহরে আটকে আছি আমরা ১৭২ জন বাংলাদেশি। আমাদের জীবনযাত্রা দিনকে দিন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের মোবাইল ফোনটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু এতেও তারা কিছু না বলে প্রস্থান করেছে। দেশে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় তারা দূতাবাসে ইতোমধ্যে আমাদের ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ঢাকার গ্রীণসিগন্যাল বা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। প্রিয় লিখেন- এমতাবস্থায় আমরা এই দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিস্থিতিতে আছি। আমরা দেশে ফিরতে চাই। এটাই এখন আমাদের একমাত্র চাওয়া। অন্য শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- তারা ইচাং-এ অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। খাদ্য সংকট দেখা দিলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ উদাসীন। তাদের কাছে চেয়েও খাবার এবং পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ইচাংয়ের চায়না থ্রি গর্জেস ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দ্বীপায়ন রায় বলেন, আমরা এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছি। ঘুমাতে পারি না। খাবার নেই। বিশুদ্ধ পানিও নেই। শিক্ষার্থীরা জানান, ইচাং-এর অবস্থান উহানের খুব কাছাকাছি। ফলে উহান আতঙ্কে এই শহরও বন্ধ প্রায়।

ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ট্যাপের পানি ফুটিয়ে পান করছি। এমন বন্দি অবস্থায় বেশিদিন থাকলে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বো। দ্বীপায়ন বলেন, খাবারের অভাব যে কত বড় কষ্ট তা বুঝতে পারছি। পানি ফুটিয়ে খাওয়া যায়, কিন্তু খাবার না থাকলে তো আর খাওয়া যায় না। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরির গেট বন্ধ থাকছে ২৪ ঘন্টা। ভেতরের কেউ বাইরে যেতে পারে না, বাইরের কেউ ভেতরে আসতে পারে না। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে তারা তিন দিন আগে খাবার চেয়েছেন জানিয়ে বলেন, এখনও খাবার পৌছায়নি। এ অবস্থায় তারা কতদিন সুস্থভাবে বাঁচতে পারবেন তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, রেল স্টেশন, বিমানবন্দর- সবই বন্ধ প্রায়।

সরকারের সাহায্য ছাড়া আমরা এখান থেকে কেউই বের হতে পারবো না। তাদের জরুরি উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আকুতি জানান ইচাং-এ আটকে পড়া এই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তবে দ্বীপায়ন এটা নিশ্চিত করেন- এখনও উহান বা ইচাং- কোথাও কোনো বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর তারা পাননি। তবে এই অবরুদ্ধ অবস্থা প্রবলিম্বত হলে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার মতে, সবাই দেশে ফিরতে চাই। হুবেই প্রদেশে এখন এক বদ্ধ পরিবেশ, চারদিকে মৃত্যুর হাহাকার। বিশেষ করে ইচাং লাঘোয়া উহানে। উহানে মানুষজনের সকালের ঘুম ভাঙে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে। ইচাং-এর মানুষজনের মনোজগতে এটি বড় ধাক্কা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চীনের উহান থেকে বিশেষ বিমান পাঠিয়ে ৩১২ জনকে বের করে আনার পর অন্য শহরে থাকা বাংলাদেশিরাও ফেরার আকুতি জানাচ্ছে। কিন্তু উহানে যাওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ও ক্রুদের অন্য দেশের ভিসা দিতে অস্বীকৃুতি জানানোর কারণে এখন বিমানের কোন ফ্লাইটও চীনে পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে এক ধরণের জটিলতা তৈরি হয়েছে। সরকার তাদের ফেরাতে চায়। এ জন কর্মাশিয়াল ফ্লাইট খোঁজা হচ্ছে। সেটি না পেলে তাদের এক সঙ্গে ফেরানো সত্যিই জটিল। উল্লেখ্য, সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে প্রায় প্রতিদিনই চীনের বিভিন্ন প্রদেশে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং অন্য কাজে চীনে থাকা বাংলাদেশিরা দেশে ফিরছেন। যে যেভাবে পারছেন তারা সেভাবেই ব্যক্তি উদ্যোগে ফিরছেন। সরাসরি ঢাকাগামী ফ্লাইট না পেয়ে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া হয়েও অনেকে  দেশে আসছেন।