• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

অপরাধী ধরতে দুদকের ২২ জেলায় ২২ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগ

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসাসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনকারীদের ধরতে ২২ জেলার সমন্বিত কার্যালয়ে ২২ জন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। গতকাল সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার উদ্বোধনকালে এ তথ্য জানান, চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।  

তিনি বলেন, দুদকের ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ২২ জন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব গোয়েন্দা কর্মকর্তা  প্রতিটি জেলায় যারা মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, খাস জমি দখল, ঘুষ-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধ জগতের গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন-তাদের জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্ট করবেন। কমিশন এসব রিপোর্ট যাচাই-বাছাই করে এসব অপরাধীদের আইন-আমলে নিয়ে আসবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয়া হবে না।

কমিশনের এমন সক্ষমতা আছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সক্ষমতা আপনারাই দেখছেন। সক্ষমতা আমাদের আছে। সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করি।

তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, কাজের প্রতি কমিটমেন্ট বা  দৃঢ় অঙ্গীকারই সক্ষমতার উৎস। আজকের (গতকাল) কমিশন বৈঠকে পূর্ণাঙ্গ কমিশন, সচিব ও মহাপরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সকলের দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে। আমরা একটি টিম। টিমওয়ার্কের মাধ্যমেই আমাদের সক্ষমতা সর্বাধিক বিকশিত করার চেষ্টা করছি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, এই ডে কেয়ার সেন্টার চালু করার মাধ্যমে আমাদের নারী কর্মকর্তাগণ আরো নিশ্চিন্তমনে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মায়েরা এখন অনেকেই চাকরি করছেন। নারীরা এখন আর ঘরে বসে শুধু সন্তান পালনই করছেন না বরং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে তারা চাকরি করছেন। দুদকেও এখন অনেক নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। আবার অনেক পুরুষ কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের স্ত্রী চাকরি করেন। তাদের সন্তানদের পরিপালনের বিষয়টি একটি উদ্বেগের কারণ। কমিশন তাদের উদ্বেগের বিষয়টি আমলে নিয়েছে। কমিশনের কর্মপরিবেশ আরো উন্নত করার জন্যই এই ডে কেয়ার সেন্টারটি চালু করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা না গেলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা কঠিন। দুদকের এই কার্যক্রম দেখে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও নারী বান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে আরো সক্রিয় হবেন বলে দুদক চেয়ারম্যান আশা করেন।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকে যেসব নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, তারা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রেপ্তার, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানেও তারা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। দুর্নীতি দমনে তাদের দৃঢ় মানসিকতা রয়েছে। তাদের শিশুদের নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করায় তাদের কাজের মান ও পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। শিশুরা এখানে খেলাধুলা করতে পারবে এবং আনন্দের সঙ্গে কিছু শিখতেও পারবে। শিশুদের নিরাপত্তায় অবশ্যই এটি দুদকের একটি ভালো দৃষ্টান্ত।

অর্থপাচার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অর্থ পাচার শুধু বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এটি  বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের আশ-পাশের দেশগুলোতেও অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক উন্নয়নও হচ্ছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকারও কাজ করছে, দুদকও কাজ করছে। কমিশন থেকে বিভিন্ন প্রকল্প মনিটরিং করা হচ্ছে। এভাবে যারা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করছেন, তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকালই (বুধবার) কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে- ‘যে বা যারা অবৈধভাবে ব্যাংকের বা সরকারি  অর্থ আত্মসাৎ করে, তা পাচার করে বিদেশে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন, তাদের প্রত্যেককেই অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ইন্টারপোলসহ আন্তর্জাতিক সকল আইনি টুলস-টেকনিক প্রয়োগ করে অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে এবং দেশের সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।’

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সিঙ্গাপুরসহ আমাদের আশে-পাশের দেশগুলো থেকে আমরা কিছু কিছু তথ্য পাচ্ছি। কমিশন থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে কীভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় ওইসব দেশের আদালতের সহায়তায় অপরাধীদের সম্পদ জব্দ করা যায় এবং তা দেশে ফিরিয়ে আনা যায়। কমিশনের প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যেই হংকংয়ের আদালতের সহায়তায় কিছু অবৈধ অর্থ জব্দ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ট্রেড-বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমেই সর্বাধিক  অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে। গতকাল (বুধবার) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে দুদক কার্যালয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ায় এ জাতীয় অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্‌ত সহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।