• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৭ জুলাই, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

অক্সিজেন থাকা সত্বেও পায়নি, ছটফট করে রোগীর মৃত্যু

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

‘ও আপা (নার্স), আমার মা অক্সিজেনের জন্য ছটফট করছে। একটা অক্সিজেন দেন। তারা (নার্স) বলছে, যখন আসবে তখন দেব। ফের গেছি, চাইছি। তখনো দেয়নি। একটা সিলিন্ডার ছিল সেটা নিতে গেলে ধাক্কা দিই ফ্যালা দেয়। অক্সিজেনের অভাবে আমার মা মইরি গেল।’

হাসপাতাল থেকে বৃদ্ধ মায়ের লাশ নিয়ে বের হওয়ার সময় কথাগুলো বলছিলেন নূরজাহান বেগম। শনিবার বেলা ২টা ২৫ মিনিটে নূরজাহানের মা আনোয়ারা খাতুন (৯০) মারা যান। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা করোনা হাসপাতালের করোনা ইউনিট-৩-এর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার স্বর্গপুর গ্রামের বাসিন্দা।
 
বেলা পৌনে তিনটার দিকে হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে গিয়ে দেখা যায়, আনোয়ারার মৃতদেহ মেঝেতে পড়ে আছে। তীব্র রোদ বারান্দায় ছড়িয়ে পড়ছে। স্বজনেরা কাঁদছেন। দুজন স্বজন কাঁথা দিয়ে রোদ ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।

আনোয়ারার পুত্রবধূ আসমা খাতুন বলেন, ‘অক্সিজেন অক্সিজেন চাচ্ছি দেচ্ছে না কো। তারা কচ্চে অক্সিজেন নি কো। আসপি তার পর দিবি। বারবার চাতি গেলে ধাক্কা দেই।’

আনোয়ারার নাতি মেহেদী হাসান বলেন, বাড়িতে থেকে আনোয়ারা অসুস্থ হন। এরপর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে শুক্রবার রাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত থেকেই অক্সিজেন চলছিল। ভোরে তিনি (মেহেদী) বাড়ি চলে যান। এরপর সকাল নয়টার দিকে তাঁর মা (আসমা) ফোন করে জানান, অক্সিজেন শেষ হয়ে গেছে। নার্সের কাছে অক্সিজেন চাইতে গেলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান তিনি (মেহেদী)। বেলা দুইটার পর হাসপাতালের নিচতলা থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুত উঠে অক্সিজেন লাগাতেই তিনি মারা যান।

কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন জেলা ছাত্রলীগের ৬৫ জন কর্মী। এর নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ। তিনি বলেন, অক্সিজেন সঠিক সময়ে না পাওয়ায় প্রায়ই স্বজনদের অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা শুধু সিলিন্ডার মাস্ক লাগানোসহ অন্যান্য সহযোগিতা করছি। অক্সিজেন সরবরাহ ও আনা–নেওয়া বিষয়টি হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেনের মুঠোফোনে একাধিকার কল দিলেও তিনি ধরেননি। 

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশরাফুল আলম বলেন, অক্সিজেনের কোনো অভাব নেই। তবে জনবলের অভাব রয়েছে। আনোয়ারার বিষয়টি শুনেছি। গুরুত্ব দিয়ে সেটি দেখা হচ্ছে।