• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১২ আগস্ট, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

৭ পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা ও স্বর্ণ লুটের অভিযোগ

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

কুমিল্লায় নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুট এবং মুক্তিযোদ্ধাকে মারধরের অভিযোগে ব্রাহ্মণপাড়া থানার তিন এসআইসহ সাত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী সালমা আক্তার বাদী হয়ে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমলী আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। মামলা আমলে নিয়ে বিচারক বেগম মিথিলা জাহান নিপা কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারকে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্ত শেষে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন, কুমিল্লার জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা।

আসামীরা হলেন- কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার এসআই (নিরস্ত্র) (৩৫) সাইফুল ইসলাম, এএসআই কৃষ্ণ সরকার (৩৫), এসআই জীবন কৃষ্ণ মজুমদার (৩২), এসআই কামাল হোসেন (৩৫), এএসআই মতিউর রহমান (৩৮) এবং পুলিশ সদস্য নুরুজ্জামান (৩০) ও জামাল হোসেন (৩৫)। এই মামলায় আরও ৮/১০ জন পুলিশ সদস্যকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

তবে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওপ্পেলা রাজু নাহা জানান, সালমা আক্তারের ভাই ৯ মামলার আসামি লোকমান হোসেনকে গ্রেফতার করতে গেলে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়। এখন উল্টো তারাই বিষয়টিকে ভিন্ন স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে।
 
পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী সালমা আক্তার জানান, গত মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় ভাই লোকমান হোসেনের খোঁজে ব্রাহ্মণপাড়া থানার এসআই সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে একদল পুলিশ সদস্য বসত বাড়িতে আসেন। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা সবাই ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুলিশ সদস্য হিসেবে দাবি করলে ভাই ও ছেলে পুলিশ সদস্য হওয়ায় সেই সুবাদে দরজা খুলে তারা ঘরে প্রবেশ করেন। ঘরে প্রবেশ করেই পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলাম, কৃষ্ণ সরকার, নুরুজ্জামান ও জামাল হোসেন বিভিন্ন রুম তল্লাশী শুরু করেন। কোন মামলায় ওয়ারেন্টের আদেশ আছে কিনা জানতে চাইলে কৃষ্ণ সরকার গালিমন্দ করে লাঠি দিয়ে সুকেসের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে। আলমারীর চাবি নিয়ে তল্লাশীর নামে ড্রয়ারে থাকা নগদ দুই লাখ টাকা এবং দুই জোড়া কানের দুল, দুইটি চেইন ও তিনটি আংটিসহ ৪ ভরি স্বর্ণালংকার এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। চিৎকার করলে পাশের বাড়িতে থাকা বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান ও সালমা আক্তারের স্বামী আবুল কালাম আজাদ এগিয়ে পার্শ্ববর্তী বিল্লাল খানের দোকানের সামনে আসেন। তখন পুলিশ সদস্যরা আবুল কালাম আজাদকে দোকানের সামনে থেকে টেনে-হেচড়ে আটকের চেষ্টা করলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান পরিচয় দিয়ে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের আপত্তি জানালে এএসআই কৃষ্ণ সরকার তার মাথায় লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করে। আঘাতের ফলে মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান রক্তাক্ত জখম করে। এছাড়া পুলিশের অন্য সদস্যরা বাবা মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান ও স্বামী আবুল কালাম আজাদকে এলোপাথারি পিঠিয়ে আহত করে। উপস্থিত সাক্ষীরা চিৎকার করলে গুলির হুমকি দিয়ে পুলিশ সদস্যরা তার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশের হামলায় আহত মুক্তিযোদ্ধা বাবা চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি ওপ্পেলা রাজু নাহা জানান, সালমা আক্তারের ভাই লোকমান হোসেন ডাকাতিসহ ৯টি মামলার আসামি। পলাতক থাকায় পুলিশ সাদা পোশাকে আসামী লোকমান হোসেনকে গ্রেফতারের জন্য সালমা আক্তারের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ওই সময় সালমা আক্তার, তার স্বামী আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় কিছু ব্যক্তি পুলিশের উপর চড়াও হয়। তখন পুলিশ সদস্যরা তার স্বামী আবুল কালাম আজাদকে আটক করে। এমনকি পরবর্তীতে কুমিল্লা থেকে অভিযান চালিয়ে ৯ মামলার আসামী লোকমান হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।

অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, মামলার প্রেক্ষিতে আদালত অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। অভিযোগটি আমরা তদন্ত করে দেখবো।