• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৭ আগস্ট, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

জন্মদাতা পিতার যৌন লালসার শিকার ২ কন্যা

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

 চলনবিলে জন্মদাতা পিতার যৌন লালসার শিকার হয়েছেন ২ শিশুকন্যা। জঘন্যতম এ ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের চর হামকুড়িয়া গ্রামে। স্বামীর ঘরে যেয়ে কষ্ট হবে উল্লেখ করে বারংবার নিজ সন্তানদের ধর্ষণ করে জন্মদাতা পিতা দবির উদ্দিন (৪২) । বিয়ের মাধ্যমে বড় মেয়ে দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর ধরে পিতার বিকৃত যৌন নির্যাতন থেকে রেহাই পেলেও ছাড় পায়নি পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছোট মেয়ে। জানা গেছে, দুই বোনের মধ্যে বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট বোন (১১) পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বাড়িতেই আছে। গত কোরবানির ঈদের ৪-৫ দিন আগে লম্পট দবির উদ্দিন দিনের বেলায় ছোট মেয়ের ওপর পৈশাচিক যৌন নির্যাতন চালায়।

মেয়েটি ভয়ে কাঁদতে শুরু করে। তখন পিতা ছোট মেয়েকে বুঝিয়ে তার বিকৃত যৌন চাহিদা পূরণের জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করে। ছোট মেয়েকে বোঝাতে বড় মেয়ের স্বামীর ফোনে কল করে। এ সময় তাদের কথোপকথন ওই ফোনে রেকর্ড হয়ে যায়। সেই কল রেকর্ড ধরেই প্রকাশ পায় নিজ পিতা কর্তৃক দুই শিশু কন্যাকে পৈশাচিক যৌন নির্যাতন ও বিকৃত যৌন লালসা মেটানোর লোমহর্ষক তথ্য। কল রেকর্ডে শোনা যায়- ‘হ্যালো? হ্যালো। এ বিটি ? আঁহ। কোথায় আচাও? এযে এটি। একটু বাইরে যাওতো, তোমার ছোট বোনের সাথে কথা কও। কার সাথে? তোমার ছোট বোনের সাথে। ছোট বোনের সাথে? হ। হ্যালো? দেন। আচ্ছা, এ বিটি? আঁহ। তোক আমি শিকাইনি? আহ? তোমাক আমি শিকাইনি কাম কাইজ? হ। লেওয়া দেওয়া? হ। ক্যা? না এ যে বাচ্চা লেওয়া পন্ত শিকাইনি তোক আমি? তাইলে এযে তোর ছোট বোনেক ধিরে ধিরে শিখান লাগবিলা? উঁ হু.. বোঝোনা, এ তুই কয়াদে যে শিকপি, ক?
 
এ আপু?  কোনে? এ আপু? আঁহ। তুই কো? মা কোনে? মা নামাজ পড়তে গেচে। কোনটি? শায়লা গা বাড়ি। হ্যালো? আঁহ, কি, কলুলা? হ। তোর মায়ের কাছ য্যাবার চ্যাচ্ছে আর কোচ্ছে যে কয়া দেবো, এইডা কি কওয়ার মতো কতা? মান সন্মান খাবিলা? কয়া দে একটু যাল্লা তুই, এই লে কয়া দে। আঁহ? শিকপি না কি, কি করবি তুই কয়া দে। আমি কি কবো? তুই শিকিস নাই? আঁহ? তুই শিকিসনি? কয়া দে। মার কাছ যাবো।’ 

এদিকে এ ঘটনার জের ধরে দবির উদ্দিনের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আতিকুল ইসলাম বুলবুল। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দবির উদ্দিনের বড় মেয়ে বলেন, আনুমানিক ১১ বছর বয়স থেকে তার পিতা তাকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করতে শুরু করে। আর এসব কথা কাউকে বলে দিলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখাতো। মেয়েটিকে এও বোঝানো হতো যে বিয়ের আগে এসব শিখতে হয়, নয়তো স্বামীর বাড়িতে খুব কষ্ট হবে। কোনটি সঠিক আর কোনটা বেঠিক অসহায় শিশু মেয়েটি তা বুঝতে পারতো না। প্রাণ ভয়ে কাউকে কিছু না বলে অধিকাংশ সময় একদম একা চুপচাপ থাকতো। 

দবির উদ্দিনের বড় মেয়ে আরো বলেন, তার পিতার বিকৃত যৌন লালসার শিকার হয়ে সে একবার ৪ মাসের অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়েন। তারপর তার বাবা তাদের গ্রামের আজাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। তিনি তখন ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। 

তার বাবা আজাজুলের কাছে বলেন, আমার মেয়ে একটা ছেলের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে মা হতে চলেছে। কিন্তু এসব জানাজানি হলে মান সন্মান কিছুই থাকবে না। আমার মেয়ের বিয়ে হবে না। তখন মানবিক দিক বিবেচনা করে আজাজুল কোনো এক ক্লিনিকে নিয়ে তার গর্ভপাত করে দেন। এসব কথা বলতে বলতে মেয়েটি অঝোরে কাঁদতেছিল। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে।  

দবির উদ্দিনের বড় মেয়ের স্বামী বলেন, আমার মুঠোফোনে অটো রেকর্ড চালু করা আছে। আমার শ্বশুর সেটা জানতেন না। আমার স্ত্রী সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে কখনো নিজে থেকে আমাকে কিছুই বলেনি। তাছাড়া বিয়ের আগে যাই ঘটুক সেটা আমার স্ত্রীর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমি কল রেকর্ড শোনার পর আমার স্ত্রী সব খুলে বলেছেন। ওর কোনো দোষ নেই। ও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার মাত্র। বরং তার দুঃখ ও কষ্টের কথা শুনে আমি নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। 

এদিকে, দবির উদ্দিনের ছোট মেয়ের সঙ্গে তার বাবা এমন পৈশাচিক আচরণ করার পর থেকে সে শুধু কেঁদে চলেছে। 

মেয়েটি বলে, এসব কথা কাউকে বলে দিলে তার পিতা তাকে হাঁসুয়া দিয়ে জবাই করার ভয় দেখিয়েছে। 

দবির উদ্দিনের স্ত্রী বলেন, গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে ফাঁকা জায়গায় তাদের বসতঘর। অভাব অনটনের সংসার। আমি দিন মজুরের কাজ করতে গেলে বা কোনো কারণে বাড়িতে না থাকলে তার স্বামী তার দুই মেয়ের সঙ্গে ওসব করতেন, আমি জানতাম না। মেয়েরা কখনো আমাকে জানায়নি। 

দবির উদ্দিনের পিতা আব্দুল খালেক (৬৩) বলেন, এ ঘটনা জানাজানি হলে তার বড় নাতনি (দবির উদ্দিনের বড় মেয়ে) আমার কাছে বিচারের দাবি করে। কিন্তু আমার ছেলে দিন মজুরের কাজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। 

মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং চর হামকুড়িয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বেলায়েত হোসেন বলেন, এহেন ঘটনার কারণে আমরা বাবারা সন্তানের কাছে লজ্জায় পড়েছি। তিনি আইন অনুযায়ী অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার দাবি তুলেছেন। 

এ বিষয়ে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলে আশিক বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনার অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসেনি।