• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১২ অক্টোবর, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

নারী-পুরুষ পরস্পরের বন্ধু হতে পারে কি?

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

দায়িত্ব ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে ইসলামে নারী ও পুরষ কখনো এক নয়। নিজ নিজ সক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে পুরুষ যেমন স্বতন্ত্র, একজন নারীর ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।

প্রতিটি পুরষ নারীদের জন্য একেকজন অভিভাবক। যারা তাদের অধীনস্ত নারীদের প্রয়োজন মেটাবে, তাদের  বুঝবে, তাদের সহযোগিতা করবে এবং তাদের সামগ্রিক বিষয়ে পরিচালনা করবে। একইভাবে, নারীদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের স্বামী এবং তার ঘর সামলে রাখা, সন্তানসন্ততির লালন পালন করা এবং স্বামীর কাজে সহযোগিতা করা।

এখন, বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যেমন নর-নারীর ভিন্নতা আছে তেমনি শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রেও তাদের ভিন্নতা বিদ্যমান। নারী পুরষের সাধারাণ যোগাযোগ ও মেলামেশায় ইসলামে কোনো বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু বিশেষ সম্পর্ক ও মেলামেশার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ রয়েছে।

ভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতির মানুষের মাঝে যদি পারস্পারিক সদ্ভাব ও আচরণ বজায় থাকে তবে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গঠনে ইসলাম মানুষকে উৎসাহিত করেছে।

উপরে বর্ণিত পন্থায় পারস্পারিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে শারীরিক মেলামেশায় অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একজন পুরুষ কোনো গাইরে মাহরামকে তথা যাদের সঙ্গে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তাকে কোনো অবস্থাতেই স্পর্শ করতে পারে না।

খুব প্রয়োজনে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষকে যোগাযোগ করতে হয় তবে তার বিধান হচ্ছে- নারীকে অবশ্যই যথোপযুক্ত পোশাক পরিধান করতে হবে এবং ইসলাম নির্ধারিত পন্থায় কথা বলতে হবে। আর কোনো অবস্থাতেই তৃতীয় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি ব্যতীত নির্জন স্থানে যেতে পারবে না।

দুইটি আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে নারী-পুরুষের যোগাযোগের বিধান বর্ণনা করেছেন:

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।’ (সূরা: নূর, আয়াত: ৩০)
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা: নূর, আয়াত: ৩১)
উপরের আয়াতদ্বয়ে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে নারীগণ প্রয়োজনে বাহিরেও যেতে পারবেন এবং অন্যদের সঙ্গে কাজও করতে পারবেন। নারী পুরুষের যেকোনো ধরণের মেলামেশা যা মানব মনে কুমন্ত্রণার সৃষ্টি করতে পারে সেটাই হারাম।

এর মানে কিন্তু এই না যে, নারীগণ একই জায়গায় পুরুষদের সঙ্গে যেতে বা থাকতে পারবে না। ঐতিহাসিক  সূত্রগুলো সাক্ষ্য দেয় যে মসজিদ এমনকি বাজারেও নারীগণ পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করেছেন। মসজিদে নারীগণ পুরুষদের পেছনের কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন। যদি উপরে বর্ণিত শর্ত মেনে চলা হয় তবে মেয়েরাও ছেলেদের সঙ্গে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে। সামাজিক মিলনকেন্দ্রগুলোতে নারীদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন তাদের কোনো আচরণ তাদের মেলামেশাকে রোম্যান্টিক সম্পর্কের দিকে না নিয়ে যায়।

নিচের এ আয়াতদ্বয়ে নারী পুরুষের যোগাযোগের পদ্ধতি কেমন হবে সে বিষয়ে বলে দেয়া হয়েছে:

وَلَمَّا وَرَدَ مَاء مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ أُمَّةً مِّنَ النَّاسِ يَسْقُونَ وَوَجَدَ مِن دُونِهِمُ امْرَأتَيْنِ تَذُودَانِ قَالَ مَا خَطْبُكُمَا قَالَتَا لَا نَسْقِي حَتَّى يُصْدِرَ الرِّعَاء وَأَبُونَا شَيْخٌ كَبِيرٌ
‘যখন তিনি মাদইয়ানের কূপের ধারে পৌছলেন, তখন কূপের কাছে একদল লোককে পেলেন তারা জন্তুদেরকে পানি পান করানোর কাজে রত। এবং তাদের পশ্চাতে দু’জন স্ত্রীলোককে দেখলেন তারা তাদের জন্তুদেরকে আগলিয়ে রাখছে। তিনি বললেন, তোমাদের কী ব্যাপার? তারা বলল, আমরা আমাদের জন্তুদেরকে পানি পান করাতে পারি না, যে পর্যন্ত রাখালরা তাদের জন্তুদেরকে নিয়ে সরে না যায়। আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ।’ (সূরা: ক্বাসাস, আয়াত: ২৩)
فَسَقَى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّى إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
‘অতঃপর মূসা তাদের জন্তুদেরকে পানি পান করালেন। অতঃপর তিনি ছায়ার দিকে সরে গেলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাজিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী।’ (সূরা: ক্বাসাস, আয়াত: ২৪)
তাই যদি আমরা নারী পুরুষের একত্রে চলাফেরা বন্ধ করে দেই তবে আমাদের জীবন পরিচালনা খুব কষ্টকর হয়ে যাবে। উন্মুক্ত পরিবেশে সাধারণত অন্যকোনো কুমন্ত্রণার সুযোগ থাকে না। তথাপি যদি উপরে বর্ণিত পন্থা মেনে চলা হয় তবে নারী-পুরুষ পারস্পারিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে পারবে।

আপনার বন্ধুর ব্যাপারে যা বলেছেন, আপনি তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন যে ইসলামে বান্ধবী গ্রহণের কোনো ধারণা নেই। বন্ধুত্ব অবশ্যই কাজ, লেখাপড়া ও পারিবারিক গণ্ডির মাঝেই সীমাবদ্ধ হওয়া উচিৎ। যৌন উদ্দীপনা একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয় যা সব মানুষের মাঝেই রয়েছে। শুধুমাত্র ইসলামেই এ বিষয়ে বিবাহের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করার ব্যবস্থা রয়েছে।