• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৮ অক্টোবর, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

দেশে নতুন দরিদ্র বেড়েছে দেড় কোটির বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার কারণে সারা বিশ্বে ১০ কোটির বেশি মানুষ নতুন করে হতদরিদ্রের কাতারে নেমে গেছে। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশেও দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম ওলট পালট করে দিয়েছে করোনা মহামারী। গবেষণা সংস্থা পিপিআরসির জরিপ বলছে, প্রতি বছর যেখানে ১ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হতো, সেখানে করোনার কারণে এখন বছরে ৪ শতাংশ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হচ্ছে।
 
করোনায় দেশের কর্মসংস্থানের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসেব বলছে, অর্থনীতিতে শ্লথগতি দেখা দেয়ায় দেড় কোটির বেশি মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে। এদিকে, পরিকল্পনামন্ত্রী বলছেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

অর্থনীতিবিদ মঞ্জুর হোসেইন বলছেন, "করোনাকালে দারিদ্র্যের হার দ্রুত বাড়ার মূল কারণ, আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষের কর্মহীনতা। এ অবস্থায় সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধির আহ্বান তাদের"।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রতিবছরই বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াচ্ছে সরকার। করোনার কারণে এটি আরও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের হার মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

যা গত অর্থবছর ছিল ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে চলতি অর্থবছর সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের বরাদ্দ এক লাখ সাত হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। এ অর্থ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

গত অর্থবছর এ হার ছিল ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নগর দরিদ্রদের প্রতি নজর না দেয়ায় সমস্যা রয়ে গেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সারা দেশে ১২০টির মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এখন চলমান; কিন্তু এগুলোর সবই গ্রামীণ দরিদ্রদের লক্ষ্য করে নেয়া।
 
এবিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, " আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি। গ্রামীণ পর্যায়ে আমরা বাঁধ, সড়ক, সেতু ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে"।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, করোনায় সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে নগর দরিদ্ররা। অথচ, এ বছর সরকারের ১২০টির বেশি কর্মসূচির মধ্যে মাত্র ১০টিতে আছে তারা।

এই কর্মসূচিগুলোও বাস্তবে খুব একটা কার্যকর নয়। কেননা এগুলো বাস্তবায়নের মতো ভালো কোনো কাঠামো নেই। এ কারণে করোনাকালে প্রকৃত সুবিধাভোগীর কাছে সহায়তা পৌঁছানো যায়নি।

শহরাঞ্চলে করোনার চিকিৎসা নিয়ে কী ধরনের দুর্দশায় পড়তে হয়েছে, সেটি মানুষ হয়তো কখনো ভুলবে না। পত্রিকান্তরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের বড় দুই শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামে বলার মতো কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেই।

অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা। শহরাঞ্চলে নিরাপত্তা কর্মসূচির যে কথা বলা হয়, সেটিও আসলে পৌরসভা পর্যন্ত। অর্থাৎ নগরকেন্দ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি তেমন নেই।
 
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের ফলাফলে বলা হয়, করোনায় গ্রামের তুলনায় শহরে নতুন দরিদ্রের হার ছিল বেশি।

করোনাকালে নগরের অনেক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় নেমে আসে। অনেকে অতি দরিদ্রে পরিণত হয়। করোনার আঘাতে সার্বিকভাবে দেশে নতুন করে যে আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে তার বৃহদংশই নগরবাসী। কিন্তু সরকারের কার্যক্রমে নগর দারিদ্র্যের বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে নতুন করে হতদরিদ্রের কাতারে নেমে গেছে বিশ্বের ১০ কোটির বেশি মানুষ। এর ৮০ শতাংশই বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশের নাগরিক। তার মানে, বাংলাদেশসহ অন্যান্য মধ্যম আয়ের দেশের মোট আট কোটি মানুষ হতদরিদ্র হয়ে পড়েছে।