• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৮ অক্টোবর, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

এবারও হচ্ছে না লালন মেলা, হতাশ ভক্তরা

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

১১৬ বছর বেঁচে ছিলেন মরমী সাধক ফকির লালন সাঁই। মৃত্যু হয়েছে ১৩১ বছর আগে।

এই দীর্ঘ সময়েও বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাননি। বরং বেড়েছে তার সৃষ্টির ঔজ্জ্বল্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এক ঐন্দ্রজালিক মোহময়তা বিস্তার করে চলেছেন তিনি। দিনদিন বাড়ছে তার ঐন্দ্রজালিক বলয়ের বিস্তৃতি। অগণিত মানুষ তার সৃষ্টি জগতে প্রবেশ করে সন্ধান করছেন আধ্যাত্মিক ভাবধারার।
 
রোববার (১৭ অক্টোবর) অর্থাৎ ১ কার্তিক, এই মরমী সাধকের ১৩১তম তিরোধান দিবস। এ দিনে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে হাজারও ভক্ত, অনুরাগী আর দর্শনার্থী ছুটে আসেন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায়, লালনের আখড়াবাড়িতে। প্রতি বছর এ সময় কালিন্দী নদীর ধারে লালন ভক্ত-সাধকদের মিলনমেলা বসে। হয় সাধুসঙ্গ, বাউল গান ও লালন মেলা। তবে এ বছরও করোনা সংক্রমণ রোধে হচ্ছে না সেই অনুষ্ঠান।

স্থানীয় প্রশাসন মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে জারি করা এ বিষয়ে আগের নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে। নিষেধাজ্ঞা প্রথম জারি করা হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে লালনের ১৩০তম তিরোধান দিবসে। এরপর এ বছরের ২৮ মার্চ (১৪ চৈত্র) লালনের জন্মদিন ও দোল উৎসবের অনুষ্ঠানও বন্ধ ছিল।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে এখনো গণজমায়েতের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ বহাল রয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক এক সংবাদ সম্মেলন করেন লালন একাডেমিতে। তিনি জানান, এর আগে ৭ অক্টোবর লালন একাডেমির কার্যকরী পরিষদের সভায় করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ দিবস পালন না করার বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
 
লালন একাডেমি হলো লালন মাজার ও এর সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার একটি নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান, যেখানে স্থানীয় জেলা প্রশাসক পদাধিকারবলে সভাপতি থাকেন। বর্তমানে এ কমিটির নির্বাচন না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি অ্যাডহক বডি কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, লালনের আখড়ায় যেকোনো অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা বাউল ভক্ত, অনুরাগী, গবেষক ও সাধারণ দর্শকসহ চার-পাঁচ লাখ লোকের সমাগম হয়ে থাকে। বর্তমান পরিস্থিতি এত বিশাল সমাগম ধারণ করার অনুকূলে নয়।

তারপরেও ভক্ত, অনুসারীরা অনেকে ভক্তি আর অনুরাগের টানে ছুটে গেছেন সেখানে। উপস্থিত হয়েছেন লালন সাঁইজীর মাজারে।

তবে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সুপারিশ ও লালন একাডেমির সিদ্ধান্তে তিরোধান দিবসের সব অনুষ্ঠান স্থগিত করায় হতাশ লালন ভক্ত ও অনুসারীরা। এ অনুষ্ঠান ঘিরে তারা আগেই ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজির ধামে অবস্থান নিয়েছিলেন। ভক্তানুরাগীরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত সাধুসঙ্গের অনুমতি দেওয়া উচিত কর্তৃপক্ষের।

দৌলতপুর থেকে আসা লালন অনুসারী ফকির আমান শাহ বলেন, ‘করোনার কারণে এবারও লালন সাঁইজির স্মরণোৎসব বন্ধ। করোনার জন্য তো কোনো কিছু থেমে নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই না হয় আমরা অনুষ্ঠানটি করতাম। বছরে দুই বার আমরা সাঁইজির ধামে এসে আমাদের আত্মার শুদ্ধি করি। বাউল  সাধকদের কথা শুনি। তাও বন্ধ হয়ে গেছে। ’
 
ফকির ইদবার আলী বলেন, ‘ছোট আয়োজনে হলেও সাধুসঙ্গ করা যেত। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। তারা তো জানে না স্মরণোৎসব বন্ধ করা হবে। এখন অশ্রুজলে ফিরে যেতে হচ্ছে সবাইকে।’

লালন মাজারের খেলাফতধারী বাউল ফকির আলাউদ্দিন শাহ মনে করেন লালনের মাজারের বা বাউল দর্শনের সঙ্গে মেলার কোনো সম্পর্ক নেই। মাজার হলো বাউলদের সাধন-ভজনের জায়গা। মেলা হলো সাধারণের পণ্য কেনা-বেচার জায়গা। সেক্ষেত্রে লোক সমাগমের আশঙ্কায় মেলা করা যাচ্ছে না বলে বাউলদের মাজারে প্রবেশ বন্ধ করে দিতে হবে এটা ঠিক হচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, বাউল ফকিরদের সংখ্যাও কয়েক হাজার। সবার মাজারে প্রবেশ অনুমোদন করলে সেটাও হবে বড় ধরনের জমায়েত। এটা মাথায় রাখতে হচ্ছে বলেই মাজার বন্ধের সিদ্ধান্ত চলে আসছে।