• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৪ অক্টোবর, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন : তিনজনই 'ভবঘুরে'

সমকাল

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় অনেকের মধ্যে দুটি 'চরিত্র' নানাভাবে আলোচনায় এসেছে। প্রথমটি- মূল সন্দেহভাজন ইকবাল হোসেন। আরেকজন হলেন- রেজাউল ইসলাম ইকরাম, যিনি '৯৯৯'- এ ফোন করে পুলিশ ডেকেছিলেন। এর বাইরে আরেকজনের খোঁজ মিলেছে। তিনি হলেন নানুয়ারদীঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপের নিরাপত্তারক্ষী মো. শাহিন। তিনিও এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। হামলার ঘটনায় তারা তিনজনই সন্দেহের তালিকায়। দুটি বিষয়ে তাদের তিনজনের মধ্যে মিলও রয়েছে। তা হলো- এলাকাবাসী ও স্বজনের চোখে ইকবাল, ইকরাম ও শাহিন তিনজনই 'ভবঘুরে'। পাশাপাশি তিনজনই একই ধরনের নেশায় রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। ট্র্যাপেন্টা নামের এক ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ নেশা হিসেবে সেবন করতেন তিনজনই। পাশাপাশি তারা গাঁজায় আসক্ত ছিলেন।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানুয়ারদীঘির পাড়ে অস্থায়ী পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে মো. শাহিনকে নিযুক্ত করা হয়। তার সঙ্গে চুক্তি ছিল দিনে তিনশ টাকা পাবেন। তার কর্মকাল হবে পূজার ৭ দিন। ইকবাল যখন মন্দিরে কোরআন রাখতে যান তখন শাহিন ঘুমিয়ে ছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন। তার ভাষ্য, ট্র্যাপেন্টা ও এক ধরনের ঘুমের ওষুধ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে নেশা হিসেবে খেয়ে ঘুম দেন তিনি।

মন্দিরের নিরাপত্তারক্ষীর তরফ থেকে এমন বক্তব্য পাওয়ার পর সংশ্নিষ্টরা বলছেন, যদি নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে শাহিন তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেন, তাহলে হয়তো ইকবাল ঢোকার সাহস করতেন না। তাই এ ধরনের পাঁড় নেশাগ্রস্ত কাউকে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া ঠিক হয়নি। তবে এই পরিকল্পনায় শাহিন সম্পৃক্ত কিনা সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

উচ্চপদস্থ আরেক কর্মকর্তা জানান, মন্দিরে কোরআন রাখার পর কুমিল্লায় ইকবালকে খালি গায়েও ঘুরতে দেখা গেছে। তখন কেবল তার পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট। পরে যখন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে তিনি গ্রেপ্তার হন ইকবালের পরনে ছিল শার্ট, গলায় পুঁতির মালা ও চোখে কালো চশমা। কোন জায়গা থেকে ইকবাল এসব সংগ্রহ করলেন তাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

তিনি জানান, বিভিন্ন সময় ইকবাল নেশার টাকা জোগাতে ম্যানহোল চুরি করে বিক্রি করেছেন। তবে চুরি বা অন্য কোনো অপরাধের ঘটনায় কখনও তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়নি। এসব বিষয়ও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।

কুমিল্লা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল বলেন, আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন আছে, যার উত্তর এখনও পাইনি। ঘটনার রাত ৩টার দিকে কেন নানুয়ারদীঘির পাড়ে হঠাৎ দেড় ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ চলে গেল। এমনটা খুব একটা দেখা যায় না। ইকবালকে কারা ইন্ধন দিয়েছে- এটাও জানতে চাই। কোরআন শরিফটা ছিল নতুন। পুরো ঘটনা সাজানো- এটা নিশ্চিত। এর পেছনে কোনো না কোনো রাজনীতি আছে।

নানুয়ারদীঘির পাড়ে যে মন্দির ঘিরে ঘটনা সেটি পড়েছে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইমরান বাচ্চু বলেন, ওসির ফোনের পর ঘটনার দিন সকাল সোয়া ৮টার দিকে নানুয়াদীঘির পাড়ে যাই। সেখানে ৭-৮ জনকে দেখি। ইকরাম নামে এক যুবক কোরআন শরিফ উদ্ধারের ঘটনার ভিডিও করতে থাকেন। আরেকজনকে রাস্তার উল্টো পাশে দাঁড়িয়ে ভিডিও করতে দেখি। পরে জানতে পারি তার নাম মনির। একজন নিজেকে শাহিন বলে পরিচয় দিয়ে বলতে থাকেন তিনি নাকি ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশ ডেকেছেন। যারা তখন উপস্থিত ছিল তাদের উত্তেজনার প্রশমনের চেষ্টা করতে থাকি। সকাল ১০টার দিকে ডিসি ও এসপি ঘটনাস্থলে আসেন।

কুমিল্লার ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ইকবাল নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগরসংলগ্ন দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুর পাড় এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা নুর আহমেদ আলম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ইকবাল বড়। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ আহমেদ সোহেলের সঙ্গে ইকবাল ও তার পরিবারের সখ্য রয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সৈয়দ আহমেদ বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে মুচির সঙ্গেও আমার সখ্য। এখন পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের চারশ সেলাই মেশিন ও ৭২টি রিকশা দিয়েছি। যখনই কেউ আপদে-বিপদে পড়েছেন তার পাশে দাঁড়াই। ইকবালের পরিবার হতদরিদ্র। এলাকায় সে 'পাগলা-ইকবাল' হিসেবে পরিচিত। নেশার টাকা না পেয়ে ইকবাল তার মাকেও মারধর করে। প্রকাশ্যে রাস্তায় বহুবার পাগলামি করতে দেখেছি। ২-৩ মাস মাজারে মাজারে থাকে। প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক কারা ইকবালকে ব্যবহার করেছে। নিশ্চয় এই পাগল একা এই কাজ করেনি। এ ঘটনায় ইকবালের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ত হওয়ার তথ্য কেউ প্রমাণ করতে পারলে যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব।

সৈয়দ আহমদ আরও বলেন, কুমিল্লায় ট্র্যাপেন্টাকে মাদক হিসেবে ব্যবহার যুব সমাজের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। একেকটা ট্যাবলেট প্রেসক্রিপশন ছাড়া ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করায় কয়েকটি ফার্মেসিতে তালা মেরে দিয়েছি।