• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৩১ অক্টোবর, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন চান আ'লীগের মাঠকর্মীরা

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

বিএনপি-বিহীন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়াতে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক চান না অনেক এমপি-মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। এ জন্য তারা দলীয় সভানেত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। তারা চান এখন থেকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনগুলো মাদারীপুর-শরীয়তপুর জেলার মতো নৌকা প্রতীক ছাড়াই হোক। এতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় নেতাদের বহিষ্কার করে ‘কর্মী-সমর্থকও’ হারাতে হবে না। আর যেসব জায়গায় মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক আছে, এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা আছে, সেখানেও দলের বড় একটা অংশ চায় উন্মুক্ত ভোট হোক। তাহলে এমপি-মন্ত্রীদের বলয়ভেদ করে সঠিক প্রার্র্থী নির্বাচিত করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী এবং মনোনয়ন বোর্ড প্রধান শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই চূড়ান্ত। ইতিমধ্যে দুটি জেলায় প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে সব জায়গায় উন্মুক্ত করা হলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দলীয় হানাহানি কমে যাবে। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের ভিতরে বিভেদ সৃষ্টি বা এলাকার জনপ্রিয় নেতা-কর্মীদের অভিমান করে দলত্যাগ অথবা বহিষ্কার করা ঠিক হবে না। ঐক্য ধরে রেখে আমাদের নির্বাচনী সুফল ঘরে তুলতে হবে।’  

দলীয় সূত্রমতে, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ অন্তত পাঁচ জেলার ১২ থেকে ১৫ জন সংসদ সদস্য দলের প্রধান ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেছেন। তাদের যুক্তি, এসব জেলায় ইউপি নির্বাচনে যে-ই প্রার্থী হোক না কেন আওয়ামী লীগই জিতবে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত এলাকার অধিকাংশ এমপিই চান না দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, এসব এলাকায় বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি নেই, নির্বাচন করার মতো জনপ্রিয় প্রার্থীর সংকট আছে। আর একটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কমপক্ষে অর্ধডজন থেকে দেড় ডজন প্রার্থী রয়েছে। একটি পদে একজনকে মূল্যায়ন করা যায়। তখন অন্যরা স্থানীয় এমপি-উপজেলা-জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকে দোষারোপ করেন। ফলে তাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সে কারণে নৌকা না থাকলে যে জনপ্রিয় সেই নির্বাচিত হবেন। অন্যদিকে দলের নেতা-কর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এতে জাতীয় নির্বাচনেও সুফল পাওয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি প্রকৌশলী তানভির শাকিল জয় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এলাকায় মতভেদ  তৈরি হচ্ছে। কারণ একাধিক যোগ্য প্রার্থী। একজনকে বেছে নেওয়া কঠিন কাজ। সবাই দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মী। যারা নৌকা না পেয়ে বিদ্রোহী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়। ফলে আমরা কর্মী ও সমর্থক হারিয়ে ফেলব। যেসব জায়গা নৌকার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সেখানে উন্মুক্ত করে দেওয়াই উচিত হবে।’

এদিকে অনেক এলাকায় প্রার্থী মনোনয়নে স্থানীয় এমপি ও জেলার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, নানা অনিয়ম করে প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক জায়গায় দুর্নীতিবাজ, বিতর্কিত ব্যক্তিকে পুনরায় চেয়ারম্যান প্রার্থী করায় স্থানীয়দের চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন অনেকে। ফেনীর পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নে নুরুজ্জামানকে নৌকা না দিতে কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছিল ভারতীয় নাগরিককে তার ইউনিয়নে ভোটার করা, জামায়াত-শিবিরকে পৃষ্ঠপোষকতা করার। কিন্তু সে অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। পুনরায় নৌকা দেওয়া হয়েছে তাকে। সে কারণে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের চাপের মুখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উপজেলা নির্বাচন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন এ ইউনিয়নেরই সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আলী আকবার ভুইয়া। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে আছি। প্রত্যাশা ছিল নৌকা পাব। কিন্তু হয়নি। তাই নেতা-কর্মীদের চাপে বাধ্য হয়েছি নির্বাচনে অংশ নিতে। ’

এ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জেলা যুবলীগের নেতা ফখরুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকা ছাড়াই ভোট হচ্ছে। এখানেও নৌকা ছাড়া ভোট হোক। কে জনপ্রিয় তা প্রমাণ হোক। তিনি বলেন, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন, তাদের এবং পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’ ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক জেলা-উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার আবেদন জমা পড়ছে। তবে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। আজ রবিবার ১৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে ফেরার পর ১৯ নভেম্বর দলীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন তিনি। সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে দলীয় সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন-আমরা সেটাই বাস্তবায়ন করব। এখন দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে, সে জন্য দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করছি। বিদ্রোহী প্রার্থী যেন মাঠে না থাকে সে জন্য তাদের বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাদের দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এ কোন্দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছি। তাই নেত্রীর কাছে জোরালো দাবি করছি, চেয়ারম্যান পদে উন্মুক্ত প্রতিদ্বন্দি¦তা করার সুযোগ করে দেওয়া হোক। এতে দলেরই উপকার হবে।’