• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

পোল্ট্রি বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পানি-পরিবেশ

ইকবাল হোসেন

পোল্ট্রির বর্জে দূষিত হচ্ছে খালের পানি, দূর্ঘন্ধে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বর্জ যুক্ত পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে অর্ধশত বিঘা জমির উর্বরতা। খালের পানি দূষণের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ৬’শ বিঘা জমিতে বোর ধান চাষ। পরিবেশ দূষণের এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের বাউনী গ্রামের প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড নামক পোল্ট্রি ফার্মে’র আশপাশ এলাকায়। বারবার এলাকাবাসির অভিযোগে তদন্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে নেয়া হয় না ব্যবস্থা। ক্ষোব্ধ হয়ে উঠছে এলাকার মানুষ।

শনিবার বিকেলে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দল সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসির অভিযোগ তদন্ত করে।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৮/১০ বছর আগে মুরগী পালনের নাম করে ফার্মের যাত্রা শুরু হয়। ক্রমেই এলাকাবাসির কাছে কর্তৃপক্ষের আসলরূপ প্রকাশ পায়। ফার্মের আকার সম্প্রসারণ করে শুরু করে মুরগী পুরানো, জৈব সার উৎপাদন। খামারের বর্জ ও দূষিত পানি কোন প্রকার পরিশোধন না করেই ফেলা হয় খালে। মুরগী পুরানোর জন্য ব্যবহার করা হয় না কোন চিমনি। এলাকাবাসির অভিযোগ উন্মোক্ত ভাবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন না করে মুরগী পুরানোর কারণে দূষিত ধূঁয়া ও দূর্ঘন্ধে আশপাশ এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ।

ফার্মের দূষিত পানি ও বিষাক্ত বর্জ কোন প্রকার পরিশোধন না করেই ফেলা হচ্ছে খালে। ফলে পারুলী নদীর শাখা বাউনী গ্রামের শেড়ার খালের পানি সম্পূর্ণ ভাবে দূষিত হয়ে গেছে। মরে গেছে খালের মাছ, পোকা মাকর, জলজ প্রাণী।

স্থানীয় কৃষক আ: হালিম, হারুন মিয়া, রেয়াজ উদ্দিন, মুমিন ও আব্দুল হক উরফে হক্কে জানান, ফার্মের বর্জ ও দূষিত পানি নিষ্কাষণের কোন ড্রেন নাই। দূষিত পানি ধানের জমির উপর প্রবাহিত হয়। এতে প্রায় অর্ধ শত বিঘা জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গেছে। এসব জমিতে ধান রোপন করলে শুধু ধানের গাছ হয়। ধানের শিষ বের হলেও তাতে কোন  চাল হয় না।

ভোক্ত ভোগী কৃষক হেলাল উদ্দিন, আলতাফ, জাহাঙ্গীর হোসেন, সবুর মিয়া সহ গ্রাম বাসিরা জানান, দীর্ঘ দিন যাবৎ এ ফার্মের দূষণের শিকার হচ্ছেন তার। কতৃপক্ষের সাথে যাগাযোগ করেও কোন প্রতিকার হয়না। ফার্মের বর্জ ও দূষিত পানি ফেলা হয় শেড়ার খালে। খালের পানিতে সেচ দিয়ে বাউনী, চাওবন, ডোয়াইবাড়ি গ্রামের কৃষকরা প্রায়  ৬’শ বিঘা জমিতে বোর ধান চাষ করতো। খালের পানি দূষিত হওয়ায় এখন ৬’শবিঘা জমিতে ধানচাষ বন্ধ রয়েছে।

গ্রামবাসিরা আরও জানায়, বারবার তার এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তদন্তও আসে। পরে এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এতে করে চার পাশের ভোক্ত ভোগী মানুষ ক্রমেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে।

প্যারাগন পোল্ট্রি এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক মো: আসাদুজ্জামান এলাকাবাসির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ফার্মের বর্জ ও পানি সরাসরি খালে ফেলা হয় না। ফার্মের ভিতরে পুকুর রয়েছে । ওই পুকুরে পানি ফেলা হয়। কিছু পানি লিকেজ দিয়ে বের হয়ে খালে পরে। পানিতে নিয়মিত ঔষধ ও চুন দেয়া হয়। জৈব সার উৎপাদনের কারণে কিছু গন্ধ হয়। খুব দ্রæতই আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করা হবে।

শনিবার (২৫ডিসেম্বর) বিকেলে পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের মনিটরিং এন্ড এনফোসর্মেন্ট উইং এর উপ-পরিচালক সৈয়দ আহাম্মদ কবিরের নেতৃত্বে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের রিচার্জ অফিসার মো: আশরাফ উদ্দিন, সহকারী পরিচালক মো: মমিন ভূইয়াসহ কর্মকর্তাগণ সরেজমিনে এলাকাবাসির অভিযোগ তদন্ত করেন।

তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপ-পরিচালক সৈয়দ আহামদ কবির জানান, এলাকাবাসির অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। কিছু অশংগতি আছে। তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।