• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৪ জানুয়ারী, ২০২২ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

প্রবাসী পরিবারকে গভীর রাতে বাড়ি থেকে বিতাড়িত

সালাহ উদ্দিন সুমন, নোয়াখালী

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভায় গভীর রাতে এক ইতালী প্রবাসীর বাড়িতে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানী এবং স্বর্ণালংকার লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এসময় সন্ত্রাসীরা প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বাড়ির গেইটে আটকিয়ে দেয়।

সোমবার (০৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে পৌরসভার গণিপুর গ্রামের প্রবাসী আবুল খায়েরের বসত বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

প্রবাসী আবুল খায়েরের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী জীবিকার তাড়নায় ইতালীতে অবস্থান করছেন। প্রবাসে অবস্থানকালে সরল মনে বিশ্বাস করে আমার স্বামী তার বড় ভাই হাকিম আলীর মাধ্যমে দেশে টাকা-পয়সা লেন-দেন করতো। 

হাকিম আলী আমার স্বামীর বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তার পাঠানো টাকায় নিজের নামে এবং বেনামে সম্পত্তি খরিদ করতে থাকেন। বড় ভাইয়ের এসব অপকর্ম টের পেয়ে তাকে টাকা-পয়সা ও জমি-জমার বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে হাকিম আলী সঠিক কোন জবাব দিতে পারেনি।

প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা বলেন, পরবর্তীতে হাকিম আলী আমার স্বামীর টাকায় খরিদ করা তার নামীয় কিছু সম্পত্তি আমার স্বামীর নামে লিখে দেয়, যা সে সহজে মেনে নিতে পারেনি। এতে হাকিম আলী এবং তার ছেলেরা আমি ও আমার স্বজনদের উপর হিংস্র হয়ে উঠে। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে হাকিম আলী এবং তার ছেলেরা পূর্ব শত্রুতার জেরে আমার বসত ঘরে হামলা চালায়। এসময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। 

ফাতেমা বলেন, সোমবার রাতে প্রতিদিনের মতো খাওয়া-দাওয়া শেষে শিশু সন্তানদের নিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাত পৌনে ৩টার দিকে হাকিম আলীর ছেলে হাসান আলী ও হাসিফ আলী সঙ্গবদ্ধ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আমার বসত ঘরে হামলা চালিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। এসময় সন্ত্রাসীরা গালমন্দ করে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি ও আমার শিশু সন্তানদের মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমাদেরকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। 

ফাতেমা আক্তার বলেন, পরবর্তীতে আমি শিশু সন্তানদের নিয়ে অসহায় অবস্থায় প্রতিবেশী রুনা আক্তারের বাসায় আশ্রয় নিয়ে ৯৯৯-এ ফোন করলে এসআই খুরশিদসহ আরো একজন পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আমার বসত ঘরে তালাবদ্ধ দেখতে পায়। এসময় সন্ত্রাসীদের ঘটনাস্থলে না পেয়ে আমাকে প্রতিবেশীর বাসায় আশ্রয়ে থেকে থানায় অভিযোগ দেয়ার জন্য পরামর্শ দেয় পুলিশ।

পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার কিছুক্ষণ পর পুণরায় হাকিম আলীর নেতেৃত্বে সঙ্গবদ্ধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আমার বসত বাড়ির সামনে টহল দিতে থাকলে আমি আতঙ্কিত হয়ে পুণরায় বেগমগঞ্জ পুলিশ ফাড়িতে কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে সন্ত্রাসীরা গা-ঢাকা দেয়। 

সন্ত্রাসীদের হাতে অবরুদ্ধ থাকা আমার বাসায় স্বর্ণালংকার, টাকা, মুল্যবান কাগজপত্র ও ঘরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থাকায় আমি আমার শিশুসন্তানসহ বাসার মেইন গেইটের পাশে বসে পাহারা দিতে থাকি। এসময় হাকিম আলীর ছেলে হাসান আমাকে এলোপাতাড়ী চড় থাপ্পর মেরে শরীরের কাপড়-চোপড় টানা হেচড়া করে আমার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়া শ্লীলতাহানী করে।

এতে আমার শিশু সন্তান সামিয়া চিৎকার করলে তারা আমার সন্তানকে গলা চিপে হত্যার চেষ্টা করে। আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা আমার বসত বাড়ির সামনে ককলেট ফাটিয়ে বসত ঘরে থাকা টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ জমি-জমার যাবতীয় দলিলাদি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লুট-পাট করে নিয়ে যায়। এসময় আমি চিৎকার করে ঘরে ঢুকলে হাসিফ আলী আমার গলা চেপে ধরে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে প্রতিবেশীরা আমি এবং আমার শিশু সন্তানদের উদ্ধার করে তাদের কাছে আশ্রয় দেয়।

বর্তমানে প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা আক্তার চরম নিরাপত্তাহীনতায় দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ির বাহিরে অবস্থান করছেন। এ ঘটনায় নোয়াখালীর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা আক্তার।

চৌমুহনী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনায়েত উল্যা চৌধুরী রানা জানান, জমি নিয়ে প্রবাসী আবুল খায়েরের সাথে তার বড় ভাই হাকিম আলীর বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রবাস থেকে আবুল খায়ের আসার কথা রয়েছে।

তখন পৌরসভার পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধানের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত না মেনে গতকাল রাতে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক।

চৌমুহনী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিন জানান, ৯৯৯-এর ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এসময় ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রীকে থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগের আলোকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।