• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১২ মার্চ, ২০২২ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জ্বরের সিরাপ পান করে দুই শিশুর মৃত্যু

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সিরাপ পানের পর জ্বরে আক্রান্ত একই পরিবারের দুই শিশুর (সহোদর) মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো-মুরসালিন (৭) ও ইয়াসিন (৪)। তারা দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের নজপাড়ার ইসমাইল হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবারের সদস্যরা। পুরো গ্রামেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয়রা দোষীদের বিচার দাবি করেছেন।

শিশু দুটি বৃহস্পতিবার রাতে মারা যায়। শুক্রবার বিকালে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই শিশুর লাশ দেখতে নিজ গ্রাম ও আশপাশের গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। মুরসালিনের বাবা ইসমাঈল হোসেন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। আহাজারি করছেন। বলছেন, আমার ছেলেদের কাছে যেতে চাই। অচেতন হয়ে পড়ে আছেন মা নিলুফার বেগম। জ্ঞান ফেরাতে প্রতিবেশীরা তার মাথায় পানি ঢালছেন।

কথা হয় ইসমাঈল হোসেনের চাচি জাহানারা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বুধবার থেকে শিশু দুটি জ্বরে ভুগছিল। তাদের মা নিলুফার দুর্গাপুর চকবাজারের মা ফার্মেসি থেকে নাপা (প্যারাসিটামল) সিরাপ এনে ইয়াসিন ও মুরসালিনকে পান করায়। এরপর থেকে শিশু দুটির মুখ থেকে ফেনা বের হতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা নিস্তেজ হয়ে পড়লে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানকার চিকিৎসকরা তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। রাত ১০টায় সেখানে পৌঁছান তারা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি আসার পথে রাত ১১টার দিকে ইয়াসিন ও বাড়িতে আসার পর সাড়ে ১১টায় মুরসালিন মারা যায়।

শিশু দুটির মৃত্যুর খবর পেয়ে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদ রহমান ঘটনাস্থলে যান। লাশ থানায় নিয়ে আসেন। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর শুক্রবার বেলা ১১টায় ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ময়নাতদন্ত শেষে শিশু দুটির লাশ বিকালে দুর্গাপুরে তাদের বাড়িতে আনা হয়। শুক্রবার বাদ এশা তাদের দাফন করা হয়।

আজাদ রহমান শুক্রবার বিকালে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নাপা সিরাপের বোতল জব্দ করেছি। নাপা বেক্সিমকো কোম্পানির সিরাপ। মেয়াদ ২০২৩ পর্যন্ত। বোতলে সিরাপ ছিল না কি অন্য কিছু ছিল-তা বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করা ছাড়া বলা যাবে না। পরীক্ষার জন্য আমরা ল্যাবে পাঠাব। দোষী প্রমাণিত হলে ফার্মেসি মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।

আশুগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুপুর সাহা বলেন, ওই দুই শিশুকে সন্ধ্যার দিকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। প্রথমে তাদের অক্সিজেন দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছিল, বাচ্চাদের পেটে বিষক্রিয়া ছিল। স্টমাক ওয়াশের জন্য তাদের জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়, কারণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুদের স্টমাক ওয়াশ করার সুবিধা (যন্ত্রপাতি) নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ওয়াহিদ উজ্জামান বলেন, শিশু দুটির চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের টিকিট কাটা হয়েছিল। তবে তারা চিকিৎসা নেয়নি। আমার ধারণা, সম্ভবত তারা দালালের খপ্পরে পড়ে চিকিৎসা না নিয়েই হাসপাতাল ছেড়েছিল।

এদিকে শিশু দুটির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মা ফার্মেসির মালিক মাইন উদ্দিন আত্মগোপনে যান। শুক্রবার সারা দিন তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফার্মেসিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। মাইন উদ্দিনের বাড়ি তাজপুরে গিয়ে দেখা যায় ঘরে তালা ঝুলছে। মাহবুবুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, প্রায় ১৮-২০ বছর ধরে এই ফার্মেসি দিয়ে ঔষধ বিক্রি করে আসছে মাইন উদ্দিন।

ফার্মেসির পাশের চা দোকানদার মোমিন মিয়া বলেন, তার বাবা দারু মিয়ার ঔষধের দোকান ছিল দুর্গাপুর চকবাজারের ভিতরে। পরে মাইন উদ্দিন দুর্গাপুর সড়ক বাজারের পাশে নতুন করে ঔষধের দোকান দেয়। আশুগঞ্জ উপজেলা ড্রাগিস্ট অ্যান্ড ক্যামিস্ট ইউনিয়নের সভাপতি কেএম আহসান উল্লাহ জুয়েল বলেন, মাইন উদ্দিনের কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। আশুগঞ্জ উপজেলা ড্রাগিস্ট অ্যান্ড ক্যামিস্ট ইউনিয়নের সদস্যও নয় সে। সে কীভাবে ফার্মেসি দিয়ে ঔষধ বিক্রি করত তা আমার বোধগম্য নয়।