• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৭ মার্চ, ২০২২ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

সক্ষমতার চ্যালেঞ্জে এনপিআর প্রকল্প

খন্দকার মোঃ তারেক

বিশ্বের ১০০টি দেশে এরই মধ্যে চালু হওয়া এনপিআর প্রকল্প বাংলাদেশে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পুরো দেশকে সার্বিক তথ্যায়নের ছায়ায় নিয়ে আসা এবং প্রতিনিয়ত তথ্য-উপাত্তসমূহের আপডেটের সুবিধা সংবলিত এই প্রকল্প চালু করতে গিয়ে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন একদিন না একদিন বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হবেই বলে দৃঢ়প্রত্যয় জানিয়েছেন ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন।

সদ্য অবসরকালীন ছুটিতে যাওয়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এই যুগ্ম সচিব বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন বা সহজ টার্মে যেটি ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার, এনপিআরের উপযোগিতা, পটভূমি এবং এটির বাস্তবায়নে সম্ভাব্য কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার যাবতীয় কৌশল বর্ণনা সংবলিত একটি ধারণাপত্র তৈরি করে সরকারের বিভিন্ন মহলে সেটি উপস্থাপন করেছেন। নিয়মিতভাবে মুখোমুখি হচ্ছেন গণমাধ্যমের। ক্রাইম প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় ড. শাহাদাত বলেন, বিশ্বের ১০০টি দেশে এনপিআর চালু রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী, ১৩০ কোটিরও বেশি জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতে ২০১৩ সালে এনপিআর বাস্তবায়ন শুরু হয়। এরই মধ্যে পুরো ভারতে এটি চালু করা হয়েছে।

এনপিআরকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এটি ব্যক্তির বিস্তৃত তথ্যায়ন। জাতীয় পরিচয়পত্রে একজন মানুষ সম্পর্কে খুব কম তথ্য থাকে এবং এসব তথ্যের কোনো আপডেট করা হয় না। একইসঙ্গে ১৮ বছরের চেয়ে কমবয়সি কাউকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয় না। কিন্তু এনপিআরে এইমাত্র ভূমিষ্ঠ শিশু থেকে শতবর্ষী বৃদ্ধকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে এবং প্রাপ্ত তথ্য সবসময়ই আপডেট হতে থাকে। উদাহরণ দিতে গিয়ে শাহাদাত হোসেন নয়া শতাব্দীকে বলেন, মনে করুন- নব্বই বছর বয়সি একজনকে সকালে এনপিআরে ভুক্ত করা হলো। বিকেলে তিনি মারা গেলেন। সেক্ষেত্রে তার তথ্যায়নটিকে বদলে মৃত হিসেবে দেখানো হবে।

সহজভাবে বোঝার সুবিধার্থে বিষয়টির সাধারণ পরিচিতি হিসেবে ড. শাহাদাতের ধারণাপত্রের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো— ‘ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) বা জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার হলো একটি দেশের সাধারণ বাসিন্দা বা নিবাসীদের একটি রেজিস্টার। এটি সংশ্লিষ্ট দেশের নির্দিষ্ট আইনের বিধানের অধীনে উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রস্তুত করা হতে পারে। ৬ মাস বা এর অধিক সময় ধরে কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা এলাকায় বসবাস বা অবস্থান করছেন বা আগামী ৬ মাস অবস্থান করবেন এমন কোনো ব্যক্তিকেই নিবাসী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং এনপিআর-এ তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

‘এনপিআরের উদ্দেশ্য হলো— দেশের সব নিবাসী জনগোষ্ঠীর জনতাত্ত্বিক ও বায়োমেট্রিক বিবরণ উল্লেখপূর্বক একটি বিস্তৃত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিচিতি তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা যার মাধ্যমে প্রত্যেক নিবাসীকে স্বতন্ত্রভাবে শনাক্ত করা সম্ভব।’

ন্যাশনাল আইডিতে ১৮-ঊর্ধ্ব বয়সি একজন ব্যক্তির নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ, জন্মস্থান এবং কার্ড ইস্যুর তারিখ দেয়া থাকে। আর এনপিআর তথ্যায়নে থাকবে ব্যক্তির নাম, পরিবারের প্রধানের সঙ্গে সম্পর্ক, বাবার নাম, মায়ের নাম, স্ত্রী বা স্বামীর নাম, লিঙ্গ, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, বৈবাহিক অবস্থা, জাতীয়তা, বর্তমান ঠিকানা বা সচরাচর বসবাসের স্থান, বর্তমান ঠিকানায় থাকার সময়কাল, স্থায়ী ঠিকানা, পেশা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ। এনপিআরে অন্তর্ভুক্তির জন্য যে ৪টি বায়োমেট্রিক বিবরণ প্রয়োজন সেগুলো হলো হাতের ১০ আঙুলের ছাপ, ছবি বা মুখাবয়ব পরিচিতি, দুই চোখের আইরিশ প্রিন্ট ও ডিএনএ।

এনপিআর তথ্যভান্ডারের রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে হবে জানতে চাইলে ড. শাহাদাত ক্রাইম প্রতিদিনকে বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ডাটাবেসের ক্রমাগত আপডেটের একটি প্রক্রিয়া প্রণয়ন করা হবে। এনপিআর পরিচালনা করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটা সেন্টার স্থাপন করা হবে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ও এনপিআর-এ অন্তর্ভুক্তকরণ, আগমন-বহির্গমন, মাইগ্রেশন ইত্যাদি আপডেট, প্রয়োজন হলে নামে পরিবর্তন ইত্যাদির জন্য একটি সমন্বিত সিস্টেম স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হবে। এই উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট সব তথ্য ভান্ডারকে সংযুক্ত করে একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে।

একজন ব্যক্তিকে এনপিআরের জন্য নিবন্ধিত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনা এবং ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডাটাবেজ (এনএইচডি)-এ অন্তর্ভুক্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এনপিআর কার্যক্রম শুরু করা হবে। এর সঙ্গে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, এনআইডি, পাসপোর্ট, আগমন-বহির্গমন ইত্যাদি তথ্যভান্ডার সংযুক্ত করা হবে। অতঃপর তথ্য-উপাত্তের শূন্যতা নিরূপণপূর্বক ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে প্রতিটি খানা পরিদর্শনের মাধ্যমে সব নিবাসীর তথ্য বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করানো হবে এবং একটি স্বতন্ত্র শনাক্তকরণ নম্বর প্রদান করা হবে। শনাক্তকরণ নম্বরের বিপরীতে প্রত্যেকের মুখাবয়বের ছবি, দশটি (১০) আঙুলের ছাপ, দু’চোখের আইরিশ স্ক্যান এবং ডিএনএ তথ্য এনপিআরে যুক্ত করা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুমোদিত সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতিতে তালিকাভুক্তি সম্পন্ন করা হবে।

এনপিআর চালু হলে কোন কোন ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যাবে তা সহজেই অনুমেয়। তবুও ড. শাহাদাতের বিবরণটি এক্ষেত্রে উপযোগী। ক্রাইম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে সরকার জনগণ সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য পেতে চায়। এতে নিজস্ব নাগরিকদের শনাক্ত করা সহজ হয়। একটি স্মার্ট সরকারের অবশ্যই প্রয়োজনীয় জনতাত্ত্বিকসহ নিবাসীদের একটি বিস্তৃত পরিচিতি তথ্যভান্ডার থাকতে হবে। এমন তথ্যভান্ডার সরকারকে আরো ভালোভাবে নীতি প্রণয়ন করতে এবং জাতীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

ডেটাবেজে শৃঙ্খলা আনার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি এবং টিআইএন নম্বর ইত্যাদির মতো বিভিন্ন সরকারি প্রয়োজনে তথ্য প্রদান এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য হ্রাস করে সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলা সম্ভব হবে। বিভিন্ন সরকারি নথিতে একজন ব্যক্তির জন্মের বিভিন্ন তারিখ খুঁজে পাওয়া যায়— এনপিআর এটি দূর করতে সহায়তা করবে। এনপিআর ডেটার সঙ্গে, নিবাসীদের সরকারি কাজে বয়স, ঠিকানা এবং অন্যান্য বিবরণের বিভিন্ন প্রমাণ সরবরাহ করতে হবে না। এটি ভোটার তালিকার দ্বৈততা ও নকল দূর করতে সহায়তা করবে।

এত বিপুল একটি কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করার চ্যালেঞ্জ কি বাংলাদেশ নিতে পারবে— এই প্রশ্নের জবাবে ড. শাহাদাত ক্রাইম প্রতিদিনকে বললেন, ‘আমি আজ পর্যন্ত যত জায়গায় আমার ধারণাপত্রটি নিয়ে গিয়েছি সবাই অ্যাপ্রিসিয়েট করেছে। কিন্তু প্রায় সবারই কথা, এত বিপুল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হবে কীভাবে। বিষয়টি আমাকে অবাক করেছে। আমি মানি, কাজটিতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যে কোনো নতুন কাজেই চ্যালেঞ্জ থাকে। যে প্রকল্প দেশকে অনেক জঞ্জালের হাত থেকে রক্ষা করে সত্যিকারের সোনার দেশে বদলে দেবে সেটি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই।

এখানে একটা ঘটনার কথা বলি। ভারত যখন এনপিআর চালু করল তখন তাদের অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিশাল দেশ। বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনে ২৬ গুণ বড়। অসংখ্য প্রদেশ। অরুণাচলের মানুষ এটি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করল। তাদের ভাষ্য, সারাজীবন একভাবে চলেছি। বুড়ো বয়সে এসে এসব কম্পিউটার, ল্যাপটপ চালাতে পারব না। রীতিমতো উত্তাল আন্দোলন। হাইকোর্টে রিট হলো। আদালত রায় দিলেন, এনপিআর হবে। পর্যবেক্ষণে আদালত বললেন, যে কোনো নতুন বিষয় বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছু ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটের মুখোমুখি হতেই হয়। কিন্তু সেটির সঙ্গে যদি জনকল্যাণ যুক্ত থাকে তাহলে প্রকল্পটি অবশ্যই চালু করতে হবে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় এই রায় অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য।’

এনপিআর বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণের আগে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এবং কোন উপযোগিতায় দেশে এনপিআর চালু করা উচিত— এর ব্যাখ্যায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বলেন, ‘বর্তমান সরকার একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের স্রোতের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে একটি ভিশন পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং এর নাম দিয়েছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। যদিও সম্পদ, সক্ষমতা এবং জ্ঞানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কিন্তু আইসিটি সরঞ্জামের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে এ যোগ্য মানবসম্পদকে দেশের সম্ভাবনাময় কাজে লাগানো যায়।

সরকার ২০২১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক এবং মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক। এক্ষেত্রে কিছু আইনগত ভিত্তি যেমন আইসিটি নীতি ২০০৯, তথ্য অধিকার আইন এবং আইসিটি আইন যা নাগরিকদের তথ্য অ্যাক্সেস এবং ই-কমার্সের জন্য সক্ষম পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। সব মন্ত্রণালয়, জেলা এবং উপজেলা অফিস একটি সক্রিয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত ধারণা এবং সুবিধাগুলো প্রদর্শন করে এমন বেশ কয়েকটি উদ্যোগ, প্রযুক্তি সচেতন তরুণ সমাজ, যারা নির্দেশিত এবং নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত, তাদের নিয়ে দেশ একটি অসাধারণ সুযোগ ও সম্ভাবনার দিকে তাকিয়ে আছে। আর এটিই এনপিআরের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশের জনমিতিক লভ্যাংশ বিদ্যমান। জনমিতিক লভ্যাংশ হলো ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সি কর্মজীবী-জনসংখ্যার সংখ্যা এবং ১৪ বছরের কম বয়সি এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সের অকর্মক্ষম-বয়সি জনসংখ্যার মধ্যে পার্থক্য। অর্থাৎ, যদি কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা অকর্মক্ষম মানুষের সংখ্যার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এটি একটি দেশের জন্য ‘জনমিতিক লভ্যাংশ’। বর্তমানে আমাদের দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ।

এই জনমিতিক লভ্যাংশের সময়কাল সাধারণত একটি দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০-৩০ বছর স্থায়ী হয়। অন্য কথায়, ২০৪০ সালের মধ্যে, জনমিতিক লভ্যাংশ ব্যবহার করে ত্বরিত গতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ কমে যেতে শুরু করবে। বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যার লভ্যাংশ উপভোগ করছে যেখানে নিজস্ব একটি শক্তিশালী তরুণ কর্মশক্তি রয়েছে। যেমন বর্তমান জনসংখ্যা শতকরা ২৬.৪৮ ভাগ ০-১৪ বছর বয়সের মধ্যে এবং ১৮.৫৬ ভাগের বয়স ১৫-২৪ বছর। এর মধ্যে এই তরুণ প্রজন্ম সহজেই আইসিটি জ্ঞান গ্রহণ করতে পারে। ফলে স্মার্টফোন এবং ট্যাব ইত্যাদির মতো ডিজিটাল ডিভাইসে খুব কম খরচে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে এনপিআরের জন্য কর্মী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

আরো যেসব কারণ রয়েছে তা হলো, বর্তমানে ন্যাশনাল হাউসহোল্ড ডেটাবেজ, বিভিন্ন জনশুমারির ডেটাবেজের সঙ্গে বিবিএস-এ মেটা ডেটাসহ জিও কোডিং সিস্টেম বিদ্যমান আছে। এর বাইরে অন্যান্য জরিপের তথ্যও রয়েছে বিবিএসের হাতে। এসব উৎসের আন্তঃসংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এনপিআর করা সহজতর হবে। বাংলাদেশ প্রধানত একটি সমতল ভূমি যেখানে কিছু অভ্যন্তরীণ পাহাড় ছাড়া সব স্থানে সড়ক ও নৌপথে সহজেই যাতায়াত করা সম্ভব। বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট এবং মোবাইল সংযোগ এটিকে অনেক সহজ করেছে। সহজ যোগাযোগের কারণে পরিবহনের যে কোনো প্রাপ্যতা, যে কোনো মুহূর্তে, যে কোনো ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

যার ফলে এনপিআর চালু করা অনেক সহজ হবে। শাহাদাত ক্রাইম প্রতিদিনকে আরো বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, এনজিও এবং বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অন্য সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য সারা বছর প্রশাসনিক তথ্য প্রস্তুত করছে। এই বিদ্যমান প্রশাসনিক ডেটাবেজ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সহজেই এনপিআরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যাবে। এভাবে এটি প্রয়োজনীয় তথ্যের পরিমাণকে সমৃদ্ধ করতে পারে এবং জন্ম, মৃত্যু এবং অভিবাসনের জন্য গতিশীলভাবে আপডেট হতে পারে। এনপিআর প্রস্তুতে ডেটার ঘাটতি থাকবে। তবে জরুরি অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আধুনিক এনপিআর প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

এনপিআর চালু করতে গেলে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন ড. শাহাদাত। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে প্রকল্প তহবিলের অভাব রয়েছে সারাবিশ্বেই। কারণ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় প্রচুর ব্যয় করতে হচ্ছে সরকারগুলোকে। বাংলাদেশ এ থেকে মুক্ত নয়। সে কারণেই মূলধনধর্মী কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার একটি নতুন সমস্যা হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে, যদি পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় তবে নতুন বৈশ্বিক সংকটগুলো কাজের গতি আরো বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, দেশের বাইরে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বসবাস এবং কাজ করছে। তাদের কারো কারো হয়তো সঠিক আইনি মর্যাদা নেই। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই মানুষজনের কাছ থেকে এনপিআর ডেটা সংগ্রহ করা একটি সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক এক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে। তৃতীয়ত, এনপিআর হলো অনেক তথ্যের সংমিশ্রণ। প্রত্যেক মানুষের জন্য স্থায়ী এবং সংগঠিত আকারে আলাদা আলাদা তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। মানুষ জন্মগ্রহণ করতে পারে, মারা যেতে পারে। কিন্তু তার এনপিআরের উপাত্তগুলো অমর। এনপিআরের মাধ্যমে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, এর জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক এবং প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মী আবশ্যক হবে। প্রয়োজনীয় লজিস্টিক ক্রয়, পরিবহন, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং মানুষকে প্রকল্পের সঙ্গে স্থায়ীভাবে রাখা আরেকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

চতুর্থ চ্যালেঞ্জ হলো, বিভিন্ন সংস্থা ডেটা নিয়ে কাজ করে। তাদের প্রয়োজনানুযায়ী তারা তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। নিজেদের প্রয়োজন মতে সংগৃহীত তথ্য দ্বারা সবসময় এনপিআরের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে, তাদের সংগৃহীত তথ্যের সঙ্গে এনপিআর প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ডাটা লিঙ্ক এবং কানেক্টিভিটি তৈরি করতে হবে। তারপরও তথ্য-উপাত্তে বড় ধরনের ফাঁক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।