• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৫ মার্চ, ২০২২ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় যুবককে মারধর করে পুলিশে দিল ইয়াবা ব্যবসায়ীরা

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় মাদক বিক্রিতে বাঁধা দেওয়ায় গাছকাটা শ্রমিককে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। পরে তাকে ইয়াবা বড়ি দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে স্থানীয় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। 

স্থানীয়রা জানান, মাদক ব্যবসায়ীচক্রকে এলাকার কেউ বাধা দিলেই উল্টো তাদের মারধর করে মাদক দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয় তারা (মাদক বিক্রেতারা)। এ চক্রটির মূল ঘাঁটি উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নে থেকেই আশপাশের ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা লালমোহনেও মাদক ছড়িয়ে পড়ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। 

স্থানীয়রা আরও জানান, ওই চক্রের মূলহোতা শম্ভুপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চর কোড়ালমারা গ্রামের কাঞ্চন মিঝির মেজ ছেলে নুরে আলম। তার সঙ্গে তার ছোট ভাই নুর নবী, বড় ভাই বজলুর নামও রয়েছে। 

এদের মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় ১৭ মার্চ ওই এলাকার দিনমজুর মো. নসু নামের এক গাছকাটা শ্রমিককে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। পরে বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় দুই দিন পর নসুকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। উল্টো নুরে আলম ও তার ছোট ভাইকে নুর নবীসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়। 

এর আগেও এলাকায় মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় ওই এলাকার অটোচালক রাকিব ও শাহাবুদ্দিনকে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে দিয়েছে নুরে আলম ও তার সিন্ডিকেট। মিথ্যা মাদক মামলায় প্রায় তিন মাস জেল খেটে রাকিব ও শাহাবুদ্দিন এখন নুরে আলমের এলাকাছাড়া। 

গাছকাটা শ্রমিক মো. নসু অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে কোড়ালমারা গ্রামের কাঞ্চন মিঝির ছেলে নুরে আলম, নুর নবী ও বজলুসহ স্থানীয় ১০-১২ জনের একটি চক্র এলাকায় মাদক বিক্রি করে আসছে। এদের কারণে এলাকার ছোট ছোট ছেলেরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি তারা তজুমদ্দিন উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লালমোহন উপজেলায় গিয়েও ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে। এলাকায় মাদক বিক্রি করতে নুরে আলমকে নিষেধ করায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় ১০-১২ মিলে গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে কোড়ালমারা গ্রামের নুরুজ্জামানের গাছকাটা অবস্থায় মো. নসুকে মারধর করে ধরে এনে নুরে আলমের বাড়ির সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে। এবং প্রকাশ্যে সবার সামনে নসুর পরনের লুঙ্গির ভাজে ইয়াবা দিয়ে তজুমদ্দিন থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে নসুকে ইয়াবাসহ থানায় নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি পুলিশ জানতে পেরে দুই দিন ওই এলাকায় তদন্ত করে নসুকে ছেড়ে দেয়।

এ বিষয়ে বুধবার তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের কোড়ালমারা গ্রামে সরেজমিন গিয়ে সেখানকার বাসিন্দা সিরাজ, আবুল কাশেম, ভুট্টু, মিলন, মিরাজসহ প্রায় ২০-২৫ জন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নুরে আলম ও তার দুই ভাইসহ স্থানীয় একটি মাদক চক্র দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করে আসছে। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নুরে আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নসুর কারণে তিন মাস আগে আমি দুই মাস জেল খেটে বের হয়েছি। সে আমাকে জেল খাটিয়েছে। নসুকে আমি মারধর করিনি। বরং স্থানীয়রা নসুকে মাদক সেবন করতে দেখে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দিয়েছে। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তজুমদ্দিন থানার এসআই মো. মনিরুজ্জামান নসুকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,  এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলাই নুরে আলম ও তার ভাই নুর নবীসহ অজ্ঞাত ১০-১২জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া নুরে আলমের বিরুদ্ধে পূর্বের দুটি মাদক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। এছাড়া তজুমদ্দিনে ইয়াবাসহ কাউকে ধরা হলেই তাকে জিজ্ঞেস করলেই সে নুরে আলমের কথা বলে। তবে এ ঘটনর পর থেকে নুরে আলমসহ তার সহযোগীরা গা ঢাকা দিয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে আমরা অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি খুব শিগগির তাদের গ্রেফতার করতে পারব।