• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৩১ মার্চ, ২০২২ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

ছাত্রলীগের সভাপতিকে দাওয়াত না দেওয়ায় কলেজ শিক্ষককে মারধর

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ নেতাকে খাবারের অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় বাংলা বিভাগের প্রভাষককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ বেপারির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা, এ ঘটনায় শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। বুধবার সন্ধায় ওই কলেজে মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ। এর প্রতিবাদে বিচারের দাবিতে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মানববন্ধন করছেন।

মারধরের শিকার শিক্ষকের নাম বিএম সোহেল। তিনি বাংলা বিভাগের প্রভাষক। আর অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ ওই কলেজের বর্তমান কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।

শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষক পরিষদ বুধবার রাতে কলেজে একটি জরুরি সভা করেছেন। সভায় এ ঘটনায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান অধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ। এর পর পালং মডেল থানায় তিনি নিজেই বাদী হয়ে মামলার জন্য দরখস্ত দিলেও পালং মডেল থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন রহস্যজনক কারণে মামলা গ্রহণ করেননি।

কলেজের শিক্ষকরা জানান, বুধবার কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক সম্মান (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষা নিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন বিশেষজ্ঞ ও একটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে কলেজের বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের শুভেছা জানানোসহ খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে ছাত্রলীগের নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি।

কেন ছাত্রলীগ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি তা জানতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ বেপারি ও সাধারণ সম্পাদক রাশেল জমাদ্দারসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে নিয়ে বুধবার ৫টার দিকে বাংলা বিভাগে যায়। সেখানে তারা গিয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক বিএম সোহেলকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে বলেন। তিনি তখন একটি অনলাইন ক্লাসের প্রশিক্ষণে ব্যস্ত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সোহাগ বেপারি বিএম সোহেলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

পরে অন্য শিক্ষকরা এসে বিএম সোহেলকে উদ্ধার করলে তাদের ভেতরেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষক পরিষদ বুধবার রাতেই কলেজে একটি জরুরি সভা করে। সভাশেষে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও শরীয়তপুর-১ (পালং জাজিরা) আসনের সংসদ সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন ও সভায় এ ঘটনায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর ওই দিন রাতেই পালং মডেল থানায় অধ্যক্ষ হারুন-অর রশিদ বাদী হয়ে মামলার জন্য দরখস্ত দিলেও পালং মডেল থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন নানা অজুহাতে তাদের রাত ২টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখেন। কিন্তু তার পরও রহস্যজনক কারণে তিনি মামলা গ্রহণ করেন না।

এর প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা এক মানববন্ধান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা দ্রুত কলেজের ছাত্রলীগের নেতার দল থেকে বহিষ্কার ও মামলা গ্রহণ করে তাদের বিচারের দাবি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে সোহাগ বেপারি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের দাবি দাওয়া নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এর বেশি কিছু না। এর জন্য শিক্ষকদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছি। আমার রাজনীতি নষ্ট করার জন্য একটি গ্রুপ অপপ্রচার করেছে। অভিযোগ সত্যি নয়; সত্যতা যাছাই না করে আমাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে, এটি ঠিক না।

শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর বলেন, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ বেপারির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা জরুরি সভা ঢেকে তাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছি।

বিএম সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। বুঝতে পারছিলাম না কি করব। ছাত্রদের সামনে এমন অপমান-অপদস্ত করা হবে ভাবতেও পারিনি। বিষয়টি আমি অধ্যক্ষ স্যারকে ও শিক্ষক পরিষদের নেতাদের জানিয়েছি। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই মেনে নেব। আমরা সাধারণ শিক্ষক, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে টিকতে পারব না। তাই এর বিচার হবে কিনা তা নিয়েও আমার সংশয় রয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের যে নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে সে আমাদের কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থী না। তাই তাকে বহিষ্কারও করা যাচ্ছে না। রাতে শিক্ষক পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর পর আমি বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করলে গভীর রাত পর্যন্ত বসিয়ে রেখেও পুলিশ কোনো মামলা গ্রহণ করেনি। এটি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্যসহ সবাইকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

লিখিত অভিযোগের কথা অস্বীকার করে শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন বলেন, ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষকেরা এমপির কাছে এসেছিলেন। শুনেছি তিনি বিষয়টির ফয়সালা করে দিয়েছেন। আর এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ কেউ দেয়নি। কেউ আমার কাছে আসেনি বলেও জানান তিনি।