• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৮ জুন, ২০২২ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

‘শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছেন, বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে দৃঢ়-সাহসী নেতৃত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা। 

তারা বলেছেন, পদ্মা সেতু আমাদের আত্মমর্যাদা, দৃঢ়তা ও অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার প্রতীক। সব অসত্য ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সততা, দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা ও সাহসিকতার কাছে পরাজিত হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। যতদিন পদ্মা সেতু থাকবে, ততদিন ইতিহাসের পাতা থেকে শেখ হাসিনার নাম কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। সারাবিশ্বকে শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছেন- বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না, পারেওনি, পারবেও না। 

বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গোটা জাতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে ১৪৭ বিধিতে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা এসব কথা বলেন। 

সংসদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। 

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সরকারি দলের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ড. আবদুস সোবহান, শাজাহান খান, বেগম ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, শেখ তন্ময়, কাজী নাবিল আহমেদ, সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, একেএম এনামুল হক শামীম, ড. আ ফ ম রুহুল হক, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিএনপির ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও হারুনুর রশীদ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং রওশন আরা মান্নান, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুলবশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। 

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিলেন। আজ তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলছেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। যা ১০ বছর আগেই কেউ কল্পনাও করতে পারেনি, আজ সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়ে গেছে। ২৫ জুন সেই পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আমরা প্রধামন্ত্রীর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। পদ্মা সেতুর কারণে ২১টি জেলার উন্নতি হবে, সারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে।

তিনি বলেন, এই পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। সাহসী প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করব। দেশবাসী হতবাক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেটাই আজ বাস্তব। কানাডার আদালতেই প্রমাণ হয়েছে এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। মানুষের মধ্যে সততা-আস্থা থাকলে লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা পূরণ করা যায়, শেখ হাসিনা তা প্রমাণ করেছেন। 

তোফায়েল বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে না আসলে বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো না। বাংলাদেশ সব দিক থেকে এগিয়ে যেত না, পদ্মা সেতুও কোনোদিন হতো না। পদ্মা সেতু আমাদের গর্ব, গৌরব। কত বড় সাহস থাকলে শেখ হাসিনা বুক ফুলে বলেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়নে করব। বৃহত্তম সেতুটি তীব্র খরস্রোতা পদ্মা সেতুতে নির্মিত হয়েছে। 

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, এই সেতু বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুধু উপহার নয়, এটি বাঙালির আত্মমর্যাদার অহংকার। এই সেতু নির্মাণের পথ সহজ ছিল না।নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করতে চেয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগ এনে হঠাৎ করেই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। বলল বিশ্বব্যাংক নিজেই তদন্ত করবে। বললাম বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, তোমরা তদন্ত করতে পার না। দুদক নিজেই এফআইআর করে। সাবেকমন্ত্রী আবুল হোসেনকে গ্রেফতারে চাপ দেয়, আমরা বলি অপরাধটা কী? বলে ষড়যন্ত্র। কী ষড়যন্ত্র তা বলতে পারে না। কানাডার কোর্টে শুনানি হয়। কানাডার আদালত স্পষ্ট করে বলে দেয়, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবেন, তখন অনেকে ঠাট্টা-তামাশা করেছিল। আজ প্রমাণ হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই শুধু পারে বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে, দেশকে এগিয়ে নিতে, চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে আগামী ২৫ জুন। এই পদ্মা সেতু নির্মাণের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হয়েছে, অনেক গুজব রটিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এই সেতু জিডিপিতে ১ দশমিক ৩ থেকে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বেশি হবে, অর্থনৈতিকভাবে দেশ আরও মজবুতভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। 

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, শত বাধা-বিঘ্ন ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিলেন, বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, দেখিয়ে দিয়েছেন আমরাও পারি। এই অসম্ভবকে সম্ভব করার শক্তিমত্তা আমাদের রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা গাড়ি চালিয়ে যেতে পারব, আমাদের কাছে সেটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। প্রমত্তা পদ্মাকে আমরা জয় করতে পেরেছি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। যতদিন পদ্মা সেতু থাকবে, ততদিন ইতিহাসের পাতা থেকে কেউ শেখ হাসিনার নাম মুছে ফেলতে পারবে না, তিনি অমর হয়ে থাকবেন। তেমনি যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। 

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, পদ্মা সেতু সত্যিই বড় অর্জন। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করেনি, এটা তো আমাদের কোনো দোষ নেই। কেন অর্থায়ন করেনি? বিএনপির কথায় বিশ্বব্যাংক টাকা বন্ধ করে দেয়? সারা বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে কেন? এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের সফলতা আজ দেশে-বিদেশে স্বীকৃত। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর ১৩ বছরের ক্লান্তিহীন পরিশ্রম এবং গতিশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল। দ্বিতল পদ্মা সেতু ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহৎ চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প, যেটি আজ বাস্তবতা। 

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে বলেন, আদালতে গিয়ে পরাজিত হয়ে ড. ইউনুস এতই প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে পড়েন, নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। পরে হঠাৎ করেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। সব অসত্য ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। শেখ হাসিনার সততা, দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা ও সাহসিকতার কাছে পরাজিত হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। বিএনপির আমলে প্রদীপের নিচে অন্ধকার দেখেছি। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। তাদের (বিএনপি) সর্বাঙ্গে দুর্নীতিতে ভরা বলেই সবকিছুতেই দুর্নীতি দেখে। 

সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের ঘরে ঘরে আজ আনন্দে উদ্বেলিত। পদ্মার পারের ২১ জেলার মানুষ অবহেলিত ছিল। শেখ হাসিনার কাছে এই ২১ জেলার মানুষ চিরঋণী হয়ে গেল। জাতীয়-আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ পারে। 

জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, যারা পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করেছিল, নানা কথা বলেছিল- সেতুটি নির্মাণের পর তারাই এখন গুণগান গাইছে। হরতাল-অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াও মানেই বিরোধী দল, এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জাতীয় পার্টি করেনি। অতীতের মতো বিরোধী দল থাকলে বর্তমান সরকার এত নির্বিঘ্নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারত না।

প্রস্তাব উত্থাপন করে চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চেহারা পাল্টে যাবে। এ সেতু বাঙালির অহংকার, একমাত্র কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। পিতার মতো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দৃঢ়প্রত্যয়ী। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এ দীর্ঘ সেতুর কল্যাণে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়, সাহসী ও পরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আবারো প্রমাণ হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। 

বিএনপির ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ব্যয় হয়েছে তাতে এটাকে গোল্ডেন ব্রিজ বলা যেতে পারে। এমনই গোল্ডেন সেতু, যার পরতে পরতে দুর্নীতির চিত্র। পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার হরিলুট করেছে, সেজন্যই বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেয়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ পড়েছে পার কিলোমিটার। এক পদ্মা সেতুর ব্যয়ে ভারতে ১০টি বড় সেতু নির্মাণ করা সম্ভব, লুটপাট কাকে বলে তার বড় উদাহরণ পদ্মা সেতু। 

বিএনপিদলীয় এই সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যের সময় প্রতিবাদে ফেটে পড়েন সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা। জবাব দিতে উঠে সরকারি দলের মৃণাল কান্তি দাস বলেন, বিএনপি হচ্ছে দেশদ্রোহী, জাতিদ্রোহী, স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্তরাধিকার। বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাক-জিয়া-রশিদ-ফারুকের উত্তরসূরি। এদের কাছ থেকে দেশবাসী ভালো কথা আশা করে না। সাহস থাকলে আগামী নির্বাচনে অংশ নিন, জনগণ দেখিয়ে দেবে আপনাদের অবস্থান কোথায়।