• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৭ অক্টোবর, ২০২২ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

বড় রঙ্গিন ছিল শৈশবের বৈশাখ: সাবিনা ইয়াসমিন রত্না

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

রেশমি চুড়ি, কানের দুল,
লাল ফিতা চাই,
মনে মনে স্বপ আকিঁ
যদি মাটির পুতুল পাই।

সীমিত চাওয়ায়, সীমিত পাওয়ায় মন খুশির প্লাবনে প্লাবিত হতো। আনন্দের ঝলমলে তারা হৃদয় আকাশ থেকে পৃথিবীর বুকে খসে পড়ে ধরনীকে আলোকিত করতো। মন পাখিটা পাখনা মেলে উড়ে যেতো সুদূর নীলে।বৈশাখের আগমনে স্বপ্নে বিভোর থাকতো কোমলমতি মন।বড় রঙ্গীন ছিল শৈশবের বৈশাখ।
মুঘল সম্রাট আকবর পহেলা বৈশাখ কে উৎসব হিসাবে উদযাপন করে বাঙ্গালির প্রানের উৎসবে পরিনত করেছে। সেই ঐতিহ্য কে বহন করে হাজার রঙ্গে সেজে প্রতিবছর বৈশাখ আসে প্রতিটি বাঙ্গালির ঘরে ঘরে।

সব উৎসবই শ্রেণীভেদে ভিন্নতা নিয়ে আসে, গরীবের ঈদ আসে গোস্ত ভাতে অমৃতের স্বাদ নিয়ে, আর ধনীদের ঈদ আসে কোরমা পোলাও বিরানি কাবাবের রুচিহীনতা নিয়ে। কোরমা পোলাও ধনী শ্রেণীর নিত্যকার খাবার, তাই বড় অনীহা, আর গোস্ত খাওয়া, সে তো গরীবের কাছে স্বপ্নের জাল বুনা। তাই উৎসব গরীবের ঘরে বেশি সুখ নিয়ে আসে।

বৈশাখ আনন্দ পাল্টে গেছে হয়তো, সকালে উঠে পান্তা ইলিশ খাওয়ার ধুম, বিলাসিতা মাত্র,বাঙ্গালি সংস্কৃতি কে ভালবেসে? মোটে ও নয়। নাই বা বললাম এ সব কথা, গোপনে থাকনা হৃদয়ে গাথা, আমি বরং শৈশবের বৈশাখের কথা বলি —

পহেলা বৈশাখ আসার বেশ কিছুদিন আগ থেকে মনের মধ্যে বৈশাখী মেলা নিয়ে স্বপ্ন একেঁ যেতাম, মেলার প্রস্তুতি দেখতাম অার পুলকিত হতাম, আব্বার কাছে আগ থেকেই বায়না করে রাখতাম মেলা থেকে কি কি কিনে দিতে হবে, খেলার সাথীদের সাথে এ সব নিয়ে আলোচনা করে খুব মজা পেতাম।

পহেলা বৈশাখে ঘুম থেকে খুব সকালে উঠতাম, মা সেদিন একটু ভাল কিছু রান্না করতো, এই যেমন মুরগী/হাসঁ/গরু কখনো কখনো ডাল আর ডিম, এই আমাদের ভাল খাবার। আব্বা মায়ের যৌথ প্রচেষ্টায় সংসারটা কোন রকমে চলতো, স্বাচ্ছন্দ্য নেই বললেই চলে। কিন্তু আমার আব্বার ছিল রাজা বাদশার মত মন, নিজের অর্জিত সম্পদ সবই তার সন্তানদের একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার জন্য ব্যয় করত। বৈশাখের দিন ও আমাকে, আব্বা নিজে গোসল করিয়ে ভাল কাপড় পরিয়ে, সাজিয়ে খাবার খাইয়ে ঘোড়া দৌড় দেখাতে নিয়ে যেত। আমার পিতার আদর ভালবাসা আমার হৃদয়ের মনিকোঠায় যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছি । আব্বার হাত ধরে মেলায় ঘুরে ঘুরে লাল ফিতা, রেশমি চুড়ি, কানের দুল, মাটির পুতুল আর ও কত কি যে কিনতাম।

নাগর দোলায় চড়তাম,গরম গরম জিলাপি ভাজা খেতাম, রাতে জারি গানের আসর বসতো, গান শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়ে যেতাম, সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখতাম ঘরে শুয়ে আছি।

মেলার খুব কাছেই আমাদের বাড়ি ছিল, মেলার পরদিন খুব ভোরে আমরা ভাঙ্গা মেলায় ফেলে যাওয়া জিনিস গুলো কুড়াতে বের হতাম। মাটির খেলনা পেচিয়ে আনা খড়ের মধ্যে খুজলেই মাটির খেলনা পাওয়া যেত। একটা খেলনা কুড়িয়ে পেলে কি যে মজা হতো, রাতে কেনা ১০ টা খেলনার সমান দামি মনে হতো কুড়িয়ে পাওয়া একটা খেলনা।

অনেক স্বপ্নের বৈশাখী মেলা,
শেষ হয়ে যেত চোখের পলকে
নতুন করে জমতো স্বপ্ন
আমার মনের ছোট্ট নীড়ে,
অনেক রঙ্গে সেজে বৈশাখ
আবার কবে আসবে ফিরে?

লেখক:- সাবিনা ইয়াসমিন রত্না, কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার ও গীতিকার