• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

নিজের বিয়ের দাওয়াত দিতে গিয়ে শিক্ষিকার মৃত্যু

সালাহ উদ্দিন সুমন,নোয়াখালী

বার বছর বযসে বাবা মারা যান। দুই ভাই এক বোনকে নিয়ে নানার বাড়িতে থাকতেন। অভাবঅনটনের সংসার ছিলো । মামাদের সহযোগিতা আর প্রাইভেট পড়িয়ে নিজে পড়ালেখা শেষ করে ছোট ভাবইবোনদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। পড়ালেখা করা অবস্থায় নানার বাড়িরপাশে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। পরে দাদা বাড়ি এলাকায় একটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠলে সেখানে গিয়ে  মাস তিনেক আগে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ আর ২৭ ফেব্রুয়ারী বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিলো তাসলিমা আকতারের(২৪)। অল্প বয়সে পিতা হারানো স্কুল শিক্ষিকা চার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলো। বড় মেয়েকে হারিয়ে ।

বাবা না থাকায় বাড়িতে বিয়ের কাজ-দায়দায়িত্ব নিজেকেই করতে হয়েছে। বিদ্যালয়ের সহকর্মীদের বিয়ের দাওয়াত দিতে কার্ড নিয়ে সকালে মামার সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন তাসলিমা। কিন্তু বিদ্যালয় ও বিয়ের পিঁড়িতে আর বসা হলো না তাসলিমার।

নতুন জীবন শুরুর আগে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চৌরাস্তার কিল্লা এলাকায় মোটরসাইকেল থেকে পড়ে নিহত হন তাসলিমা। নিহত তাসলিমা বেগম উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের কেরামতপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের মেয়ে। 

নিহতের মামা দিদারুল আলম জানান, প্রতিদিন সকালে তার এক মামার সাথে মোটরসাইকেল যোগে বিদ্যালয়ে যায় তাসলিমা। পারিবারিক ভাবে আগামী বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর চৌরাস্তা এলাকার পাশে তার বিয়ে ঠিক করা হয়। বিদ্যালয়ে গিয়ে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে ছুঁটিতে আসার কথা ছিল তার। সকালে ওই মামার সাথে মোটরসাইকেল যোগে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল তাসলিমা। পথে চৌরাস্তার কিল্লা এলাকায় হঠাৎ করে মোটরসাইকেলের সামনে একটি কুকুর পড়লে কুকুরের সাথে মোটরসাইকেলটি ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। এসময় মোটরসাইকেল থেকে সড়কের উপর পড়ে মাথায় আঘাত পায় তাসলিমা। পরে তাকে উদ্ধার করে চৌরাস্তা বাজারের একটি ফার্মেসিতে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

৮নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো.আবুল কালাম আজাদ  জানান, দক্ষিণ পূর্ব চর লক্ষী আশ্রয়ণ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। চার মাসে একদিনের জন্য ছুটি নেননি।প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে স্কুলে উপস্থিত থাকতেন। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন।

চরজব্বর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহেদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় দূর্ঘটনার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।কোন অভিযোগ না থাকায় লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।শনিবার বিকেলে জানাযা শেষে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে।