• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৬ জানুয়ারী, ২০২৩ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

ইয়াবাসহ বিকালে গ্রেফতার রাতে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর সদর উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কর্মচারীর বাসা থেকে ৫শ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারিকে বিকালে গ্রেপ্তারের পর একজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে অন্যজনকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বিরুদ্ধে।  

গত রোববার (২২ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার সরকারি গার্লস স্কুলের পশ্চিম পাশে এক ম্যাজিস্ট্রেট কর্মচারী মো.আব্দুর রহিমের বাসার ভিতর থেকে ৫০০ ইয়াবাসহ সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের আইয়ুবপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম মেম্বার বাড়ির তাজুল ইসলামের ছেলে মো: আব্দুর রহিম (৩৯) ও কাদিরহানিফ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের শাহরু মেম্বার বাড়ির মৃত জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে মো: জলিল হোসেন মালেককে (৩২) গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। 
 
ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে গ্রেপ্তারকৃতদের ছবি এবং উদ্ধারকৃত ইয়াবার ছবিসহ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন আহমেদ।  

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপজেলার সরকারি গার্লস স্কুলের পশ্চিম পাশে ম্যাজিস্ট্রেট কর্মচারীর বাসার ভিতরে অবৈধভাবে মাদক বিক্রির উদ্দেশ্যে মাদক কারবারি অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সেখানে অভিযান চালায়। অভিযানে ৫শ পিস ইয়াবাসহ দুই কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আসাামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই বাসায় দীর্ঘদিন যাবত তারা মাদকদ্রব্য ক্রয় বিক্রয় করত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কম মূল্যে ইয়াবা ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রয় করত এই মাদককারবারি চক্র। এই ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর জাতীয় ও স্থানীয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে ৫শ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রকাশ হয়।

তবে ওই রাতেই ৫০০ ইয়াবাসহ আটককৃত প্রধান ইয়াবা কারবারি মো: আব্দুর রহিমকে ছেড়ে দিয়ে অন্য মাদক কারবারি মো: জলিল হোসেন মালেকের বিরুদ্ধে এসআই শরিফুল ইসলাম খানকে বাদি করে মামলা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার বিবরণে এসআই শরিফুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন সুধারাম থানা এলাকায় অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযান চলাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি নোয়াখালী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে তিন রাস্তার মোড়ে মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রি করছে। সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ডিবি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ২জন লোক পালানোর চেষ্টাকালে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় মো: জলিল হোসেন মালেককে গ্রেপ্তার করি এবং তার সঙ্গে থাকা অপর ব্যক্তি পালিয়ে যায়। পরে মো. জলিল হোসেন মালেকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জব্দকৃত ইয়াবাসহ আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়। সুধারাম মডেল থানার মামলা নং-৩৪, তাং-২৩.০১.২৩ইং।

ইয়াবাসহ আটকের পর স্বীকৃত মাদক কারবারি মো: আব্দুর রহিমকে ডিবি পুলিশ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিন্দার ঝড় ওঠে।

মো: রিয়াজ উদ্দিন তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, মাননীয় এমপি মহোদয় ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয় আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনাদের মাধ্যমে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে জিজ্ঞাসা ইয়াবা চক্রের ডন আবদুর রহিম নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ হাতেনাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর কোন অপশক্তির মাধ্যমে ছাড়া পেয়ে যায়, জাতি জানতে চাই।

আবদুর রহিমকে ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে এফকে চৌধুরীসহ আরো অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেন।

মামলার এজহার, প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও ডিবি’র ওসির বক্তব্য একটার সঙ্গে অন্যটার কোন মিল না থাকায় ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা দেখা দিয়েছে।

এবিষয়ে নোয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আবদুর রহিম পালিয়ে যায় নাই, হাতে নাতে ধরার বিষয়টা আবদুর রহিম ছিল না। আবদুর রহিম ঘটনাস্থলে বসবাস করতো বিধায় তাকে ধরা হয়েছে। মালটা হলো আরেকজনের, যে নিয়ে আসছিলো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্দেহজনকভাবে আবদুর রহিমকে আটক করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তাকে জজকোর্টের নাজিরের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে এড়িয়ে যান তিনি।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম বলেন, কাউকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। ওটা একটা ভুল হয়েছে। যার কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে, তাকে দিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে।  আরেকজনের বিষয়ে তদন্ত চলছে।