• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৯ মে, ২০২৩ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবন সম্ভব

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা সত্ত্বেও কেয়ারটেকার সরকার পুনরুজ্জীবন সম্ভব। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালত সহায়ক আইনজীবী) হিসেবে মতামত প্রদানকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার এম.আমীর-উল ইসলাম। তার মতে, আদালত-সহায়ক আইনজীবীগণ (অ্যামিকাস কিউরি) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে যে মতামত দিয়েছিলেন সেটিকে পুন:জীবীত করা দরকার। সেটি ‘রিভাব’ করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা যেতে পারে। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান-বরেণ্য আইনজীবী ব্যারিস্টার এম.আমীর উল ইসলাম। রোববার একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া ভার্চুয়াল সাক্ষাতকারে এ অভিমত ব্যক্ত করেন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবোধক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ভোট চুরি একটি অপরাধ।

‘সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল আদেশের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা যাবে ?’ এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার এম.আমীর উল ইসলাম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার করতে হলে এর একটি ফ্রেম ওয়ার্ক থাকতে হবে। সেটিতো আমাদের নেই। সাধারণ মানুষ এটিকে (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) অভিনন্দন জানিয়েছিলো। পরবর্তী পর্যায়ে এটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) আর সেভাবে চলেনি। সে জন্য এখন আমাদের ওই সময়কার যে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে যে মতামত দিয়েছিলেন সেগুলোকে রিভাইব করা দরকার। সেটি করে একটি কেয়ারটেকার সরকার করা যেতে পারে। সেটি করলে জনগণের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। ‘দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা’-প্রশ্নে তিনি বলেন, (নির্বাচন) প্রশ্নবোধক থেকে যায়। এটি সম্ভব-অসম্ভবের বিষয় নয়। প্রশ্ন থাকতে পারে। জনগণ যদি একটি পাবলিক ওপেনিয়ন সৃষ্টি করে এর (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) পক্ষে তাহলে পরে এটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ, সম্ভব হতে পারে। যদি ভোট চুরি করে, এটি অপরাধমূলক। দলীয় সরকারের বিষয় থাকাতে নির্বাচনটা সেভাবে স্বচ্ছ নাও হতে পারে। এখানে যারা সাধারণ, ভোটদাতা, যারা ভোট দেবেন তাদের সম্পর্কে একটি জরিপ করা যায় কি না। মানুষের জরিপ বা ওপেনিয়নটা দরকার। ‘সংবিধানের আলোকে কি কোনো সমাধান আছে?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জরিপটা করা দরকার। ভোটাররা কি চাইছে সেটির একটি জরিপ করা দরকার। জরিপের জন্য একটি টিম করার দরকার। ‘জরিপ কে করবে?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বদিউল আলম মজমুদার। এরকম আরও অনেকে আছেন। তারা এটি করতে পারেন।

উল্লেখ্য, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছে ২০১১ সালের ১০ মে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে তত্ত্বাবাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়। তৎকালিন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ এ রায় দেন। সংক্ষিপ্ত মৌখিক রায়ে আদালত তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করলেও তত্ত্ব্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও অন্তত: ২টি সংসদ নির্বাচন হতে পারে-মর্মে উল্লেখ করা হয়। সে সময়কার বিদায়ী প্রধান বিচারপতি (এবিএম খায়রুল হক) এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বাদ রেখে সংসদ এ সরকার পদ্ধতি সংস্কার করতে পারে-মর্মে অভিমত দেন আদালত। প্রধান বিচারপতি এবিএম, খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ আলোচিত এ রায় দেন। বেঞ্চে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে এই রায় দেয়া হয়েছে-মর্মে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

রায়ের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তৎকালিন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, আগামী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যাবে। কিন্তু এই রায়ের পর তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় সংস্কার এনে সংবিধানে সংশোধনী এনে আগামী দু’টি নির্বাচন করতে হবে। তিনি বলেছিলেন, আদালত ত্রয়োদশ সংশোধনীকে সংবিধানের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে তা বাতিল ঘোষনা করেছে।


তবে আদালত বলেছে, শান্তি-শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে আগামী ২টি সাধারণ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। একইসঙ্গে বিচার বিভাগকে এর সঙ্গে না জড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।

শুনানিকালে আপিল বিভাগ বেশ ক’জন সিনিয়র আইনজীবী ‘অ্যামিকাস কিউরি’ হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। তারা হলেন, সিনিয়র আইনজীবী টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। ব্যারিস্টার রফিক উল হক এবং ড.এম. জহির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় সংস্কার আনার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিন্তু বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের রায়ে অ্যামিকার কিউরিদের মতামতের কোনো প্রতিফলন ছিলো না। রায় ঘোষণার পর স্বাগত জানিয়েছিলো ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। বিরোধী দলে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল আদেশ ‘স্ববিরোধী’ বলে মন্তব্য করেন। আলোচিত এ রায় প্রকাশিত হয় রায় প্রদানকারী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর। কিন্তু লিখিত পূর্ণাঙ্গ সেই রায়ে পরবর্তী আরও অন্তত: ২টি মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার বিষয়টি বাদ দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত: ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করা হয়। সেই থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হচ্ছিলো। কিন্তু সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৪ সালে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এম.সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট ত্রয়োদশ সংশোধনীকে ‘ বৈধ’ ঘোষণা করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন সলিম উল্লাহ গং। সলিমউল্লাহ ইন্তেকাল করলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান আপিলটি চালিয়ে নেন। আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন। পরে আব্দুল মান্নান খানকে আওয়ামীলীগ দপ্তর সম্পাদক নিযুক্ত করে। পরবর্তীতে তাকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী করা হয়।