• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৯ জুন, ২০২৩ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

অতিঃ এসপি-ওসির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ

যুগান্তর প্রতিবেদন

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে থানায় আটকে রেখে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকার ব্যাংক চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২ জুন এ ঘটনার বিচার চেয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শরীয়তপুর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। 

অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোস্তাফিজুর রহমান। 

এর আগেও জাজিরায় নয় জুয়াড়িকে আটক করে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি এসএম মোস্তাফিজুর রহমান ও এসআই সাইফুল হোসেন খানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার একটি কমিটি গঠন করেছেন। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত করছেন। ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার। তিনি জাজিরা উপজেলার নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী।

চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারো চেক সই করে আমরা কেন নেব? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামে এক ব্যক্তি ও তার সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাতব্বরের কাছ থেকে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়। এতে ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা খোয়া গেছে- এমন অভিযোগ এনে গত ২৩ মে নয়জনকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি মামলা করেন শাহীন আলম।

মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফরের চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন- জাফরের চাচা রশিদ চোকদার, তার ছেলে বকুল চোকদার, জাফরের আরেক চাচা বাদশা চোকদার ও তার ছেলে সাদ্দাম চোকদার।

আবু জাফর পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান তাকে চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তার নামে লিখে দেওয়া হবে। এতে রাজি হননি আবু জাফর। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাকে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। 

একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তার চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর। ওই চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। মো. শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখা হয়। শহীদুল মামলার বাদীপক্ষ ও পুলিশের পরিচিত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আবু জাফর।

আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধারের জন্য বাদীরা জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারীসহ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা আমার চাচাতো ভাই ও চাচাদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় ৭২ লাখ টাকা দাবি করায় আমি বিষয়টির প্রতিবাদ করেছিলাম। ওই রাতেই পুলিশ বাড়ি থেকে আমাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ওসির রুমে আটকে আমাকে চোখ বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে দুই ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।

জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারী বলেন, যার ডলার এবং টাকা ছিনতাই হয়েছে তিনি আমার ভাগনে হন। তাকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিকভাবে আমি মামলার আসামি ও তাদের মুরব্বি ঠান্ডু চোকদারের (আবু জাফর) ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলাম। তিনি স্বেচ্ছায় আসামিদের দোকান লিখে নিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছিলেন।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামানকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, ‘আপনি অফিসে আসবেন’- এ কথা বলেই তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।