বাংলাদেশে এখন রমজানের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নূরানী মাদ্রাসা বা মক্তব এবং ঈদের পরে কওমী মাদ্রাসাগুলো খুলে দেয়ার দাবি নিয়ে এসব মাদ্রাসা পরিচালনাকারি বোর্ডের প্রতিনিধিরা সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করেছেন।
তারা ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছেন।
মাদ্রাসা বোর্ডের নেতারা বলেছেন, মাদ্রাসাগুলো বন্ধ থাকায় লক্ষ লক্ষ দরিদ্র শিক্ষার্থী এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে শিশুদের ঝুঁকি বিবেচনা করে অন্যান্য শিক্ষপ্রতিষ্ঠানের মতো মাদ্রাসাগুলোও বন্ধ রেখেছে। এখন মাদ্রাসা খুলে দেয়ার দাবি নিয়ে তারা আরও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
দেশে কওমী এবং প্রাথমিক স্তরের নূরানী মাদ্রাসাগুলো পরিচালনার জন্য বেসরকারিভাবে কয়েকটি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে।
এসব বোর্ডের পক্ষে একটি প্রতিনিধি দল গত রোববার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সাথে দেখা করে মাদ্রাসা খুলে দেয়ার লিখিত আবেদন করেছেন।
সেই আলোচনায় দুই মন্ত্রী মাদ্রাসা বোর্ডের নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন। তবে মন্ত্রীরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি বলে জানা গেছে।
তারা আরও আলোচনা করার কথা বলেছেন।
চট্টগ্রামের মিরেরসরাই এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেছেন, তার মাদ্রাসায় দেড়শ'র বেশি শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারের। দীর্ঘ সময় মাদ্রাসা বন্ধ থাকলে শিক্ষাশিক্ষার্থীরা চরম সংকটে পড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
"আমাদের কওমী মাদ্রাসাগুলোতে হাজার হাজার এতিম, মিস্কিন, গরিব আছে, তাদের লালন পালন এবং ভারণ পোষণ দেয়া হয়। তাদের অভিভাবকের দায়িত্ব আমরা পালন করি। এবং রমজান মানুষ বেশি দান করে ও অর্থের যোগান হয়। আমরা যদি লম্বা সময় মাদ্রাসা বন্ধ রাখি তাহলে এই ছেলে মেয়েগুলো কোথায় যাবে? সেজন্য মাদ্রাসা খোলা দাবি জানিয়েছি," বলেন আশরাফ আলী নিজামপুরী।
চট্টগ্রামেরই হাটহাজারি এলাকার মীরেরহাটের একটি মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক উম্মে সুফা সাহেদা বলেছেন, তাদের মাদ্রাসায় এতিমখানা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে আড়াই হাজারের মতো নারী শিক্ষার্থী রয়েছে। এতিমখানা ছাড়া অন্য বিভাগগুলো বন্ধ রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, মাদ্রাসা না খুললে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে যেতে পারে।
"মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী থাকে এবং তাদের খাওয়া দাওয়া দেয়াসহ সব ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু মাদ্রাসা বন্ধ থাকলে তারা পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।"
সারাদেশে ১০ হাজারের বেশি নূরানী এবং ১৫ হাজারের মতো কওমী মাদ্রাসা রয়েছে। বেশিরভাগ কওমী মাদ্রাসাতেই এখন প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাও রয়েছে।
সবমিলিয়ে এসব মাদ্রাসায় ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে বলে তাদের বোর্ডগুলোর হিসাবে বলা হয়।
সরকারের সাথে আলোচনায় অংশ নেয়া মাদ্রাসা বোর্ডের প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য বলেছেন, রমজানের সময় মানুষের সহায়তা থেকে মাদ্রাসার অর্থের একটা বড় যোগান আসে। আর কওমী মাদ্রাসাগুলোতে প্রতি বছর নতুন শিক্ষাকার্যক্রমে ভর্তির মৌসুম। এই বিষয়গুলো তারা সরকারের কাছে তুলে ধরেছেন।
মাদ্রাসার প্রতিনিধিদলটির নেতা রুহুল আমীন বলেছেন, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যেভাবে থাকে, তাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার খুবই কম বলে তারা মনে করেন।
"আমাদের ছেলে আসলে মাদ্রাসায় কোয়ারেনটিনের মতই থাকে। তারা মাদ্রাসার বাইরে যাওয়া আসা করে না। ইতিপূর্বে মাদ্রাসা খোলা রাখার যে সুযোগ সরকার দিয়েছিল, তাতে সংক্রমণের কোন খারাপ রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। এজন্য আমরা মাদ্রাসা খুলতে চেয়েছি। এখন যেতে ভাল হয়, সরকার সিদ্ধান্ত নেবে" বলেন তিনি।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক বলেছেন, তারা বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন।
"এখনতো মহামারি চলছে। এই অবস্থায় আমরা বাচ্চাদের ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না। ফলে মাদ্রাসা না খোলার পক্ষে আমরা সবাই রয়েছি। তারপরও তারা যেহেতু এই দাবি করেছেন। আমরা আলোচনা করে তাতে সিদ্ধান্ত নেবো" বলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেনিকক্ষে সরাসরি পাঠদান বন্ধ থাকলেও ব্যতিক্রম ছিল মাদ্রাসাগুলোর ক্ষেত্রে।
কওমী এবং প্রাথমিক স্তরের নূরানী মাদ্রাসাগুলো খোলা ছিল।
তবে এবার সংক্রমণের বিস্তারের মুখে গত ৫ই এপ্রিল থেকে লকডাউনে কওমী এবং নূরানী মাদ্রাসাগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে।