খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে থাকাকালে এ বছরের ৪ জানুয়ারি চাকরির মেয়াদ শেষ হয় ড. শেখ নুরুল আলমের। তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থা প্রশাসন শাখায় কর্মরত ছিলেন। নুরুল আলমের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তার স্থলে একজন সিনিয়র সহকারী সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী সচিব স্বপদে যোগদানও করেছেন তাৎক্ষণিকভাবে, রয়েছেন কর্মরতও। কিন্তু তাকে খুব বেশি দাপ্তরিক কাজ করতে হয় নি। কারণ, সরকারি চাকরি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে কাগজে কলমে অবসরে গেলেও বাস্তবে অবসর নেননি ড. শেখ নুরুল আলম। গত এপ্রিলে লকডাউন শুরু হওয়া পর্যন্ত আগের মতোই তিনি নিয়ম করে সকালেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এসেছেন, মন্ত্রণালয়ের আগের সেই ‘সংস্থা প্রশাসন শাখায়’ই অফিস করেছেন। এছাড়া কখনো মন্ত্রীর দফতরে, কখনো সচিবের দফতরে দেখা গিয়েছে তাকে। লকডাউনের মধ্যেও তিনি প্রায়ই মন্ত্রণালয় এবং অধীন সংস্থাগুলোয় যাতায়াত করেছেন, এখনো করছেন। যেহেতু মন্ত্রী-সচিবের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন এবং বিশ্বস্ত তাই মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর সংক্রান্ত বিশেষ গোপনীয় সিদ্ধান্তগুলো তিনিই জানেন প্রথমে। তাই তাকে অন্য সবাই গুরুত্ব দিয়েছেন বাধ্য হয়েই।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতি, পদায়ন প্রভৃতির যাবতীয় কাজ হয়ে থাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ‘সংস্থা প্রশাসন শাখা’ থেকে। কাজেই এ শাখাটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। সাধারণত, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবের প্রিয়ভাজন এবং অত্যন্ত বিশ্বস্ত কর্মকর্তাকেই এ শাখার দায়িত্বে রাখা হয়। ড. শেখ নুরুল আলম এমন বিচারেই এ শাখার দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন। যদিও তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং সেই কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসনে পদোন্নতিলাভে বঞ্চিত হন। শিক্ষা ক্যাডার থেকে এসে প্রশাসনে উপসচিব হয়েছিলেন সচিব হওয়ার আশায়। কিন্তু কোনো পদোন্নতি ছাড়াই সেই উপসচিব হিসেবেই তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।
তবে জামায়াত-শিবিরপন্থি কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হওয়া অর্থাৎ বিরূপ গোয়েন্দা রিপোর্টের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার বা সরকারের নীতিনির্ধারকরা পদোন্নতি না দিলেও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং সচিব নাজমানারা খানুম ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন শেখ নুরুল আলমকে অনেক কাজের কাজী হিসেবে। আর তাই একেবারে আপন করে নিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তার মাধ্যমেই হয়েছে এতোদিন। শুধু সংস্থা প্রশাসন শাখার কর্মকর্তা হিসেবেই নয়, বলা যায় পুরো মন্ত্রণালয়ের উপরই ছিল তার একচ্ছত্র আধিপত্য। কোনো বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতো। আগে সেগুলো হতো অফিসিয়ালি, আর এখন হচ্ছে নন-অফিসিয়ালি।
চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরও কর্মস্থল ত্যাগ না করায় এবং সরকারি কর্মকাণ্ডে এমন অযাচিত হস্তক্ষেপ করার কারণে যারা বর্তমানে এই মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন প্রায় সকলেই বিব্রত। অযাচিত অনেক কাজে হস্তক্ষেপ করার কারণে মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর অনেকে ত্যক্ত-বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধও। মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন উইংয়ের শুধু শাখার কর্মকর্তাই নয়, একাধিক উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিবও রয়েছেন এই ক্ষুব্ধদের মধ্যে। কিন্তু কেউ তাকে মুখ খুলে কিছুই বলতে পারেননি।
অবশ্য, সম্প্রতি ডিসি থেকে উঠে আসা এক উপসচিব যোগ দিয়েছেন এ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখায়। ড. নুরুল আলমের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড মানতে নারাজ এই কর্মকর্তা। আর তাই বিষয়গুলো এখন নুরুল আলমের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাই বলে তিনি থেমে নেই।
ড. শেখ নুরুল আলমের এমন শক্তি বা ক্ষমতার উৎস কোথায় সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ভিন্ন তথ্য। তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ‘জামাই খ্যাত’ অন্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ। ওই জামাইও এক সময় খাদ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। নুরুল আলম ইতিপূর্বে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে পদায়নে ছিলেন। সেই সূত্রে জামাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন ড. শেখ নুরুল আলম। জামাই-ই তাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পদায়নের ব্যবস্থা করেন। ওই সময় খাদ্যসচিব পদে ছিলেন শাহাবুদ্দিন আহমদ। যেহেতু মন্ত্রণালয়ের জামাইয়ের আশীর্বাদ রয়েছে তার উপর, তাই খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পদায়নের অল্প কিছুদিনের মাথায় মন্ত্রী এবং সচিবেরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন ড. শেখ নুরুল আলম। তাছাড়া দুর্নীতি-অপকর্ম আর কূটকৌশল বাস্তবায়নে নুরুল আলম অত্যন্ত সিদ্ধহস্ত। তার সেইসব অপকৌশলও মন্ত্রী-সচিবের ঘনিষ্ঠ হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কাজে আসে। এক পর্যায়ে তিনি শুধু নিজের শাখার কাজেই নয়, মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য শাখার কাজেও আনঅফিসিয়ালি পরামর্শ দিতে থাকেন মন্ত্রী-সচিবকে। ড. নাজমানারা খানুম ওই সময়ে ছিলেন খাদ্য অধিদফতরের ডিজি পদে। একই সূত্রে খুব অল্প সময়ে ডিজিরও প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেন নুরুল আলম। নাজমানারা খানুম খাদ্যসচিব পদে আসার পর সেই ধারাই অব্যাহত থাকে। যারফলে নুরুল আলম ক্রমান্বয়ে আগের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান হয়ে উঠেন এবং বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থা প্রশাসন শাখায় পদায়নে থাকাকালে ড. শেখ নুরুল আলম যেসব অপকর্ম করেছেন তারমধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় অনিয়ম হলো, বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস আইন, পিএসসির মতামত এমনকি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় লঙ্ঘন করে খাদ্য বিভাগের এসসিএফ, ডিসিএফ প্রভৃতি ক্যাডার পদে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়ন। কোনো রকমের নিয়ম-নীতি, আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করেই গত ৩০ জুন, ২০২০ ইং তারিখে ১৫ জন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে পদায়ন ও ডিসি ফুড পদের দায়িত্ব দেয়া হয়। অথচ ইতিপূর্বে এক মামলার রায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এ ধরনের পদায়নকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। ড. শেখ নুরুল আলম স্বাক্ষরিত ওই অবৈধ পদায়নের প্রজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে গোটা খাদ্য প্রশাসনে এখন এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। ক্যাডার কর্মকর্তারা হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেছেন। এই পদায়নকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে হাইকোর্ট খাদ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শো’কজ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থা প্রশাসন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে শুধু প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করাই নয়, ড. শেখ নুরুল আলম বস্তুত অপকর্মের এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গেই জড়িত রয়েছেন। তিনিই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে গোপন বৈঠক ও মোটা অংকের লেনদেন করেন। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিদের কথা বলে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করা হয়। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদও প্রচারিত হয়। খাদ্য প্রশাসনে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। সচিব নাজমানারা খানুম ও উপসচিব ড. শেখ নুরুল আলম হুমকি-ধামকিসহ নানা প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে থামানোর ব্যবস্থা করেন। খাদ্য ক্যাডারের ক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদেরকে সচিব আশ্বাস দেন, ভবিষ্যতে আর এ ধরনের পদায়ন বা প্রজ্ঞাপন জারি হবে না। নিয়োগবিধি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের পদায়ন-পদোন্নতি স্থগিত রাখা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো, নিয়োগবিধি সংশোধন না করেই গত ৩ জানুয়ারি, ২০২১ ইং একসঙ্গে আরো ২২ জন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জেলা পর্যায়ের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে পদায়ন করা হয়। যদিও এক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপনে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে বা কিছুটা কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে, তারপরও এটি উচ্চ আদালতের রায়ের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন নিঃসন্দেহেই। কারণ, হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, এই পদগুলো ক্যাডার পদ। ক্যাডার পদে নন-ক্যাডার পদায়ন-পদোন্নতি বা অন্য কোনো রকমের দায়িত্বপ্রদান সম্পূর্ণ অবৈধ।
উপসচিব ড. শেখ নুরুল আলমের শেষ কর্মদিবস ছিলো ৩ জানুয়ারি, ২০২১ইং। পরের দিন অর্থাৎ ৪ জানুয়ারি থেকে তার অবসর শুরু। সেই শেষ কর্মদিবসেই নুরুল আলম গুরুতর এবং বৃহৎ এই অপকর্মটি করেন। তবে ৩ জানুয়ারির এই ২২ জনের পদায়নের প্রজ্ঞাপনে নুরুল আলম স্বাক্ষর করেননি। ইতিমধ্যে যিনি এই শাখায় নুরুল আলমের পরিবর্তে যোগদান করেছেন, সিনিয়র সহকারী সচিব মশিউর রহমান খানকে দিয়ে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করানো হয়েছে। যদিও খাদ্য অধিদফতর থেকে প্রস্তাব আনয়ন থেকে শুরু করে সচিব-মন্ত্রী পর্যন্ত ফাইল অনুমোদনের কাজটি নুরুল আলমই হাতে হাতে সম্পন্ন করেছেন। সিনিয়র সহকারী সচিব মশিউর রহমান খান কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে দিয়ে এই অবৈধ কাজটি করিয়ে নেন নুরুল আলম। শেখ নুরুল আলমের এক্ষেত্রে দুটি উদ্দেশ্য সফল হয়। প্রথমত, ইতিপূর্বে ৩০ জুন, ২০২০ তিনি যে ১৫ জনের অবৈধ পদায়নের প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন সেটির আরেকটি নজির স্থাপন করা হলো সিনিয়র সহকারী সচিব মশিউর রহমান খানকে দিয়ে। এতে দায় শুধু তার একার উপরই বর্তাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, এই পদায়নে আবারো বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ তৈরি হলো। যদিও এর বড় অংশ গেছে কর্তাব্যক্তিদের পকেটেই, তবে তিনিও এর কিছুটা ভাগ পেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, খাদ্যসচিবসহ সংশ্লিষ্টরা তাদের এই অবৈধ কর্মকাণ্ড জায়েজ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তদবির চালিয়ে ইতিমধ্যে নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে সম্মতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী পিএসসি এমন প্রস্তাব অনুমোদন করার কথা নয়। কারণ, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় রয়েছে এ ধরনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। পিএসসি এর আগে এ ধরনের প্রস্তাব সরাসরি নাকচও করে দিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ‘জামাই’ হিসেবে পরিচিত ওই সরকারি কর্মকর্তা বর্তমানে অন্য মন্ত্রণালয়ে পদায়নে থাকলেও সেখানে বসেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। তার (জামাইর এর) হয়ে যাবতীয় বৈধ-অবৈধ কাজ করে থাকেন ড. শেখ নুরুল আলম। শুধু জামাই আর মন্ত্রীই নন, ড. শেখ নুরুল আলম খাদ্য সচিবেরও অত্যন্ত আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ। যে কারণে উপসচিব নুরুল আলমকে চাকরিতে আরো কিছুকাল রাখার জন্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম বেশ চেষ্টা-তদবির করেছিলেন। যেহেতু তার জন্য কোনো ক্রমেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়, তাই তিনি ভিন্ন পন্থায় নজিরবিহীন এক অবৈধ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। উপসচিব নুরুল আলম যাতে চাকরিতে আরো দু’বছর থাকতে পারেন এজন্য তার এসএসসির সার্টিফিকেটে বয়স কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সচিব নাজমানারা খানুম। কিন্তু যেহেতু এ ধরনের আবদার অবৈধ এবং একেবারেই অযৌক্তিক তাই উদ্যোগটি অবশেষে ভেস্তে যায়।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অবসরে যাওয়ার মুহূর্তে এসে হঠাৎ করেই নিজের বয়স কমাতে উদ্যোগ নেন ড. শেখ নুরুল আলম। চাকরির শেষ পর্যায়ের এসে তিনি বুঝতে পেরেছেন এসএসসির সনদে তার জন্ম তারিখ দুই বছর বেশি লেখা হয়েছে! দীর্ঘ কর্মজীবনে বা এর আগে শিক্ষা জীবনেও কখনো এসএসসির সার্টিফিকেটের জন্ম তারিখটি তার চোখে পড়েনি! যে কারণে এ বিষয়ে তিনি কোনো পদক্ষেপও নেননি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকাকালে অবসরে যাবার কয়েকদিন আগে তার মনে হয়েছে, প্রায় ৪৫ বছর আগে যখন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তখন জন্ম তারিখ দু’বছর বেশি লেখা হয়েছিলো। আর তাই এই অবসরের মুহূর্তে এসে সিদ্ধান্ত নেন বয়স কমিয়ে আনার। যদি বয়স কমানো যায় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তিনি আরও দু’বছর কর্মে থাকতে পারবেন। মন্ত্রণালয় ও যশোর শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, নিজের শিক্ষা সনদে বয়স দুই বছর কমিয়ে আনতে উপসচিব নুরুল আলম যশোর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। আর এই আবেদনপত্রে সুপারিশ করেন খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। একজন সচিবের এমন কাণ্ডে বিস্মিত ও আবাক হয়েছেন যশোর শিক্ষা বোর্ড এর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এমন একটি বেআইনি কাজের সহযোগী হওয়ায় যশোর শিক্ষা বোর্ডে এই সচিবকে নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়। জন্ম তারিখ দুই বছর কমানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করা হলেও শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা বিফলে যায়। তার সেই আবেদন ফিরিয়ে দেয় যশোর শিক্ষা বোর্ড। বৈধভাবে আরও দু’বছর চাকরি করতে অবৈধভাবে নিজের বয়স দু’বছর কমানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হলেও অবসরের পর মন্ত্রণালয়ের ছাড়েননি ড. শেখ নুরুল আলম। ডিসি থেকে উঠে আসা ওই উপসচিব যদিও বেশ কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারপরও থেমে নেই ড. শেখ নুরুল আলমের তৎপরতা। প্রভাব খাটাচ্ছেন মন্ত্রণালয় এবং অধীন দফতরসমুহে অনেকটা আগের মতোই।