দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘চরম নৈরাজ্য’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭টি নথি খোয়া গেছে। শাহবাগ থানায় ডায়েরি করা হয়েছে। এই হচ্ছে বর্তমানে সরকারের শাসন ব্যবস্থার অবস্থা। আওয়ামী লীগ সরকারের একটাই লক্ষ্য- কীভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়। মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে কারও চিন্তাই নেই।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর সংবর্ধনা গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গ্রন্থটিতে আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর জীবন ও কর্মের ওপর তার সুহৃদ, সহকর্মী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্টজনেরা লিখেছেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে বেরিয়েছি। আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘স্যার, আর কত দিন।’ এটাই এখন মানুষের মধ্যে একটা বড় রকমের জিজ্ঞাসা যে পরিবর্তনটা কবে আসবে। চতুর্দিকে যে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা, তা থেকে আমরা কবে বের হতে পারব।
মির্জা ফখরুল বলেন, খুব সরাসরি উত্তর দিতে চাই- আমরা অবশ্যই বের হতে পারব। আমি বিশ্বাস করি, পরিবর্তন হবেই। হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে মানুষকে জেগে উঠতে হবে। কারণ এ দেশের মানুষ কখনোই পরাজয় বরণ করেনি। মানুষ যখন জেগে উঠেছে, তখন কিন্তু তাদের (ক্ষমতাসীনদের) পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে হতাশাজনক উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর কৃতিত্ব ওই জায়গায় যে এই দুঃসময়ের মধ্যেও তিনি হতোদ্যম হননি। তিনি তার কাজ করে চলেছেন, এখানেই তার বিজয়। আমি এই মানুষদের, গুণীজনদের ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। কারণ তারা এখনো আমাদের আশার আলো দেখান।
তিনি বলেন, আমার খুব কষ্ট হয়- যখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বোন, গ্রামের মা-বোনেরা ধর্ষিত হয়। তখন দেখি না যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়ে আসে। যখন টিপাইমুখে বাঁধ তৈরি করতে যায়, সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ করে কোনো মিছিল হয় না। গণতন্ত্রকে যখন ধ্বংস করা হয়, ছাত্রকে যখন পিটিয়ে রক্ত ঝরানো হয়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রতিবাদ মিছিল বের হয় না। এটা দুঃখের কথা।
বিএনপির এই নেতা ব্যক্তিগত কষ্টের কথা জানিয়ে বলেন, আমরা এমন একটা সমাজে, এমন একটা পৃথিবীতে বাস করছি, যেখানে আমরা যে মূলবোধগুলোকে সৃষ্টি করেছিলাম, যে আকাঙ্ক্ষার স্বপ্ন দেখছিলাম, এখন মনে হয় সেগুলোর কোনো মূল্যই নেই।
মির্জা ফখরুল স্মৃতিচারণা করে বলেন, আগে যখন আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী হেঁটে যেতেন, তখন তার ছাত্ররা দেখে মাথানত করত যে একজন পণ্ডিত মানুষ হেঁটে যাচ্ছেন। আমাদের সময় ড. আবু মাহমুদ ছিলেন অর্থনীতির এবং আরও যারা শিক্ষক ছিলেন, আমরা তাদের দিকে সরাসরি তাকাতেও পারতাম না। কিন্তু এখন যখন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দিকে, যখন দেখি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দিকে, তাদের কথা যখন শুনি তখন লজ্জাই হয়।
তিনি আরও বলেন, গত ৫০ বছরে এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করলাম, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দেখে আমাদের লজ্জা হয়। ব্যবস্থাটা এমন একটা জায়গায় চলে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বরাদ্দ তো এখন শিক্ষায় দেওয়ার কথা না। দেবে তো মেগা প্রজেক্টগুলোতে। যেগুলোতে কমিশন পাওয়া যাবে, প্রচুর আয় হবে।
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মনসুর মুসার সভাপতিত্বে ও কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সংবর্ধনা গ্রন্থে আমাকে নিয়ে আমার বন্ধু, সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীরা যে অনুভূতি প্রকাশ করেছে, তা দেখে আমি আনন্দিত। এর মধ্য দিয়ে আমি নিজেকে নতুন করে চিনেছি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহছানুল হক মিলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক জাহেদুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুর রহমান সিদ্দিকী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক রেজাউল করীম, আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিণী লাকী নাসরিন প্রমুখ।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন- সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক খলিলুর রহমান, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক আবদুর রহমান, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, অধ্যাপক ইয়ারুল কবির, অধ্যাপক শের মুহাম্মদ, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসুদ, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, সালেহ মাহমুদ রিয়াদ, সাংবাদিক এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।