আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ কারণে আগে ঘর গুছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। মূল সংগঠন শক্তিশালী করার পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলের শূন্য পদগুলো পূরণের পাশাপাশি যেসব অঙ্গ সংগঠনের কমিটিগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। অঙ্গ সংগঠনগুলোতে সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। সংগঠন দুটির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা হচ্ছে। শিগগিরই এই দুই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়া হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ত্যাগী ও পরীক্ষিত সাবেক ছাত্র নেতাদের একটি তালিকাও বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে।
২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পর ১১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সূত্র জানায়, এবার আহ্বায়ক কমিটি না দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার পক্ষে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এবারের কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে।
যুবদলের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সভাপতি পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সহ-সভাপতি আলী আকবর চুন্নু, মোনায়েম মুন্না, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, জাকির হোসেন সিদ্দিকী, জাকির হোসেন মুন্না ও মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু। তারা সবাই দীর্ঘদিন ধরে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। এর বাইরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন-সাবেক ছাত্রনেতা রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন ও ইসহাক সরকার প্রমুখ।
স্বেচ্ছাসেবক দল
২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর প্রয়াত শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই দুজনই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদে ছিলেন।
মেয়াদ শেষের এক বছর পর ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ১৪৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয় স্বেচ্ছাসেবক দলের। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিউল বারী বাবু মৃত্যুবরণ করলে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক দলে কমিটি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলে সভাপতি পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় আছেন-বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার, সহসভাপতি আনু মোহাম্মদ শামীম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। এর সবাই ছাত্রদলের সাবেক নেতা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদকের পদে বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী, সহসাধারণ সম্পাদক সর্দার মো. নুরুজ্জামান, সহদপ্তর সম্পাদক নাজমুল হাসান। এর বাইরে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ আলোচনায় আছেন।
এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতেও শূন্য পদে সাবেক ছাত্রনেতাদের পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক, সহ-সম্পাদকসহ নির্বাহী কমিটির অন্তত অর্ধশতাধিক পদ শূন্য রয়েছে। এসব শূন্য পদে সাবেক ছাত্র নেতাদের রাখতে চায় হাইকমান্ড। এজন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করতে বিএনপির দুজন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া সাংগঠনিক জেলা ও এর অধীনে থাকা ইউনিটগুলোতেও পরীক্ষিত ছাত্রনেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন, তাদের নেতৃত্বের সামনের সারিতে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমাদের সিনিয়রদের। সেইসঙ্গে অতীতের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা সফলতা দেখিয়েছেন, কিন্তু দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই তাদেরও মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই আছি। আর আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে হলে তরুণ-যুবকদের বিকল্প নেই। জন্য আমরা তরুণ ও যুবসমাজকে সংগঠিত করছি। যারা দীর্ঘদিন দলের বাইরে রয়েছেন তাদের দলে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।