নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রড় দিয়ে পিটিয়ে প্রধান শিক্ষকের পা ভেঙ্গে দিয়েছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। বর্তমানে আহত শিক্ষক নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে কবিরহাট পশ্চিম বাজারে সুবাস চন্দ্র পালের দোকানের সামনে এই ঘটনা ঘটে। আহত শুধাংসু রঞ্জন সিংহ কবিরহাট উপজেলার মির্জা নগর গ্রামের গোপাল রঞ্জন সিংহের ছেলে এবং নুর সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষক শুধাংসু রঞ্জন সিংহ বলেন, আমার প্রতিবেশী সুবাস চন্দ্র পালের ছেলে প্রদেশ চন্দ্র পাল কিছুদিন আগে আমার একটি জমি রাতের আধারে জোরপূর্বক দখল করে মাটি ভরাট করার চেষ্টা করলে আমি তাদের বাঁধা দিই। পরের দিন কবিরহাট পৌরসভার মেয়র জহিরুল হক রায়হান সাহেবের কাছে গেলাম। মেয়র সাহেব বললেন আপনি আমার কথা বলে থানায় যান, সেখানে পিটিশন দেন। থানায় পিটিশন দেওয়ার পর পুলিশ আমাদেরকে শুক্রবার (০৭ এপ্রিল) কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলেন।
তিনি বলেন, থানায় বৈঠকের আগেই বৃহস্পতিবার রাতে আমি বাড়ি যাওয়ার পথে কবিরহাট পশ্চিম বাজারে সুবাস চন্দ্র পালের দোকানের সামনে একদল সন্ত্রাসী আমার চার পাশ ঘিরে ফেলে। এসময় সুবাস চন্দ্র পাল এবং তার ছেলে প্রদেশ চন্দ্র পালের নির্দেশে সুবাসের ছোট ছেলে রুপা চন্দ্র পাল আমাকে লোহার রড় দিয়ে আমার দুই পায়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। এতে আমার পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। আমার চার পাশে সন্ত্রাসীরা অবস্থান করায় তাদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।
পরে তারা সরে গেলে স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে আমি নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই।
আহত শিক্ষকের স্ত্রী রুমা রানী সিংহ বলেন, আমার স্বামী একজন শিক্ষক, আমিসহ আমার দুই মেয়েও শিক্ষক। আমাদের মালিকীয় ও দখলীয় জমি মন্দিরের নামে জোরপূর্বক দখল করতে চায় সুবাসের ছেলে প্রদেশ চন্দ্র পাল। এবিষয়ে থানায় অভিযোগ করায় তারা আমার স্বামীকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে পা ভেঙ্গে দিয়েছে।
আমরা একটি শিক্ষক পরিবার হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করছি।
অভিযুক্ত পশ্চিম দরাপ নগর কালী মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদেশ চন্দ্র পাল বলেন, বিরোধকৃত জমিতে মন্দ্রিরের জমি রয়েছে। ওই জমি ভরাট করতে গেলে শুধাংসু রঞ্জন সিংহ থানায় অভিযোগ করে। পরে স্থানীয় জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি উত্তেজনাকর বক্তব্য দিলে আমার ছোট ভাই উত্তেজিত হয়ে শুধাংসু রঞ্জন সিংহকে সামান্য মারধর করেছে। এই ঘটনায় আমরা অনুতপ্ত। বিষয়টি স্থানীয় মেয়র সাহেবের মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কবিরহাট পৌরসভার মেয়র জহিরুল হক রায়হান বলেন, বিষয়টি দুঃজনক, একজন শিক্ষক আরেকজন মন্দিরের সেক্রেটারী। শিক্ষক শুধাংসু রঞ্জন সিংহ তার জমি ভরাটের অভিযোগে থানায় লিখিত দরখাস্ত দেওয়ার পর তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষককে আমি হাসপাতালে দেখে আসছি। আগে তার চিকিৎসা হোক, পরবর্তীতে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আহত শিক্ষক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।