বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জাতীয় কমিটি গঠন করা উচিত মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, এ কথাটা বার বার বলেছি, আমরা কখনোই সমালোচনার জন্য সমালোচনা করছি না, সরকারকে সাহায্য করতে চেয়েছি। আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
সোমবার দুপুরে নিজের উত্তরার বাসায় কয়েকটি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন পর্যন্ত একটি জাতীয় কমিটি হয়নি। যেটা করা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ তো একশ ৬০ মিলিয়নের দেশ। এখানে একেবারের নিচের দিককার অর্থনীতি। সেখানে এই ধরনের সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে যদি একটি জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা যায়; সেটাই হবে দেশের জন্য ভালো কাজ।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে, এখনও সময় আছে জাতীয় কমিটি করার, এটা গঠন করা উচিত।
কীভাবে এই কমিটি হতে পারে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা আমি আগেও বলেছি। প্রধানমন্ত্রীকেই উদ্যোগ নিতে হবে, আপনার পলিটিক্যাল পার্টি, সিভিল সোসাইটি..। নট দ্যাট, এগুলোকে নিয়ে একখানে বসে মিটিং করতে হবে- তা বলছি না। ঘোষণা করে আপনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই এটা করতে পারেন।
‘তখন সবার মধ্যে একটা ধারণা আসবে- ‘উই আর ওয়ান’। আমরা এক। দে কেন ডু। অথবা ওইভাবে সব নিরাপত্তা রেখে যদি সভা করতে চান; তাও পারেন।’
এই মহামারীতে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ঘরবন্দি মানুষ বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষজনের জন্য খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
দেশের অর্থনৈতিক সংকটের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা দাঁড়াচ্ছে, সেটা হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষজনের অর্থনৈতিক সমস্যা।
তার মতে, বাংলাদেশে বেশিভাগ মানুষই এখন দিন আনে দিন খায়- এই বিশাল একটা অংশ তারা কিন্তু কয়েকদিন ধরে কোনো আয় করতে পারছেন না এবং এটা একটা টার্নিং পজিশনে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
‘সেই মানুষগুলোর জন্য যদি ইমিডিয়েটলি উপযোগী কার্য্করী ব্যবস্থা গ্রহণ করা না যায়; তাহলে কিন্তু একটা বড় রকমের বিপর্য্য় দেখা দেবে। যেটা আমরা ১৯৭৪ সালে দেখেছি, এই ধরনের বিপর্য্য় দেখা দেবে। এই বিষয়গুলো সরকারের দেখতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমি যেটা মনে করি, সেনাবাহিনীকে যদি সেই কাজে লাগানো যায়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বর যারা আছেন, তাদের সম্পৃক্ত করে যদি সেই কাজগুলো করা যায়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোকে যদি সম্পৃক্ত করা যায়, তাদেরকে একসঙ্গে করা যায়- অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। সেক্ষেত্রে বরাদ্দ থাকতে হবে, তার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী থাকতে হবে।
হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য কোনো রোগে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে …। আজকের পত্রিকায় আছে যে, একজন এপেনডিসাইটিজের রোগী ৮টা হাসপাতালে ঘুরে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে পারছেন না। আমরা যে কারণে বার বার বলেছি, বিষয়টাকে পুরোপুরি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে মানবিক দিক থেকে দেখে এই জাতিকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, এটা অস্তিত্বের প্রশ্ন। সেই অস্তিত্বের জন্য এখন সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। বিষয়টার দায় সরকারের, দায়িত্ব সরকারের।
‘তাকেই উদ্যোগটা নিতে হবে- বিরোধী দলকে কীভাবে কাজে লাগাবে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কীভাবে কাজে লাগাবে, পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করবে। এখানে সমস্যা অনেক। আমরা মনে করি, সরকারের অনেক অনেক বেশি দায়িত্ব, তাদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।’
সরকারের একটা ভুলের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি মনে করি, এটা বড় ভুল হয়েছে যে, ছুটি ঘোষণা করে তার দুদিন পর পর্যন্ত গণপরিবহন চালু রাখা। এতে করে সমস্ত মানুষ ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সমস্যাগুলো প্রথম থেকে তারা (সরকার) দেখলে এটা প্রকট আকার ধারণ করত না। লকডাউন যেটাকে বলে, তা সেভাবে হয়নি। যার ফলে দেখা গেছে, প্রথম দু-একদিন কক্সবাজারে পর্যন্ত মানুষ বেড়াতে গেছে, ছুটি কাটাতে সিলেটে গেছে। আমাদের দেশে সবাই তো সচেতন না, অনেকে বুঝতে পারেনি।