গত ৩ বছরে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে জন্ম নিয়েছে প্রায় ৭৬ হাজার শিশু। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) উপাত্ত অনুসারে, চলতি বছরের ৩১শে মে পর্যন্ত কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোয় তিন বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৯৭১টি। ধারণা করা হচ্ছে, এই শিশুগুলোর প্রত্যেকে তাদের মায়েরা বাংলাদেশে আসার পর জন্ম নিয়েছে। শিবিরগুলোর মোট জনসংখ্যার প্রায় নয় শতাংশ এ সংখ্যা। আন্তর্জাতিক শিশু বিষয়ক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, শিশুদের পুরো একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ চুরি হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আবদ্ধ অবস্থায় গত কয়েক বছর ধরে জন্ম নিয়েছে আনুমানিক ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭টি শিশু। বাংলাদেশের শরনার্থী শিবির ও মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের শিবিরের জনসংখ্যা বিশ্লেষণে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। রাখাইন থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার তিন বছরপূর্তি উপলক্ষে এ তথ্য প্রকাশ করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন।
তারা বলেছে, এই শিশুরা তাদের জন্য অনুপযুক্ত পরিস্থিতিতে বাস করছে। তারা যথাযথ শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যস্থা, চলাফেরার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের জীবন প্রায় পুরোটাই ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল।
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বছর বয়সী রুনার জন্ম হয় তার মায়ের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে দুর্বিষহ যাত্রার সময়। রুনা অপুষ্টিতে ভুগছে। তার মা হামিদা বলেন, আমি আমার সন্তানের শিক্ষা, ভবিষ্যৎ ও আচরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। অর্থ না থাকায়, আমি তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছি না। আমরা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছি না। আমরা তাদের ঠিকঠাক ভালোবাসতে পারছি না, যত্ন নিতে পারছি না। আমি তাদের ভালো খাবার দিতে পারছি না। তারা কিছু চাইলে, আমি দিতে পারি না।
সেভ দ্য চিলড্রেনের বাংলাদেশ শাখার পরিচালক অনো ভান মানেন বলেন, গত ৩ বছরে কক্সবাজারের শিবিরগুলোয় ৭৫ হাজারের বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে। প্রতিটি শিশুর জন্মই একটি আনন্দের মুহূর্ত। কিন্তু এই শিশুগুলো দুর্ভাগ্যের শিকার। তারা এমন এক জীবন নিয়ে জন্মেছে, যেখানে তাদের পরিবার কাজ করতে পারছে না। তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা সীমিত। নেই চলাফেরার স্বাধীনতাও।
তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের শিশুদের বড় স্বপ্ন দেখতে শেখাই। কিন্তু যেসব শিশুরা কখনো শরণার্থী শিবির ছাড়া কিছু দেখেনি তাদের আশা ও স্বপ্ন ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে মনে হয়। বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ পালিয়ে আসা শরণার্থীদের গ্রহণ করে নিয়েছে। কিন্তু তিন বছর হয়ে চললেও এ সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি। রোহিঙ্গা শিশু ও তাদের পরিবারকে অবশ্যই মিয়ানমারে নিজ ঘরে স্বেচ্ছায় ও মর্যাপূর্ণভাবে ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১২ সালে স্থাপিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের শিবিরে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত গত সাত বছরে জন্ম নিয়েছে আনুমানিক ৩২ হাজার ৬৬টি শিশু। ২১টি শিবিরজুড়ে সাত বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা এটি। পুরো বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বেশি এ সংখ্যা।