‘রেমিট্যান্সে’ বৈধ হচ্ছে ইয়াবা কারবারের অর্থ!

  • ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক
  • ২০২১-০৮-০৪ ০০:২৮:১৪
popular bangla newspaper, daily news paper, breaking news, current news, online bangla newspaper, online paper, bd news, bangladeshi potrika, bangladeshi news portal, all bangla newspaper, bangla news, bd newspaper, bangla news 24, live, sports, polities, entertainment, lifestyle, country news, Breaking News, Crime protidin. Crime News, Online news portal, Crime News 24, Crime bangla news, National, International, Live news, daily Crime news, Online news portal, bangladeshi newspaper, bangladesh news, bengali news paper, news 24, bangladesh newspaper, latest bangla news, Deshe Bideshe, News portal, Bangla News online, bangladeshi news online, bdnews online, 24 news online, English News online, World news service, daily news bangla, Top bangla news, latest news, Bangla news, online news, bangla news website, bangladeshi online news site, bangla news web site, all bangla newspaper, newspaper, all bangla news, newspaper bd, online newspapers bangladesh, bangla potrika, bangladesh newspaper online, all news paper, news paper, all online bangla newspaper, bangla news paper, all newspaper bangladesh, bangladesh news papers, online bangla newspaper, news paper bangla, all bangla online newspaper, bdnewspapers, bd bangla news paper, bangla newspaper com, bangla newspaper all, all bangla newspaper bd, bangladesh newspapers online, daily news paper in bangladesh, bd all news paper, daily newspaper in bangladesh, Bangladesh pratidin, crime pratidin, অনলাইন, পত্রিকা, বাংলাদেশ, আজকের পত্রিকা, আন্তর্জাতিক, অর্থনীতি, খেলা, বিনোদন, ফিচার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চলচ্চিত্র, ঢালিউড, বলিউড, হলিউড, বাংলা গান, মঞ্চ, টেলিভিশন, নকশা, ছুটির দিনে, আনন্দ, অন্য আলো, সাহিত্য, বন্ধুসভা,কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, অটোমোবাইল, মহাকাশ, গেমস, মাল্টিমিডিয়া, রাজনীতি, সরকার, অপরাধ, আইন ও বিচার, পরিবেশ, দুর্ঘটনা, সংসদ, রাজধানী, শেয়ার বাজার, বাণিজ্য, পোশাক শিল্প, ক্রিকেট, ফুটবল, লাইভ স্কোর, Editor, সম্পাদক, এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ, A Z M Mainul Islam Palash, Brahmanbaria, Brahmanbaria Protidin, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিদিন, Bandarban, Bandarban Protidin, বান্দরবন, বান্দরবন প্রতিদিন, Barguna, Barguna Protidin, বরগুনা, বরগুনা প্রতিদিন, Barisal, Barisal Protidin, বরিশাল, বরিশাল প্রতিদিন, Bagerhat, Bagerhat Protidin, বাগেরহাট, বাগেরহাট প্রতিদিন, Bhola, Bhola Protidin, ভোলা, ভোলা প্রতিদিন, Bogra, Bogra Protidin, বগুড়া, বগুড়া প্রতিদিন, Chandpur, Chandpur Protidin, চাঁদপুর, চাঁদপুর প্রতিদিন, Chittagong, Chittagong Protidin, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম প্রতিদিন, Chuadanga, Chuadanga Protidin, চুয়াডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা প্রতিদিন, Comilla, Comilla Protidin, কুমিল্লা, কুমিল্লা প্রতিদিন, Cox's Bazar, Cox's Bazar Protidin, কক্সবাজার, কক্সবাজার প্রতিদিন, Dhaka, Dhaka Protidin, ঢাকা, ঢাকা প্রতিদিন, Dinajpur, Dinajpur Protidin, দিনাজপুর, দিনাজপুর প্রতিদিন, Faridpur , Faridpur Protidin, ফরিদপুর, ফরিদপুর প্রতিদিন, Feni, Feni Protidin, ফেনী, ফেনী প্রতিদিন, Gaibandha, Gaibandha Protidin, গাইবান্ধা, গাইবান্ধা প্রতিদিন, Gazipur, Gazipur Protidin, গাজীপুর, গাজীপুর প্রতিদিন, Gopalganj, Gopalganj Protidin, গোপালগঞ্জ, গোপালগঞ্জ প্রতিদিন, Habiganj, Habiganj Protidin, হবিগঞ্জ, হবিগঞ্জ প্রতিদিন, Jaipurhat, Jaipurhat Protidin, জয়পুরহাট, জয়পুরহাট প্রতিদিন, Jamalpur, Jamalpur Protidin, জামালপুর, জামালপুর প্রতিদিন, Jessore, Jessore Protidin, যশোর, যশোর প্রতিদিন, Jhalakathi, Jhalakathi Protidin, ঝালকাঠী, ঝালকাঠী প্রতিদিন, Jhinaidah, Jhinaidah Protidin, ঝিনাইদাহ, ঝিনাইদাহ প্রতিদিন, Khagrachari, Khagrachari Protidin, খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি প্রতিদিন, Khulna, Khulna Protidin, খুলনা, খুলনা প্রতিদিন, Kishoreganj, Kishoreganj Protidin, কিশোরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ প্রতিদিন, Kurigram, Kurigram Protidin, কুড়িগ্রাম, কুড়িগ্রাম প্রতিদিন, Kushtia, Kushtia Protidin, কুষ্টিয়া, কুষ্টিয়া প্রতিদিন, Lakshmipur, Lakshmipur Protidin, লক্ষ্মীপুর, লক্ষ্মীপুর প্রতিদিন, Lalmonirhat, Lalmonirhat Protidin, লালমনিরহাট, লালমনিরহাট প্রতিদিন, Madaripur, Madaripur Protidin, মাদারীপুর, মাদারীপুর প্রতিদিন, Magura, Magura Protidin, মাগুরা, মাগুরা প্রতিদিন, Manikganj, Manikganj Protidin, মানিকগঞ্জ, মানিকগঞ্জ প্রতিদিন, Meherpur, Meherpur Protidin, মেহেরপুর, মেহেরপুর প্রতিদিন, Moulvibazar, Moulvibazar Protidin, মৌলভীবাজার, মৌলভীবাজার প্রতিদিন, Munshiganj, Munshiganj Protidin, মুন্সীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ প্রতিদিন, Mymensingh, Mymensingh Protidin, ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ প্রতিদিন, Naogaon, Naogaon Protidin, নওগাঁ, নওগাঁ প্রতিদিন, Narayanganj, Narayanganj Protidin, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ প্রতিদিন, Narsingdi, Narsingdi Protidin, নরসিংদী, নরসিংদী প্রতিদিন, Natore , Natore Protidin, নাটোর, নাটোর প্রতিদিন, Nawabgonj, Nawabgonj Protidin, নওয়াবগঞ্জ, নওয়াবগঞ্জ প্রতিদিন, Netrokona, Netrokona Protidin, নেত্রকোনা, নেত্রকোনা প্রতিদিন, Nilphamari, Nilphamari Protidin, নীলফামারী, নীলফামারী প্রতিদিন, Noakhali, Noakhali Protidin, নোয়াখালী, নোয়াখালী প্রতিদিন, Norai, Norai Protidin, নড়াইল, নড়াইল প্রতিদিন, Pabna, Pabna Protidin, পাবনা, পাবনা প্রতিদিন, Panchagarh, Panchagarh Protidin, পঞ্চগড়, পঞ্চগড় প্রতিদিন, Patuakhali, Patuakhali Protidin, পটুয়াখালী, পটুয়াখালী প্রতিদিন, Pirojpur, Pirojpur Protidin, পিরোজপুর, পিরোজপুর প্রতিদিন, Rajbari, Rajbari Protidin, রাজবাড়ী, রাজবাড়ী প্রতিদিন, Rajshahi , Rajshahi Protidin, রাজশাহী, রাজশাহী প্রতিদিন, Rangamati, Rangamati Protidin, রাঙ্গামাটি, রাঙ্গামাটি প্রতিদিন, Rangpur, Rangpur Protidin, রংপুর, রংপুর প্রতিদিন, Satkhira, Satkhira Protidin, সাতক্ষীরা, সাতক্ষীরা প্রতিদিন, Shariyatpur, Shariyatpur Protidin, শরীয়তপুর, শরীয়তপুর প্রতিদিন, Sherpur, Sherpur Protidin, শেরপুর, শেরপুর প্রতিদিন, Sirajgonj, Sirajgonj Protidin, সিরাজগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ প্রতিদিন, Sunamganj, Sunamganj Protidin, সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ প্রতিদিন, Sylhet, Sylhet Protidin, সিলেট, সিলেট প্রতিদিন, Tangail, Tangail Protidin, টাঙ্গাইল, টাঙ্গাইল প্রতিদিন, Thakurgaon, Thakurgaon Protidin, ঠাকুরগাঁও, ঠাকুরগাঁও প্রতিদিন, ক্রাইম প্রতিদিন, ক্রাইম, প্রতিদিন, Crime, Protidin, অপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, অমুবাচা, crimeprotidin

টেকনাফে বসে মিয়ানমারে অর্ডার দেওয়া হয়। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সেখান থেকে ইয়াবার চালান আসে টেকনাফে। যেদিন চালান আসে সেদিনই চলে যায় কক্সবাজার, ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে। মুহূর্তেই টাকা চলে আসে টেকনাফের ইয়াবা-কারবারিদের কাছে। সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে চলে যায় সৌদি আরব, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। 

পরের দিন সেই অবৈধ টাকা রেমিট্যান্স হিসেবে বৈধ হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে। সঙ্গে পাওয়া যায় ২ শতাংশ সরকারি প্রণোদনা। বর্তমানে এভাবেই চলছে ইয়াবা বিক্রির অর্থের লেনদেন!
 
অনুসন্ধানী রিপোর্টে এমন সব ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে টেকনাফ ও কক্সবাজারের ছয় ইয়াবা-কারবারিকে চিহ্নিতসহ তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের অবস্থান গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।

দেখা গেছে, মিয়ানমার ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অবস্থান করছেন ইয়াবা-কারবারিদের স্বজনরা। তাদের মাধ্যমে অবৈধ এ অর্থ বৈধের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। অভিনব এ কৌশল সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আঁচ করতে পারলেও তা প্রতিরোধে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ, প্রমাণের অভাব!

ইয়াবার অবৈধ অর্থ বৈধ হচ্ছে যেভাবে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য থেকে জানা যায়, অভিনব এ পন্থা অবলম্বনকারীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন টেকনাফ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ‘জাফর আহমেদ’ ওরফে ‘জাফর চেয়ারম্যান’। অনেকে তাকে ‘টিটি জাফর’ নামেও চেনেন। জাফর বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন। সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন টেকনাফের ইয়াবা-কারবারের মূল সিন্ডিকেট।

বাংলাদেশে ইয়াবা-কারবার ও আর্থিক লেনদেনের সার্বিক বিষয় দেখভাল করছেন জাফরের ছোট ভাই, টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান লেডু ও গফুর। ছেলে মোস্তাকও এ চক্রের সঙ্গে জড়িত।
 
স্থানীয়দের অভিযোগ, লেডু ও গফুর মিয়ানমার থেকে কাঠ ও গরু আমদানির আড়ালে ইয়াবার বড় বড় চালান বাংলাদেশে আনেন। নাফ নদী অথবা সাগর পাড়ি দিয়ে এসব চালান বাংলাদেশের সীমান্তে পৌঁছে দেয় একটি চক্র। এ চক্রের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি/নাসাকা) সদস্যসহ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কিছু বাংলাদেশি জড়িত। এছাড়া বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিজিবি’র কিছু সদস্যের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান রোধ করা যাচ্ছে না বলেও তাদের অভিযোগ।

বাংলাদেশে আসা ইয়াবার চালানগুলো স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেন মনিরুজ্জামান লেডু ও গফুর। মনিরুজ্জামান লেডুর বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, তার পরিবার টেকনাফের জালিয়া পাড়ায় থাকে। ২০১৮ সালে র‍্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ২০২০ সালে মাদক মামলায় গ্রেফতার হন। চলতি বছর জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় ইয়াবা-কারবারে জড়িয়ে পড়েন।

সম্প্রতি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত একটি বাহিনী হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। সেখানে জাফর আহমেদ ও মনিরুজ্জামান লেডুর নাম এসেছে। জানা গেছে, জাফর আহমেদ ও মনিরুজ্জামান লেডুর ঘনিষ্ঠ হুন্ডি ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে নিশ্চিত হওয়ার পর ইয়াবা-কারবারের টাকা চলে যায় দুবাইয়ে অবস্থিত জাফরের কাছে। জাফরের সঙ্গে বেশকিছু প্রবাসী বাংলাদেশির চুক্তি আছে। তাদের মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রির টাকা রেমিট্যান্স আকারে দেশে ফিরে আসে। এ জন্য দুবাইয়ের প্রবাসীদের লাখপ্রতি ৪০০ টাকা করে দেন জাফর।

এদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক প্রতিবেদনেও মাদক-কারবারি হিসেবে জাফর আহমেদের নাম এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা ইয়াবার আর্থিক লেনদেনের ৭০ ভাগই নিয়ন্ত্রণ করেন ‘জাফর আহমেদ’ ওরফে ‘টিটি জাফর’। দীর্ঘদিন ধরে দুবাই বসেই মিয়ানমারের বড় ইয়াবা-কারবারিদের নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু মিয়ানমার নয়, টেকনাফ ও পুরো কক্সবাজারে ইয়াবা চোরাচালানে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন তিনি। এ কাজে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তার ছেলে ও দুই ভাই। স্থানীয় রাজনীতিতেও তারা বেশ তৎপর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত পরিবারটি। জানা গেছে, জাফর আহমেদ আওয়ামী লীগ করলেও ৮/১০ বছর আগে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।
 
জানা যায়, টেকনাফের রাজের ছড়া এলাকার আব্দুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের মক্কায় থাকেন। সেখানকার একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। মাসিক আয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা! সমপরিমাণ টাকা প্রতি মাসে রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে পাঠান। সংশ্লিষ্ট একটি সংস্থার ধারণা, আব্দুর রহমান জাফর আহমেদ সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে তার কাছে ইয়াবা বিক্রির টাকা যায়। সেই টাকা রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে পাঠান তিনি।

তাহলে কেন আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না— এমন প্রশ্নের জবাবে ওই সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের অভাবে এর সঙ্গে জড়িত কাউকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না।

‘ইয়াবার অর্থ বৈধ’ প্রসঙ্গে যা বলছে সিআইডি
বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়গুলো তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। ১৫ বছর ধরে মাদক, মানব ও অর্থপাচার নিয়ে কাজ করা সিআইডি’র এক সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাম প্রকাশ না করে বলেন, মানবপাচার ও ইয়াবা-কারবারের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি শুনেছি এবং জেনেছি। তথ্যপ্রমাণও আছে। কিন্তু এসব টাকা রেমিট্যান্স আকারে দেশে আসছে— বিষয়টি শুনলেও কোনো তথ্যপ্রমাণ এখনও হাতে পাইনি।

তিনি আরও বলেন, মানি লন্ডারিং আইনে প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। এমনকি তাকে গ্রেফতারও করা যায় না। আমাদের প্রায় এক কোটির মতো প্রবাসী রয়েছেন। ধরে ধরে রেমিট্যান্সের হিসাব যাচাই করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। মাদক-কারবারিরা এমন সুযোগ নিতেই পারেন।

সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ থেকে মাদক-কারবারিদের বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে আমাদের কাছে। এমন কয়েকটি ঘটনা তদন্ত করেও দেখা হচ্ছে। বিদেশে যাওয়া সেই টাকা রেমিট্যান্স আকারে দেশে আসছে— এমন খবর শুনলেও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে অথবা তদন্তে এমন বিষয় এলে অবশ্যই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

নতুন নতুন ইয়াবা-কারবারিদের আধিপত্য, দিনমজুর থেকে ডন ‘মগ কাদির’ 
টেকনাফের আলোচিত নাম ‘আব্দুল কাদির’ ওরফে ‘মগ কাদির’। ২০০৩ সালের দিকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে। দীর্ঘদিন বাংলাদেশে থেকে কৌশলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে ‘মগ কাদির’ এখন বাংলাদেশের নাগরিক। সরেজমিন টেকনাফ পরিদর্শনে ঢাকা পোস্টের কাছে নামটি বেশ কয়েকবার উচ্চারিত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ২০০৩ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসেন মগ কাদির। তিনি টেকনাফ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি খাস জমির ওপর একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে থাকতেন। ২০১৩-১৪ সালের দিকে কাজ নেন টেকনাফ স্থলবন্দরে। বন্দরে বিজিবি’র জন্য আসা মালামাল জাহাজ থেকে মাথায় তুলে গুদামে রাখতেন। গুদাম থেকে সেগুলো আবার তুলে দিতেন গাড়িতে। কয়েক বছর পর সেই মগ কাদির শ্রমিকদের মাঝি (শ্রমিক নেতা) হয়ে যান।

পরবর্তীতে বিজিবি’র গুদাম বন্ধ হয়ে গেলে তিনি মানবপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তাকে টাকা দিয়েছেন— এমন দুই ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের।

এদিকে, কক্সবাজার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মগ কাদির ইয়াবা-কারবারের সঙ্গেও জড়িত। তার অনেক আত্মীয় মিয়ানমারে থাকেন। এ সুযোগে তিনি ইয়াবার রমরমা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। টেকনাফ বন্দরের একজন শ্রমিক হয়েও বর্তমানে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার ও টেকনাফে তিনটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও ইয়াবা-কারবারে জড়িয়ে পড়েন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৩ সালে বাংলাদেশে এসেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করেন মগ কাদির। তবে টেকনাফের রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল করা হয় তার এনআইডি। কয়েক বছর আগে আবারও তিনি এনআইডি সংগ্রহ করেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ‘শেল্টার’ পান মগ কাদির
সরেজমিন অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, টেকনাফের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মগ কাদিরকে বেশ প্রশ্রয় দেন। কারণ, তিনি মগ ভাষায় (আরাকানি ও বাংলার মিশ্রিত ভাষা) বেশ পারদর্শী। মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে হলে এ ভাষা জানা প্রয়োজন। মিয়ানমারের যেসব ব্যবসায়ী টেকনাফ বন্দরে পণ্য নিয়ে আসতেন তাদের সঙ্গে কথা বলতে দোভাষী হিসেবে স্থানীয়রা তাকে কাজে লাগাতেন। এছাড়া নিজের ইয়াবা চালানের পাশাপাশি অন্যদের চালান আনতেও সহযোগিতা করেন মগ কাদির।

টেকনাফের স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদীর ভাই মৌলভী মুজিবুর রহমান। ২০১৮ সালে মাদক-কারবারিদের যে তালিকা প্রকাশ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, সেখানে মুজিবুর রহমানের নামও রয়েছে। মগ কাদির তার ব্যবসায়িক পার্টনার। ইয়াবা-কারবারের টাকা তারা ভাগাভাগি করে নেন— অভিযোগ স্থানীয়দের।

গত কয়েকদিনে মগ কাদিরের ব্যক্তিগত নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে একই নম্বরে কল দিলে ‘আনরিচেবল’ বলা হয়।

এনআইডি বাগিয়ে কালাবির রমরমা ইয়াবা ব্যবসা
টেকনাফের জমিলা খাতুন। দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা-কারবারের সঙ্গে নামটি জড়িত। শুধু টেকনাফ নয়, রাজধানী ঢাকায়ও নামটি বেশ পরিচিত। টেকনাফের স্থানীয়রা তাকে ‘কালাবি’ বলে চেনেন। তারা জানান, কালাবি নব্বইয়ের দশকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসেন। পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্রও বাগিয়ে নেন। এনআইডি নম্বর ২২২০১...৭৩৫। সেখানে তার পেশা হিসেবে উল্লেখ আছে গৃহিণী। ঠিকানা- চৌধুরী পাড়া, টেকনাফ, কক্সবাজার।

নাম প্রকাশ না করে কক্সবাজারের এক ইয়াবা-কারবারি বলেন, কালাবির অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন মিয়ানমারে থাকেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও তার আত্মীয়-স্বজন আছেন, রাজধানী ঢাকায় আছেন কিছু ঘনিষ্ঠজন। মিয়ানমারে থাকা স্বজনদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে সেখান থেকে ‘মাছ’ আনেন। কার্টনভর্তি মাছ আসে, সঙ্গে থাকে মরণনেশা ইয়াবার চালানও। পরবর্তীতে তা টেকনাফ হয়ে কক্সবাজার, কক্সবাজার হয়ে চলে যায় রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় কালাবির ঘনিষ্ঠজনরা সেগুলো বিক্রি করেন।
 
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে ঢাকার মতিঝিল, শাহজাহানপুর, মুগদা থানায় মাদকদ্রব্য আইনে পাঁচটি মামলা রয়েছে। ইয়াবার রমরমা কারবার চালিয়ে উপার্জন করেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।

বিজিপির (নাসাকা) সহযোগিতায় বাংলাদেশে ইয়াবার পাচার
বাংলাদেশে ইয়াবা তৈরির কোনো কারখানা নেই। মিয়ানমার থেকে আসে শতভাগ চালান। এর মধ্যে ৯০ ভাগই আসে দেশটির মংডু সীমান্ত থেকে। এরপর নাফ নদী অথবা সাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চালানগুলো।

টেকনাফ ও কক্সবাজারের বেশ কয়েকজন ইয়াবা-কারবারি ও সংশ্লিষ্ট জেলেদের কথা হয়। তারা জানান, মিয়ানমার থেকে তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি/নাসাকা) সামনেই নৌকায় মাছের সঙ্গে তোলা হয় ইয়াবা। বাহিনীর সদস্যরা বিষয়টি জেনেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের এক গোয়েন্দা সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা প্রায়ই নাফ নদীতে ইয়াবা-কারবারিদের আটক করি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি। আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করি, কীভাবে তারা ইয়াবাগুলো আনে। তাদের প্রায় সবারই উত্তর, নাসাকা বাহিনী ইয়াবা আনতে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে। সাধারণত বাংলাদেশ থেকে কোনো নৌকা সেখানে গেলে তারা তল্লাশি চালায়। তবে, মিয়ানমার থেকে যেসব মাছ ধরার নৌকা বাংলাদেশে আসে, সেগুলোতে তল্লাশি চালায় না তারা। অনেক সময় কারবারিরা নাসাকার সামনেই ইয়াবাগুলো মাছের নৌকায় ঢোকায়। তারা বাধা দেয় না।

ইয়াবার কারখানাগুলো মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় দ্রুত তা বাংলাদেশে সরবরাহ করা যায়— মন্তব্য করেন ওই গোয়েন্দা সদস্য।

এদিকে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত ইয়াবার কারখানাগুলোর তালিকা দিয়ে তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু দেশটির সরকার সেই অনুরোধ রাখেনি। উল্টো সেসব কারখানায় দিনদিন ইয়াবার উৎপাদ যেন বেড়েই চলেছে। 

স্থানীয়রা জানান, নাসাকার সহায়তায় প্রায় প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের কাছাকাছি সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে ইয়াবার কারখানা সরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে বলেছি। সেগুলো বন্ধের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারই বলতে পারবে।’

স্থানীয়দের চোখে বিজিবির ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ
২০১৯ সালের একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্থানীয় কয়েকজন অধিবাসী ও জেলে জানান, নাসাকার (বিজিপি) একটি স্পিডবোট নাফ নদীর দুই নম্বর স্লুইস গেট সীমানা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের তিনজনের উপরের অংশে নাসাকার ইউনিফর্ম (পোশাক) ছিল, নিচে পরা ছিল সাধারণ প্যান্ট। বিজিবি’র ট্রলার দেখতে পাওয়ায় তাদের ধাওয়া দেয়। কিন্তু গতির কারণে বিজিবি অনেক পিছিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নাসাকার স্পিডবোটে ত্রুটি দেখা দেয়। বিজিবি’র ট্রলারটি তাদের ধরে ফেলে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই সময় নাসাকার স্পিডবোটে ১০ কাট (১০ কার্টন, প্রতি কাটে ১০ হাজার পিস ইয়াবা থাকে) ইয়াবা পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো ‘জব্দ’ দেখানো হয়নি। এমনকি অবৈধ ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে নাসাকার ওই তিন সদস্যসহ বাকিদের গ্রেফতার দেখানো হয়নি। পরের দিন তিনজনের ইউনিফর্ম খুলে ‘মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী সাধারণ নাগরিক’ হিসেবে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আর উদ্ধার হওয়া ইয়াবাসহ বাকি মালামাল নাজির পাড়ার আবদুল্লাহ বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
 
নাফ নদীর জেলেরা (বাংলাদেশি) অভিযোগ করেন, প্রায় সময়ই ইয়াবার চালান ধরা পড়ে। কিন্তু দেখা যায়, ইয়াবাগুলো রেখে কারবারিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবে চললে ইয়াবা আসা বন্ধ হবে কীভাবে?

নাফ নদীতে ৩০ বছর ধরে মাছ শিকার করেন মুক্তার আলী (ছদ্মনাম)। প্রতি রাতেই নদীতে মাছ ধরতে যান।  তিনি বলেন, প্রায়ই দেখি, মাছ ধরার নৌকায় নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ইয়াবার চালান। নৌকা দেখলেই বোঝা যায়। কারণ, তারা তো মাছ ধরে না। মাঝেমধ্যে নৌকাগুলো বিজিবি’র টহল দলের সামনে পড়ে। এ সময় বিজিবি বাঁশি বাজায়। বাঁশির শব্দ শুনে ইয়াবা-কারবারিরা হয় নদীতে ঝাঁপ দেয়, না হয় অন্য নৌকায় পালিয়ে যায়। পরে মালামালগুলো (ইয়াবার চালান) উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় বিজিবি। তাদের আটক করার কোনো তৎপরতা দেখা যায় না।

‘প্রায়ই এমন ঘটনা চোখে পড়ে। উদ্ধারের পর নিজেদের সোর্স দিয়ে ইয়াবাগুলো পাশের বাজারে বিক্রি করে দেন বিজিবি সদস্যরা’— অভিযোগ মুক্তার আলীর।

সর্বশেষ অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ১০ রমজানের রাতে নাফ নদী থেকে চিংড়ি তুলে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ নদীর পাড়ে প্রচুর হই-হুল্লোড় শুনলাম। এগিয়ে দেখি, বিজিবি চার কাট ইয়াবা (৪০ হাজার পিস) উদ্ধার করেছে। পরের দিন দেখলাম, কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বিজিবি’র সোর্সরা মালামাল বাইরে বিক্রি করে দিয়েছে।

বিজিবি’র সোর্স কারা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় বেশ কয়েকজন রয়েছেন। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আইয়াজ, আক্তার হোসেন, মোহাম্মদ শুক্কুর ও টেকনাফের নাজিরপাড়ার আবদুল্লাহ উল্লেখযোগ্য। তারা শুধু বিজিবি’র সঙ্গেই কাজ করে। উদ্ধার হওয়া ইয়াবা বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায় তার ১৫ শতাংশ রাখে তারা, বাকি টাকা বিজিবিকে দেয়। বিজিবি’র উদ্ধার করা ইয়াবা বিক্রি ছাড়া তারা আর কোনো কাজ করে না। স্থানীয়রা তাদের ‘বেকার’ হিসেবেই চেনে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিজিবি’র ওই চার সোর্সের প্রত্যেকের রয়েছে দালান বাড়ি। রামু, কলাতলী ও টেকনাফে তারা প্রচুর বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছে। অথচ, স্থানীয়রা জানেন তারা ‘বেকার’।

নাফ পাড়ের লেডুর চিংড়ির ঘের যেন ‘ইয়াবার আড়ত’
টেকনাফের উনচি প্রাং এলাকার ২১ বছরের যুবক সাকিব (ছদ্মনাম)। পাঁচ বছর ধরে নাফ নদীতে মাছ শিকার করেন। কীভাবে ইয়াবার চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করে— জানতে চাইলে বলেন, প্রতিদিনই মিয়ানমার থেকে মাছবোঝাই ছোট ছোট বোট (নৌকা) বাংলাদেশে ভেড়ে। কিছু কিছু বোটে ইয়াবার চালান আসে। প্রায় প্রতিটি বোট বিজিবি’র জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেভাবে চেক (তল্লাশি) করা হয় না।

তিনি বলেন, মাছের যে প্লাস্টিকের বক্স, ওই বক্সের ওপরে ও নিচে থাকে মাছ। মাঝখানে থাকে ইয়াবাভর্তি প্যাকেট। দেখে বোঝার কোনো উপায় থাকে না। পরে বোটগুলো নাফ নদীর পাড়ের চিংড়ির ঘেরগুলোতে ভেড়ে। আর বিশেষ বোটগুলো ভেড়ে লেডুর চিংড়ির ঘেরে। সেখানে চালান খালাস হয়, রাখা হয় কয়েক দিন। পরে সুযোগ বুঝে মাছ নেওয়ার নামে ইয়াবা-কারবারিরা তা নিয়ে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ের একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সালাউদ্দিন (ছদ্মনাম) নামের এক যুবক বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই একটি মাছ ধরার নৌকা থেকে তিন কাট (৩০ হাজার) ইয়াবা জব্দ করা হয়। বিজিবি’র বাঁশির শব্দে কারবারিরা পালিয়ে যায়। অথচ, একটু চেষ্টা করলে তাদের ধরা যেত।’ সাত বছর নাফ নদীতে কাঁকড়া ও মাছ ধরা সালাউদ্দিনের সঙ্গে একই সুরে কথা বলেন টেকনাফের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। 

তার মন্তব্য, ‘সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার চালান আসে। সবাই এটি জানে। বিজিবি’র টহল একটু জোরদার হলেই বাংলাদেশে কোনো ইয়াবার চালান প্রবেশ করতে পারত না। অথচ, সেটি করা হচ্ছে না। আসলে তারা চায় না দেশে ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হোক।’

যারা ইয়াবার ব্যবসা করে তারাই বিজিবিকে অপবাদ দিচ্ছে : মুখপাত্র
সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিজিবি’র বিরুদ্ধে টেকনাফের স্থানীয়দের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীটির পরিচালক (অপারেশন) ও মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। 

তিনি বলেন, ‘ইয়াবার বিরুদ্ধে অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। এতে কোনো সদস্যের যোগসাজশের প্রমাণ মিললে অবশ্যই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। বিভিন্ন সময় সেটি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইয়াবার ব্যবসা বিজিবি করে না, বিজিবি ইয়াবা আনেও না। বরং পাচার বন্ধ করাই বিজিবি’র কাজ। যারা ইয়াবার ব্যবসা করে তারাই সবসময় বিজিবিকে এ ধরনের অপবাদ দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ইয়াবার চোরাচালান বন্ধে নাফ নদীতে বিজিবি’র যে টহল ছিল সেটি দিগুণ করা হয়েছে। এরপরও ইয়াবা আসে। আমরা ইয়াবা ধরতে অভিযানে যাই, অনেক সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। আমাদের সদস্যরা আহত ও গুলিবিদ্ধ হন। অধিকাংশ সময় পাচারকারীরা ইয়াবা ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ কারণে ইয়াবা জব্দ হলেও আসামি আটক করা সম্ভব হয় না।

‘আমাদের বর্ডার সার্ভিল্যান্স সিস্টেম স্ট্রং করা হয়েছে। এ সিস্টেমের অধীন এলাকায় ইয়াবা পাচারের সুযোগ নেই বললেই চলে। বিজিবিকে সহযোগিতার পাশাপাশি টেকনাফবাসী যদি মাদকের ভয়াবহতার বিষয়ে সচেতন হতো তাহলেই ইয়াবার পাচার বন্ধ হয়ে যেত।’

শাস্তি নিশ্চিত হলে ব্যবসাও বন্ধ হবে : পুলিশ
ইয়াবার কারবার বন্ধে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ইয়াবার কারবার বন্ধে চট্টগ্রামে গঠিত টাস্কফোর্সের কার্যক্রম বৃদ্ধি করা, সীমান্তবর্তী এলাকায় যৌথ অভিযান এবং জনসচেতনতামূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কেউ যাতে মাদককে ব্যবসা হিসেবে না নেয় সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মাদক-কারবারিদের শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা করছি। চট্টগ্রাম বিভাগে বর্তমানে মাদকের মোট ৬৫ হাজার মামলা পেন্ডিং রয়েছে। মামলাগুলোর বিচার যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সেজন্য পিপিসহ (রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি) সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করে যাচ্ছি।’

ইয়াবার ডিমান্ড বন্ধে কাজ করতে হবে : র‍্যাব
টেকনাফ ও কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে ভয়ংকর মরণ নেশা ইয়াবার চালান। এটি বন্ধে করণীয় কী— জানতে চাওয়া হয় র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের কাছে। 

তিনি বলেন, ডিমান্ড (চাহিদা) থাকলে সাপ্লাই (সরবরাহ) থাকবেই। আমরা সবসময় অভিযান চালাই। তবে যখন এটি বেশি চলে, তখন ইয়াবার সাপ্লাই কমে যায়, দাম বেড়ে যায়। কিন্তু ইয়াবা আসা বন্ধ হয় না। ডিমান্ড থাকলে সরবরাহ থাকবেই। সরবরাহ বন্ধ করতে হলে আমাদের ডিমান্ড বন্ধ করতে হবে। আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে ইয়াবার ডিমান্ড বন্ধের কাজটি করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

 
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
-->

Shotoborshe Mujib, A Z M Mainul Islam Palash, Crime Protidin Media And Publication