যশোর সংলগ্ন মাগুরার আড়পাড়া সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ৫০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ১২০ টন চাল গায়েব হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে! তবে, গায়েব হওয়া চালের পরিমাণ আরও বেশি বলে অভিযোগ করেছেন খাদ্য বিভাগের একাধিক সূত্র। মাগুরার ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) মনোতোষ কুমার মজুমদার ও আড়পাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান শফিক যোগসাজশ করে এ কাজ করেছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে খুলনা বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা (আরসি ফুড) আব্দুস সালাম আড়পাড়া খাদ্যগুদাম পরিদর্শন করেন। ওই সময় গুদামের মধ্যে বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে তার চোখে। তখন তিনি মাগুরার ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। আরসি ফুডের নির্দেশে মনোতোষ কুমার মজুমদার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। যদিও এই তদন্ত কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে মনোতোষ মজুমদার সময়ক্ষেপণ করেন বলে একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন।
তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে মুহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মাহদী হাসান শিহাবকে। অপর দুই সদস্য হচ্ছেন- মাগুরা সদর এরিয়া ইন্সপেক্টর রতন কুমার ও কারিগরি পরিদর্শক আনিছুর রহমান।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আড়পাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান শফিককে বদলি করা হয়েছে। তাকে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে চারটি গুদামের ১ হাজার ৬০০ টন চাল বুঝিয়ে দেয়ার কথা। সেটি বুঝিয়ে না দিয়েই ছাড়পত্র নেয়ার চেষ্টা করেন শফিক। যেহেতু, আরসি ফুড তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সেই কারণে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শফিক ছাড়পত্র নিতে পারছেন না। অপর একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, শফিক ইতোমধ্যে আত্মসাৎ করা চালের কিছু অংশ গুদামে ঢুকিয়েছেন। এ কাজেও তাকে সহযোগিতা করেছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনোতোষ মজুমদার।
একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, মনোতোষ কুমার মজুমদার যশোর সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা থাকাকালে নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে খাদ্য বিভাগের অনেক কর্মকর্তার সাথে তার বিবাদ তৈরি হয়। এমনকি ওই সময় ইমারত নামে একজন উপ-পরিদর্শকের হাতে তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। ওই ঘটনায় মনোতোষ কুমার মজুমদারকে যশোর থেকে বরিশালে বদলি করা হয়। সেখান থেকে তিনি নড়াইলে আসেন। নড়াইলের পর যান বাগেরহাটে। বাগেরহাট থেকে মাগুরা সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। এর পর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পদ খালি হওয়ায় মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে তিনি ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। মাগুরার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মনোতোষ মজুমদার ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হওয়ার পর নতুন করে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তিনি নাকি খাদ্যমন্ত্রী সাধন কুমার মজুমদারের পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে প্রচার করছেন। এই প্রচারের মাধ্যমে তিনি নানাভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে মাগুরা খাদ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন। যশোরের বেজপাড়ায় আলীশান বাড়িতে বসবাস করা মনোতোষ মজুমদার ইদানীং বদলি-বাণিজ্য করছেন বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে। অনিয়মের অভিযোগে ইতোমধ্যে আড়পাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিককে সরিয়ে দিয়ে মাগুরা সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিককে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নুরে আলম সিদ্দিক বলেছেন, তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। তাদের তদন্ত শেষে গুদামের মালামাল বুঝে পেয়ে অফিসিয়ালি দায়িত্ব নেবো। সরিয়ে দেয়া গুদাম কর্মকর্তা শফিক বলেন, আমাকে বদলি করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। যদি কোনো শর্টেজ থাকে তাহলে পূরণ করে দেবো।
তদন্ত কমিটির প্রধান মাহদী হাসান শিহাব বলেন,গত কয়েক দিনে কেবল একটি গুদামের চালের বস্তা যাচাই করা হয়েছে। এখনো তিনটি গুদাম যাচাই করতে হবে। এতে এখনো সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। সব গুদাম যাচাই করার পরই কী হয়েছে তা স্পষ্ট করে বলা যাবে।
এ বিষয়ে মাগুরার ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনোতোষ কুমার মজুমদার বলেন, আড়পাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমানকে বদলি করার পর সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিককে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি মালামাল ওজন করে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেন। তখন শফিককে অব্যাহতি দিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি যাচাই-বাছাই করছে। ডিসি ফুডের সহযোগিতায় চাল সরানোর পর জানাজানি হওয়ায় কৌশলে পূরণ করে পার পাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে যে অভিযোগ সে বিষয়ে মনোতোষ মজুমদার বলেন, আগে বুঝতে পারলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতাম।
আরসি ফুড আব্দুস সালামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ডিসি ফুডের সাথে কথা বলতে বলেন।