করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গোমূত্র পানের হিড়িক এখন দিল্লি ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এসে পৌঁছেছে। এর আগে ভারতের রাজধানীতে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করেছিল কট্টরপন্থী হিন্দুমহাসভা।
সংগঠনটির প্রধান চক্রপানি মহারাজ নিজেও সেই পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন। সোমবার কলকাতায় ‘গোমাতার পুজো’ এবং ‘গোমূত্র পানের আসর’ বসালেন আরেক বিজেপি নেতা।
স্থানীয় জোড়াসাঁকো বিজেপি নেতা নারায়ণ চ্যাটার্জি এদিন গোমূত্র পান করালেন ভারতীয়দের। আনন্দবাজারপত্রিকার খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।
করোনাভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এই নেতা বলেন, গোমূত্র পানই করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়েছে, প্রথমে ধুপ-ধুনো-ফুল-ফল-মিষ্টান্নে গোমাতার পুজো, রুটি খাইয়ে গরু এবং বাছুরের সেবা। তার পরে ঘটিতে করে গোমূত্র বিতরণ করা হয়েছে।
প্রকাশ্যেই স্থানীয় লোকজনের মুখে আলগোছে গোমূত্র ঢেলে দিতে দেখা গেছে ওই বিজেপি নেতাকে। করোনা রোধের নিদান হিসেবে গোমাতার পুজো এবং গোমূত্র পানের ওই আসরে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদেরও বেশ অকাতরেই গোমূত্র পান করতে দেখা গেছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক পুলিশ কনস্টেবলের হাতেও গোমূত্র ঢেলে দেন বিজেপি নেতা। হাতের তালুতে চুমুক দিয়ে তিনি তা খেয়েও নেন।
শুধু গোমূত্র অবশ্য নয়, লাড্ডুও ছিল গোমাতার প্রসাদ হিসেবে। তবে লাড্ডু খেতে হলে আগে গোমূত্র পান করতে হবে— এই রকম শর্ত রাখা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
কলকাতার ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ খোঁচা দিয়ে বলেন, যাদের চিড়িয়াখানায় থাকার কথা, তারা বাইরে থাকলে এই রকমই হয়।
আর কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর উদ্বেগ, বিজ্ঞানের উল্টো পথে হেঁটে করোনা সংক্রমণ রোখার নামে যেভাবে গোমূত্র পান করানো হচ্ছে, তার ভয়ঙ্কর ফল হতে পারে।
তার প্রশ্ন, গ্রামাঞ্চলে মানুষ যদি দলে দলে গোমূত্র পান করে নতুন কোনও সংক্রমণের শিকার হন, তা হলে কে দায়ী থাকবে?
ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা অমিতাভ নন্দীর মতে, গোমূত্রের মাধ্যমে ভাইরাস ভাল হওয়ার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত বিশ্বে পাওয়া যায়নি। এই ভাইরাস আগে কখনও ভারতে আসেনি। এর বয়স মোটে তিন মাস। তাও ভারতে এসেছে এই সবে।
তিনি বলেন, যারা এ সব প্রচার চালাচ্ছেন, তারা কোন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করলেন? কী ভাবে নিশ্চিত হলেন যে এতে রোগ সারে? এই অপপ্রচার অবৈজ্ঞানিক ও ভণ্ডামি ছাড়া আর কিচ্ছু নয়।
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ওই কর্মসূচির সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব কারওকে এই রকম কোনও কর্মসূচি আয়োজন করতে বলেননি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও বলেননি যে, করোনা রুখতে গোমূত্র পান করান। যিনি এ সব করেছেন, তিনি নিজের দায়িত্বে করেছেন।