জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করতে পারাকে জীবনের বড় একটি পাওয়া বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা জেগে রইব তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে।’
আজ মঙ্গলবার রাত আটটায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী-মুজিব বর্ষ উদযাপনের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব বর্ষের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশের নাগরিক, প্রবাসী ও বিশ্ববাসীকে মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতাও জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ ১৭ই মার্চ। ১৯২০ সালের আজকের দিনে এই বাংলায় জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের মর্যাদা। তাই তো তিনি আমাদের জাতির পিতা।’ তিনি আরও বলেন, দুঃখী মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬-এ মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ উদ্যাপন করা হবে। ২০২১ সালে উদ্যাপিত হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। তিনি জানান, বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশ, ইউনেসকো, ওআইসি-সহ আন্তর্জাতিক সংস্থা মুজিব বর্ষ উদযাপনে অংশীদার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মুজিব বর্ষ পালনের সুযোগ পেয়েছি। এ যে আমাদের জীবনে কত বড় পাওয়া, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর প্রতি, যাঁরা আমার দল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরপর তিনবার সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে মুজিব বর্ষ উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন।’
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মুজিব বর্ষ উদযাপন করা হবে। করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশি অতিথিদের সফর স্থগিত করা হয়েছে। তবে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নমগেয়েল ওয়াংচুক, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভালারি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ আল ওথাইমিনসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষী ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
জাতির পিতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু অকাতরে বিলিয়ে দিতেন তাঁর জামাকাপড়, বই, ছাতা এবং যার যখন যা প্রয়োজন মনে করতেন, তাকে নিজের জিনিস দিয়ে দিতেন। নিজের খাবারও তিনি ভাগ করে খেতেন। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই তিনি আনন্দ পেতেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের জীবনের কোনো চাওয়া–পাওয়া ছিল না বঙ্গবন্ধুর। বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত, সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর সে ত্যাগ বৃথা যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন। নিজেদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। গড়তে হবে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। শিশু-কিশোর, তরুণ সমাজের কাছে দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসার আবেদন জানিয়ে বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন, সেভাবেই ভালোবাসতে হবে। তাঁর আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।
জাতির পিতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পিতা, ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে তোমাকে। তোমার দেহ রক্তাক্ত করেছে। তোমার নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি তোমার রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের অন্বেষণে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, তোমার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তোমার ত্যাগের মহিমায়। পিতা, তোমার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তুমি ঘুমিয়ে আছ টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতা মাতার কোলের কাছে। তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা জেগে রইব তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে এ দেশের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। তোমার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন। কবিগুরুর ভাষায় তাই বলতে চাই—
‘তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি।
তোমার সেবার মহৎ প্রয়াস সহিবারে দাও ভকতি।’