• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৩ অক্টোবর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

যিনা, ব্যভিচার ও ধর্ষণ নিয়ে যা বলছে ইসলাম!

এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ

যিনা বা জিনা হলো অবিবাহিত দুইজন মানুষের মধ্যে যৌনক্রিয়া অর্থাৎ বিবাহোত্তর যৌনকর্ম (বিবাহিত মুসলিম পুরুষ এবং বিবাহিত মুসলিম নারীর মাঝে সঙ্ঘটিত, যারা একে ওপরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নয়) এবং বিবাহপূর্ব যৌনকর্ম (অবিবাহিত মুসলিম পুরুষ এবং অবিবাহিত মুসলিম নারীর মাঝে সঙ্ঘটিত)। যেমনঃ 

১. পরকীয়া (পারস্পারিক সম্মতিতে বিবাহিতের অবৈবাহিক যৌন সম্পর্ক)
২. ব্যভিচার (দুজন অবিবাহিতের পারস্পারিক সম্মতিতে যৌনসঙ্গম)
৩. পতিতাবৃত্তি (অর্থের বিনিময়ে যৌনসঙ্গম)
৪. সমকামিতা (সমলিঙ্গীয় ব্যক্তিদ্বয়ের পারস্পারিক সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক)
৫. অজাচার (পরিবারের সদস্য বা অবিবাহযোগ্য রক্তসম্পর্কের ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসঙ্গম)
৬. পশুকামিতা (অমানব পশুর সঙ্গে যৌনসঙ্গম) এবং 
৭. ধর্ষণ (জোরপূর্বক অবৈবাহিক যৌনসঙ্গম)।

কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, যে কোন প্রকারের যৌন ক্রিয়াকলাপ যা বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ব্যতীত সম্পাদিত হয় সেগুলো জিনা বলে গণ্য হবে, এবং তা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য সমানভাবে শাস্তিযোগ্য। 

আরও পড়ুন: মানুষকে ভালোবাসুন, অপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ুন!

১. কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, ”লা তাকরাবাল যিনা” যার অর্থ তোমরা যিনার ধারে-কাছেও যেও না। কারণ এটি একটি লজ্জাজনক ও নিকৃষ্ট কর্ম, যা অন্যান্য নিকৃষ্ট কর্মের পথ খুলে দেয়। (কুরআন, সূরা ১৭ (আল-ইসরা/বনি ইস্রাঈল), আয়াত ৩২)

২. আবূ হুরায়রা সুত্রে মুহাম্মাদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আদম সন্তানের উপর যিনার যে অংশ লিপিবদ্ধ আছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হবে। দু-চোখের যিনা হল (নিষিদ্ধ যৌনতার প্রতি) দৃষ্টিপাত করা, দু’কানের যিনা হল শ্রবণ করা, রসনার যিনা হল কথোপকথন করা, হাতের যিনা হল স্পর্শ করা, পায়ের যিনা হল হেঁটে যাওযা, অন্তরের যিনা হচ্ছে আকাংখা ও কামনা করা। আর যৌনাঙ্গ অবশেষে তা বাস্তবায়িত করে অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। (সহীহ বুখারী, ৮:৭৭:৬০৯, সহীহ মুসলিম, ৩৩:৬৪২১)।

আরও পড়ুন: আসুন, নিজেকে বদলিয়ে জীবন বদলে দেই!

৩. আর নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ করে রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন। তোমাদের মধ্যে যে দুজন সেই কুকর্মে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হয়, তাদেরকে শাস্তি প্রদান কর, অতঃপর তারা যদি উভয়ে তওবা (অনুশোচনা,অনুতাপ) করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তবে তাদের থেকে হাত গুটিয়ে নাও। নিশ্চই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু। (সূরা: নিসা, আয়াত: ১৫-১৬)

৪. ব্যভিচারের দায়ে অভিযুক্ত পুরুষ ও নারী যারা,- তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত প্রদান কর: তাদের বিষয়ে করুণা যেন তোমাদেরকে দুর্বল না করে, এমন একটি বিষয়ে যা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয়েছে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং মহাপ্রলয় দিবসের উপর বিশ্বাস রাখো: এবং বিশ্বাসীদের একদলকে তাদের শাস্তির সাক্ষী করে রাখো। ( কুরআন, সূরা ২৪ (আন-নুর), আয়াত ২)

আরও পড়ুন: ধর্ষণের বিচার দাবি নাকি শেখ হাসিনার পতন?

৫. 'উবাদা বিন আস-সামিত বর্ণনা করেন: আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি: আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর। আল্লাহ সেসব মহিলাদের জন্য আদেশ জারি করেছেন। যখন একজন অবিবাহিত পুরুষ একজন অবিবাহিত নারীর সাথে ব্যভিচার করে, তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন পেতে হবে। আর বিবাহিত পুরুষের সাথে বিবাহিত নারীর ব্যভিচারের ক্ষেত্রে, তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে। ( সহীহ মুসলিম, ১৭:৪১৯১ )

৬. আবু মাসুদ আল আনসারি বর্ণিত: আল্লাহর বার্তাবাহক কুকুরের মূল্য, পতিতাবৃত্তি থেকে অর্জিত অর্থ এবং জাদুকরের আয়করা অর্থ নিতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী, ৩:৩৪:৪৩৯)

৭. আবদুল্লাহ বিন আব্বাস বর্নিত: মুহাম্মদ বলেছেন, ইসলামে কোন পতিতাবৃত্তি নেই। কেউ যদি ইসলাম-পূর্ব সময়ে পতিতাবৃত্তির চর্চা করে থাকে, তাহলে তা হতে আগত সন্তান (দাসীর অর্থাৎ পতিতার) মালিকের সম্পত্তি হবে। যে ব্যক্তি বৈধ বিয়ে বা মালিকানা ছাড়া কাউকে সন্তান দাবি করে, তার কোন উত্তরাধিকারীও থাকবে না, এবং সে কারও উত্তরাধিকারও পাবে না। (সুনান আবু দাউদ, ১২:২২৫৭)

৮. আবু মুসা আল আশআরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ বলেছেন, যদি কোন মহিলার উপরে কোন মহিলা উপস্থিত হয়, তবে তারা উভয়ই ব্যভিচারিনী, যদি কোন পুরুষ অপর পুরুষের উপর আসে, তবে তারা দুজনেই ব্যভিচারী। ( আল-তাবারানী, আল-মুযাম আল-আওত: ৪১৫৭, আল-বায়হাকী, শুআব আল-ইমান: ৫০৭৫)

আরও পড়ুন: ধর্ষণের শাস্তি লিঙ্গ কর্তন, মৃত্যুদণ্ড নাকি ক্রসফায়ার?

৯. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ বলেছেন: কোন অবিবাহিত পুরুষ যদি লিওয়াত/সডোমিতে (পায়ুমৈথুনে/পুংমৈথুনে) লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়ে, তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হবে। (সুনান আবু দাউদ, ৩৮:৪৪৪৮)

১০. ইবনে আবাস হতে বর্ণিত: যে মুহাম্মদ বলেছেন, যদি কোন লোক আরেক লোককে বলে: 'ওহে ইহুদী' তবে তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করো। যদি সে বলে: 'ওহে হিজড়া' তাহলে তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করো। আর কেও যদি মাহরাম (আপন পরিবারে সদস্য বা রক্ত সম্পর্কের অবিবাহযোগ্য আত্মীয়) ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক করে তবে তাকে হত্যা কর। ( জামেই তিরমিযি,১৭:৪৬)

১১. ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত: আল্লাহর রাসুল বলেছেন: তোমরা যদি পশুর সাথে সঙ্গমরত কাওকে খুঁজে পাও তবে তাকে এবং ওই পশুকে হত্যা করবে।" ইবনে আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল: "পশুটির কি দোষ?" তিনি বললেন: "আমি আল্লাহর রাসূলকে এ সম্পর্কে কিছু বলতে শুনিনি , কিন্তু আমার মতে ওই পশুর সাথে এরূপ জঘন্য অপকর্ম সঙ্ঘটিত হওয়ার কারণে আল্লাহর রাসুল উক্ত পশুর মাংস খেতে বা তা ব্যবহার করা পছন্দ করেননি। ( জামেই তিরমিযি,১৭:৩৮)

লেখক
এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ
সম্পাদক
ক্রাইম প্রতিদিন
প্রতিষ্টাতা ও চেয়ারম্যান
অপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ চাই