নরসিংদীর শিবপুরে লিমা বেগম ওরফে রিমা (৩৪) নামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগে তার স্বামী মো. বাবুল মীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই গৃহবধূর বাবা কলিম উদ্দীন গাজী বাদী হয়ে শিবপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে ওই গৃহবধূর স্বামী বাবুল মীর পলাতক, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার যোশর ইউনিয়নের হাজীবাগান এলাকার নিজ বাড়ি থেকে রিমা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয়দের ভাষ্য, স্ত্রী রিমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক সহ্য করতে না পেরে তার স্বামী বাবুল মীর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
মামলায় অভিযুক্ত মো. বাবুল মীর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের হাজীবাগান এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন পোলট্রি ফার্ম ব্যবসায়ী। বাবুল মীর ও লিমা বেগম দম্পতির বিয়ে হয় ১৫ বছর আগে। তাদের সংসারে মেহেদী হাসান (১১), মেয়ে মুন্নী (৭), বৃষ্টি (৩) নামের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, লিমা বেগম অন্য একজন ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত মুঠোফোনে কথা বলতেন। এ নিয়ে প্রায়ই বাবুল মীরের সঙ্গে তার ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতে। অন্য দিনের মতো গত মঙ্গলবার রাতেও তারা দুজন বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তিন সন্তানকে বাইরে বের করে দিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন বাবুল মীর। কিছুক্ষণ পর দরোজা তালাবদ্ধ করে বাচ্চাদের বাইরে রেখেই বেরিয়ে যান তিনি।
দুপুরের দিকে বাচ্চারা ঘরে প্রবেশ করতে না পেরে কান্নাকাটি শুরু করে। পরে প্রতিবেশীরা এসে তাদের ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। কোনো উপায় না পেয়ে বিকেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আল আমিনকে খবর দেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে ওই ইউপি সদস্য স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে তালা ভেঙে ওই ঘরে প্রবেশ করেন। এ সময় লিমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন তারা। পরে রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে শিবপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লিমার লাশ উদ্ধার করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আল আমিন বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে আমি গতকাল সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে যাই। পরে সবাইকে নিয়ে তালা ভেঙে ওই ঘরে ঢুকে লিমা বেগমকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। পরে আমি শিবপুর থানার পুলিশকে এই খবর জানাই। রাত ৯টার দিকে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে।’
মামলা বাদী কলিম উদ্দিন গাজী জানান, ‘তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঠিক কী হয়েছে, তা আমরা জানি না। গতকাল সন্ধ্যায় খবর পেয়ে কয়েকজন সেখানে গিয়ে আমার মেয়েকে মৃত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখি। তার ডান চোখের ওপরে-নিচে কাটা জখম ও গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। ওই সময় তার জিহ্বা বের হয়ে ছিল। আমার মেয়েকে তার স্বামীই হত্যা করেছে। আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’
শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, ধারণা করা করা হচ্ছে, পরকীয়ার জের ধরে বুধবার সকালে লিমা বেগমকে হত্যার পর ঘর তালাবদ্ধ রেখে পালিয়ে যান বাবুল মীর। পরে রাতে খবর পেয়ে লিমা বেগমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ঘটনার পর থেকে ওই গৃহবধূর স্বামী বাবুল মীর পলাতক, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।