বিদায়ী বছরে সারা দেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৩৬ জন নারী। আর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৭৯ জন নারী। তবে বছরটিতে গত বছরের চেয়ে ধর্ষণ ও পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা কমেছে।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২২: আসক এর পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নূর খান, পরিচালক নীনা গোস্বামী ও সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৯৩৬ নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। তবে ২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন মোট নারী এক হাজার ৩২১ জন।
এ বছর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৪৭৯ নারী। এর মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা যান ২৯২ জন এবং আত্মহত্যা করেন ৯৭ জন। তবে এর আগের বছর ২০২১ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ৬৪০ জন নারী।
রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত রাজনৈতিক সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ৪৭৯টি। এতে নিহত হয়েছেন ৭০ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৬৯১৪।
আর চলতি বছরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় ৮টি বিভাগের মধ্যে শুধু রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা এই তিনটি বিভাগেই মোট মামলা হয়েছে দুই হাজার ২৪৯টি।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৯ জন। এছাড়া ক্রসফায়ার/বন্দুকযুদ্ধ/ গুলি বিনিময়ের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ জন।
হেফাজতে নির্যাতনের বিষয়ে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছেন ১৫ জন। এর মধ্যে গ্রেফতারের পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শারীরিক নির্যাতনে ৪ জন, হার্ট অ্যাটাকে ১ জন এবং গ্রেফতারের আগে শারীরিক নির্যাতনে ৪ জন মারা যান। এছাড়া থানা হেফাজত আত্মহত্যা করেছেন ২ জন এবং অসুস্থ হয়ে মারা যান ৪ জন।
কারা হেফাজতে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন ৬৫ জন, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ১৬ জনসহ মোট ২৩ জন বাংলাদেশি সীমান্তে নিহত হয়েছেন।
বিদায়ী বছরে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৬ জন।
বছরজুড়ে ২২৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। যাদের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ৭৯ জন সংবাদকর্মী। দুর্বৃত্তদের গুলিতে কুমিল্লায় নিহত হয়েছেন ১ জন সাংবাদিক।
দেশের বিভিন্নস্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ এবং বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও মন্দির ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ১২টি ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ২০২২ সালে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৭৪ নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যার শিকার হন ৭৯ জন নারী এবং আত্মহত্যা করেন ৭ নারী।
২০২২ সালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পরে হত্যা, ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় মোট ৫১৬ জন শিশু। তবে গত বছরে নিহত শিশুর সংখ্যা ছিল ৫৯৬ জন। এছাড়া ২০২২ সালে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ১ হাজার ৮৮ জন শিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ৫৬০ জন শিশু, ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয় ১০০ জন শিশু এবং বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৫২ ছেলে শিশু। এ ৫২ ছেলে শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ৩৪ জন ছেলে শিশু বিভিন্ন মাদ্রাসায় বলাৎকারের শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।